মিয়ানমার নিয়ে জাতিসংঘে বৈঠক

বিক্ষোভ দমনে বেপরোয়া পুলিশ, নিহত আরও ১৮

গুলিতে এ পর্যন্ত অন্তত ৩৯ প্রতিবাদকারী নিহত হয়েছে

প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০২১, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মিয়ানামারে সামরিক অভু্যত্থানবিরোধীদের প্রতিবাদ চলাকালে পুলিশের গুলিতে আরও অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা নিশ্চিত করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মঙ্গলবার মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানানোর একদিন পর বুধবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিবর্ষণে হতাহতের এ ঘটনা ঘটল। সংবাদসূত্র : রয়টার্স দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের একটি প্রতিবাদস্থলে সংঘর্ষে দুই জন নিহত হন বলে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন। বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে পুলিশের গুলিতে আরেক ব্যক্তি নিহত হয়েছে বলে ঘটনাস্থলে থাকা আরও একজন নিশ্চিত করেছেন। মোনিওয়া গ্যাজেট জানিয়েছে, মধ্যাঞ্চলীয় এ শহরটিতে পুলিশের গুলিতে পাঁচ জন নিহত হয়েছে। মধ্যাঞ্চলের আরেক শহর মায়েনগিয়ানে গুলিবিদ্ধ হয়ে আরেক ব্যক্তি নিহত হয়েছে বলে ছাত্রনেতা মোয়ে মিন্ট হেইন জানিয়েছেন। সংঘর্ষে মিন্ট হেইন নিজেও আহত হয়েছেন। তার পায়ে আঘাত লেগেছে। টেলিফোনে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, 'তারা আমাদের ওপর গুলি করেছে। একজন নিহত হয়েছেন, তার বয়স কম, একজন কিশোর, তার মাথায় গুলি লেগেছে।' এসব শহরের পাশাপাশি পশ্চিমাঞ্চলীয় চিন রাজ্যে, উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন রাজ্যে, উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় শান রাজ্যে, মধ্যাঞ্চলের সাগাইং ও দক্ষিণাঞ্চলের দাউই শহরেও প্রতিবাদ হয়েছে বলে গণমাধ্যম ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। চিন রাজ্যের আন্দোলনকারী সালাই লিয়ান বলেন, 'এই দেশের কেউই একনায়কতন্ত্র চায় না, এটি তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য।' ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৩০০ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে বলে বার্তা সংস্থা মিয়ানমার নাও জানিয়েছে। যাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে প্রতিরোধ আন্দোলনের বেশ কয়েকজন নেতাও আছেন বলে একজন আন্দোলনকারী জানিয়েছেন। এসব ঘটনার বিষয়ে মন্তব্য নেওয়ার জন্য ফোন করা হলেও ক্ষমতাসীন সামরিক কাউন্সিলের মুখপাত্র ফোন ধরেননি। মিয়ানমারের অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বেড়ে চললেও অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান ন্যাশন্স (আসিয়ান) এর সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রতি সংযম দেখানোর আহ্বান জানালেও সদস্য দেশগুলোর মধ্যে শুধু ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও সিঙ্গাপুর সু চি ও অন্যান্য বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ১ ফেব্রম্নয়ারির সামরিক অভু্যত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারজুড়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সামরিক শাসনের অধীনে থাকা দেশটির গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা রুদ্ধ হয়ে গেছে। অভু্যত্থানের পর থেকেই সামরিক শাসনবিরোধী গণতন্ত্রপন্থিরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। প্রথম দিকে সংযম দেখালেও গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ দমনে সহিংসপন্থা নিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। পুলিশের গুলিতে বুধবার পর্যন্ত অন্তত ৩৯ জন প্রতিবাদকারী নিহত হয়েছে। সহিংসতায় একজন পুলিশও নিহত হয়েছেন বলে দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে। এদিকে, নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলকারী মিয়ানমারের জান্তা সরকার আরও বেশি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়তে যাচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির পরিস্থিতি নিয়ে আবার বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। আগামী শুক্রবার এ বৈঠক আহ্বান করেছে যুক্তরাজ্য। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলোর খবরে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়ন জোরদার হতে থাকায় নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকের আহ্বান করা হয়েছে বলে এক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছ। ক্ষমতাচু্যত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে নতুন দুই মামলা অন্যদিকে, মিয়ানমারের ক্ষমতাচু্যত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টের বিরুদ্ধে নতুন আরও দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগও রয়েছে যার শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদন্ড পর্যন্ত হতে পারে। উইন মিন্টের আইনজীবী খিন মং জ বুধবার এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে উইন মিন্টের বিরুদ্ধে করোনাভাইরাস মহামারির বিধিনিষেধ ভঙ্গের অভিযোগও এনেছে জান্তা সরকার। মিন্টের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম কবে নাগাদ শুরু হতে পারে তা এখনো জানা যায়নি বলে জানান তার আইনজীবী।