দেখা গেল সু চিকে তবে 'ভিডিও কনফারেন্সে'

প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০২১, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
অং সান সু চি
মিয়ানমারের ক্ষমতাচু্যত নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে আদালতে আরও একটি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়ন ও সহিংসতায় একদিনে সর্বোচ্চ ১৮ জনের প্রাণহানির ঘটনার পরদিন সোমবার যখন বিক্ষোভকারীরা জান্তা সরকারের বিরোধিতায় আবারও রাস্তায় নেমে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ঠিক তখনই সু চির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ গঠন করা হয়েছে বলে তার একজন আইনজীবী জানিয়েছেন। এ সময় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাকে দেখা যায়। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) এই নেত্রীর আইনজীবী মিন মিন সোয়ে বলেন, রাজধানী নেইপিডোতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের শুনানিতে অংশ নিয়েছেন অং সান সু চি। এ সময় তাকে সুস্থ এবং স্বাভাবিক দেখা গেছে। তবে সম্ভবত তার ওজন কমে গেছে। আদালতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানিতে অংশ নিলেও সু চি এখন কোথায় আছেন তা জানা যায়নি। গত ১ ফেব্রম্নয়ারি সামরিক অভু্যত্থানে ক্ষমতাচু্যত হওয়ার পর থেকে এনএলডির এই নেত্রীকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। অভু্যত্থানের দিন দলের জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি মিয়ানমারের 'ডি-ফ্যাক্টো' নেত্রীকে আটক করে সেনাবাহিনী। এর আগে, মিয়ানমারের এই নেত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ছয়টি ওয়াকিটকি আমদানি এবং আইনলঙ্ঘন করে তা ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়। পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে করোনাভাইরাস বিধিনিষেধ না মেনে জনসমাবেশ করায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ গঠন করা হয়। আইনজীবী মিন মিন সোয়ে বলেন, ঔপনিবেশিক আমলের দন্ডবিধির একটি ধারা অনুযায়ী, জনসাধারণের মাঝে ?'বিশৃঙ্খলা' অথবা 'ভীতি বা উদ্বেগ' তৈরি করতে পারে, এমন তথ্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ক্ষমতায় থাকাকালীন সু চি তা মানেননি বলে সোমবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। নতুন এই অভিযোগের বিষয়ে আগামী ১৫ মার্চ আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গত নভেম্বরের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আবারও মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসে অং সান সু চির দল এনএলডি। কিন্তু ওই নির্বাচনে 'ব্যাপক ভোট জালিয়াতি'র অভিযোগ এনে ১ ফেব্রম্নয়ারি নির্বাচিত সরকার হটিয়ে ক্ষমতা দখলে নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। সোমবার আদালতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যখন অং সান সু চি শুনানিতে অংশ নেন, তখন দেশটির প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। তবে সোমবার পুলিশের অভিযানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কিনা তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। সোমবার ইয়াঙ্গুন শহরের বিভিন্ন বিক্ষোভ কেন্দ্রে জলকামান নিয়ে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর যান চলাচল করতে দেখা গেছে। মিয়ারমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কেলে সু চির ছবি হাতে স্স্নোগান দিতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের। দেশটির অভু্যত্থানবিরোধী আন্দোলনের নেতা এই থিনজার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, 'অভু্যত্থানের এক মাস হয়ে গেছে। সোমবার আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী আমাদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে। আমরা আজ আবারও বেরিয়ে এসেছি।' রোববার মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে দেশটির আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর গুলিতে ১৮ জনের প্রাণহানি এবং ৩০ জনের বেশি আহত হয়। 'অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স' জানিয়েছে, রোববার বিক্ষোভ থেকে কমপক্ষে ২৭০ জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত আটক হয়েছে এক হাজার ১৩২ জন। রোববারের সহিংসতার বিষয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের মন্তব্য করা হয়নি। দেশটির জান্তা সরকার এক বছরের জরুরি অবস্থা শেষে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও এখনো সময় প্রকাশ করেনি। সেনাবাহিনীর নির্বাচনী এই প্রতিশ্রম্নতিতে ভরসা রাখতে পারছে না দেশটির নাগরিকরা। বিক্ষোভকারী নিহতের ঘটনায় নিন্দা বিশ্ব সম্প্রদায়ের এদিকে, মিয়ানমারে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে ১৮ নিহত হওয়ার ঘটনায় জাতিসংঘসহ কয়েকটি দেশ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। জাতিসংঘের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইন্দোনেশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নও রোববারের ওই সহিংসতার নিন্দা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন মিয়ানমারের সহিসংতার নিন্দা জানিয়ে একে নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত 'জঘন্য সহিংসতা' বলে মন্তব্য করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র 'দৃঢ়ভাবে' মিয়ানমারের জনগণের পাশে আছে জানিয়ে রোববার এক টুইটে তিনি বলেন, 'তাদের ইচ্ছার প্রতি সমর্থন জানাতে সব দেশকে এক সুরে কথা বলার জন্য উৎসাহিত করছি আমরা।' কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক গারনাউ বলেন, 'সামরিক বাহিনী তাদের নিজেদের জনগণের বিরুদ্ধেই প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করেছে, এটি ভয়াবহ ঘটনা।' বিস্নংকেন ও গারনাউ, উভয়েই মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের গুলির ঘটনায় 'গভীর উদ্বেগ' প্রকাশ করেছে ইন্দোনেশিয়া। জান্তা বাহিনীকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বানও জানিয়েছে দেশটি। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'ইন্দোনেশিয়া মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগে আরও সংযত থাকার এবং রক্তপাত ও প্রাণহানি এড়াতে সর্বোচ্চ ধৈর্যের অনুশীলন করার আহ্বান জানাচ্ছে।' মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, জান্তার হামলা অব্যাহত থাকবে এটি পরিষ্কার ছিল, তাই বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া জোরদার করা উচিত। তিনি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, অভু্যত্থানের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আরও বেশি দেশ থেকে নিষেধাজ্ঞা, সামরিক বাহিনীর ব্যবসাগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পদক্ষেপ নিতে বলুক। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক বিবৃতিতে বলেন, 'শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং তাদের ওপর প্রাণঘাতী শক্তির ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্মিলিতভাবে বর্মি (মিয়ানমার) সেনাবাহিনীকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। নির্বাচনের মাধ্যমে মিয়ানমারের জনগণের যে ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে, তার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে এবং দমনপীড়ন বন্ধ করতে হবে।' ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল জানিয়েছেন, এ ঘটনায় শিগগিরই ব্যবস্থা নেবে ইইউ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'সামরিক কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে নাগরিকদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। জনগণকে তাদের মত প্রকাশ এবং সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকার দিতে হবে।' মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের আন্দোলনকারীরাও প্রতিবাদের আয়োজন করেছে। থাইল্যান্ডের তরুণদের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক আন্দোলন মিয়ানমারের অভু্যত্থান বিরোধীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।