বীমা সেবায় গ্রাহক স্বার্থকে গুরুত্ব দিন :প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০২১, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতীয় বীমা দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন -পিবিএ
দেশে বীমার সম্প্রসারণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাপক প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'বীমা একটি সেবামূলক পেশা। গ্রাহক স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি একে জনপ্রিয় ও জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে হবে।' বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বীমা দিবস ২০২১-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সোমবার এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি। 'মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, বীমা হোক সবার' এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সোমবার দেশজুড়ে যথাযথভাবে জাতীয় বীমা দিবস-২০২১ পালিত হয়েছে। স্বাধীনতার মহান রূপকার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বীমাকে পেশা হিসেবে নিয়ে ১৯৬০ সালের ১ মার্চ আলফা ইন্সু্যরেন্স কোম্পানিতে যোগ দেন। এই দিনটির স্মরণে সরকার প্রতিবছর ১ মার্চ জাতীয় বীমা দিবস পালন করছে। এই দিন বীমা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য চার বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল এই চার বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন এবং চার ছাত্রের মাঝে বঙ্গবন্ধু শিক্ষাবীমাও বিতরণ করেন। মোট ৫০ হাজার ছাত্রকে বঙ্গবন্ধু শিক্ষাবীমা দেওয়া হচ্ছে। মুস্তাফা কামালের সভাপতিত্বে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এছাড়া বাংলাদেশ বীমা সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বক্তব্য দেন। জনগণ যাতে সংকটকালীন বীমা পলিসি খুলে সুবিধা পেতে পারে সেজন্য তথ্য দিয়ে তাদের বীমা সম্পর্কে সচেতন করতে বীমা কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বীমার বিষয়ে সবাই যাতে উৎসাহিত হয়, সে লক্ষ্যে তাদের সচেতন করতে আপনাদের আরও ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। দেশের অর্থনীতির যত বিস্তৃতি ঘটবে, বীমার গুরুত্বও ততই বৃদ্ধি পাবে, আর এ জন্যই জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য বীমা কোম্পানিগুলোর আরও বেশি উদ্যোগ নেওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ যেন তাদের বীমা অথবা ক্ষতি অনুযায়ী যথাযথভাবে বীমার অর্থ পেয়ে যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশে কিছু মানুষের প্রবণতাই হচ্ছে- সাজানো দুর্ঘটনার মাধ্যমে বীমা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা। এই মুহূর্তে এ ধরনের প্রবণতা কমেছে বা বন্ধ হয়ে গেলেও কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে আরও সতর্ক থাকতে হবে এবং দক্ষ ও উপযুক্ত লোককে তদন্ত করতে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় বীমা নীতি-২০১৪ বাস্তবায়নে সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে 'প্রবাসী শ্রমিক বীমা' চালু করা হয়েছে। বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কাটিতে উঠতে দরিদ্র মানুষের জন্য সীমিত আকারে শস্যবীমা চালু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ব্যাপক আকারে স্বাস্থ্যবীমা চালু করা প্রয়োজন। আমাদের জনগণ সচেতন নয়, কিন্তু আমি আশা করছি যে, তারা কোভিড ১৯-এর পর এ ব্যাপারে সচেতন হবে। 'বঙ্গবন্ধু শিক্ষাবীমা' একটি উলেস্নখযোগ্য পদক্ষেপ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বা বাবা-মায়ের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃতু্যর পর এই বীমা তাদের শিক্ষাজীবনকে নির্বিঘ্ন করবে। বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষায় স্টেট-অব-দ্য-আর্ট প্রযুক্তিভিত্তিক সমন্বিত ম্যাসেজিং পস্ন্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ইনসু্যরেন্স অ্যাকাডেমি, সাধারণ বীমা করপোরেশন, জীবন বীমা করপোরেশন এবং আইডিআরএ কার্যক্রমে অটোমেশন চালু ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে ৬৩২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি বৃত্তি কর্মসূচির আওতায় অ্যাকটুয়ারিয়াল বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাঁচ শিক্ষার্থীকে যুক্তরাজ্যে পাঠাচ্ছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ইনসু্যরেন্স (জাতীয়করণ) আদেশ-১৯৭২ জারি করে ৪৯টি দেশি-বিদেশি বীমা কোম্পানিকে জাতীয়করণ করে সুরমা, রূপসা, তিস্তা ও কর্ণফুলী নামে চারটি বীমা করপোরেশন গঠন করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, পরে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি দেশের বীমা শিল্পের উন্নয়নের প্রয়োজনে ইনসু্যরেন্স করপোরেশন আইন-১৯৭৩ প্রণয়ন করে জীবন বীমার জন্য জীবন বীমা করপোরেশন এবং নন-লাইফ বীমা সেবা প্রদানের জন্য 'সাধারণ বীমা করপোরেশন' নামে দুটি পৃথক বীমা করপোরেশন গঠন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবন বীমা করপোরেশন ও সাধারণ বীমা করপোরেশন এখনো মানুষকে বীমা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইনসু্যরেন্স একাডেমিও জাতির পিতাই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।