শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষের খাদ্য সমস্যা যেন না হয় :প্রধানমন্ত্রী

কমলো এডিপি বরাদ্দ পরিবহণ খাতে গুরুত্ব
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৩ মার্চ ২০২১, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন -স্টার মেইল

এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) পরিবহণ খাতে ৪৯ হাজার ২১২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা মোট বরাদ্দের প্রায় ২৫ শতাংশ। আরএডিপি অনুমোদন দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মানুষের যেন খাদ্য সমস্যা না হয়। এ সময় কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার গণভবন থেকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এবং শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলনকক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। এই সভাতেই অনুমোদন দেওয়া হয় সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির। সভা শেষে এনইসি সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী।

পরিকল্পনা বিভাগের সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,

\হ'করোনাকালে সারা বিশ্বে যেখানে অর্থনীতি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে, সেখানে আমরা যেভাবে অর্থনীতিকে চালু রেখেছি, সেটা বজায় রাখতে হবে। আমাদের এখন গুরুত্ব দিতে হবে খাদ্য উৎপাদন, মানুষকে খাদ্য সরবরাহ, সময়মতো ভ্যাকসিন দেওয়া।' সেজন্য প্রয়োজনে আরও ভ্যাকসিন কেনা হবে, এজন্য অর্থ সংস্থান রাখার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, 'মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় যে বিষয়গুলো আছে, অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সেখানে গুরুত্ব দিতে হবে। যাতে মানুষের খাদ্য সমস্যা না হয়, কৃষি উৎপাদন বিঘ্নিত না হয়। আর নদীভাঙন রোধে যেন শুষ্ক মৌসুমে কাজ করা হয়।' যথাসময়ে এবং যথাসম্ভব আইন-কানুন মেনে সব প্রকল্প শেষ করার জন্যও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

পরিকল্পনা বিভাগের সচিব বলেন, আরএডিপির মোট বরাদ্দ হলো দুই লাখ নয় হাজার ২৭১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নের ১১ হাজার ৬২৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এটি বাদ দিলে সংশোধিত মূল এডিপি হলো এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ বা জিওবি থেকে এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ-অনুদান ৬৩ হাজার কোটি টাকা।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল এডিপিতে বরাদ্দ দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ধরা হচ্ছে এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ মূল এডিপির তুলনায় প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপির বরাদ্দ কমছে সাত হাজার ৫০১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বা ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী জানান, সংশোধিত এডিপির জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে মোট দুই লাখ তিন হাজার ৮৬৬ কোটি ৭৫ লাখ প্রাথমিক চাহিদা পায় পরিকল্পনা কমিশন। সবকিছু বিবেচনা করে সংশোধিত এডিপির আকার এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

মূল এডিপি ও সংশোধিত এডিপিতে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য হ্রাস বা জনগণের জীবনমান উন্নয়ন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে উত্তরণকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এডিপি/আরএডিপি তৈরির ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, দ্রম্নত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদু্যৎ ও জ্বালানির সরবরাহ বৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, খাদ্য ঘাটতি পূরণ, সবার জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিশ্চিত করা, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করা, নারীর ক্ষমতায়ন, অপরাধ দমন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানি সরবরাহ, শিক্ষা ব্যবস্থা (প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও বৃত্তিমূলক), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক কর্মসূচির প্রসার ও উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি খাতকে মোট বরাদ্দের ৯৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ দেওয়া হয়েছে। বাকি সাতটি খাতকে দেওয়া হয়েছে ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০টি খাতের মধ্যে পরিবহণ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪৯ হাজার ২১২ কোটি ৮৬ লাখ, যা মোট বরাদ্দের ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। শিক্ষা ও ধর্ম খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৬ হাজার ৪৯১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৪ হাজার ৫৭১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। পলস্নী উন্নয়ন ও পলস্নী প্রতিষ্ঠান খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২১ হাজার ৯৪৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বিদু্যৎ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৮ হাজার ২৮৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা, মোট বরাদ্দের ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪ হাজার ৯২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।

পানিসম্পদ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১১ হাজার ৫৭৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। কৃষি খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ৭৩৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ ৬ হাজার ৭০৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। শিল্প খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ কোটি ৯ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১ দশমিক ৮১ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই থেকে জানুয়ারি) এডিপির বাস্তবায়ন অগ্রগতি এক হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা, যার হার ১৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম ৭ মাসে এডিবির বাস্তবায়ন অগ্রগতি ছিল এক হাজার ৮২৩ কোটি টাকা, যার হার ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে কম টাকা বাস্তবায়িত হলেও শতাংশের দিক থেকে বেশি।

২০১৯-২০ অর্থবছরে আরএডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল দুই লাখ এক হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। তার মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরে বাস্তবায়নের হার ছিল ৮০ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে