শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এস জয়শঙ্করের ঘোষণা

ঢাকার পাশে থাকবে দিলিস্ন

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৫ মার্চ ২০২১, ০০:০০
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে স্বাগত জানান ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেন -ফোকাস বাংলা

বাংলাদেশ সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এস জয়শঙ্কর বলেছেন, 'বাংলাদেশকে নিশ্চয়তা দিতে চাই, যেকোনো পরিস্থিতিতে ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকবে। আর এ দুদেশের মধ্যে উন্নয়নকে কেন্দ্র করে অনেক সম্ভাবনা আছে। সেটা খুঁজে বের করতেই এ সফরে আসা।' বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অনেক অগ্রগতি হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষ তার দেশের জন্যও অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ আমাদের কাছে শুধু একটি প্রতিবেশি নয়; বরং সারাবিশ্বের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার। আমাদের সম্পর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, আমরা শুধু আলোচনার মাধ্যমেই যেকোনো সংকটের সমাধান করতে পারি।'

বাংলাদেশ সফরকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এস জয়শঙ্কর বৃহস্পতিবার বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়ে এবং দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনাকালে তার দেশের এ অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।

সাক্ষাৎ প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, 'প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে যেকোনো সমস্যা সমঝোতা ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।' তিনি বলেন 'প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সমস্যা থাকে। সেগুলো আমরা মনে করি সমঝোতা ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।' প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করে এ তথ্য জানান।

টিকা সরবরাহসহ কোভিড-১৯ মহামারি সংকটে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোয় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'করোনাভাইরাস মহামারির প্রাদুর্ভাবে দেশে যেন খাদ্য সংকট দেখা না দেয় সেজন্য কৃষিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সরকার খাদ্য উৎপাদনে জোর দিয়েছে।'

সাক্ষাৎকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এস জয়শঙ্কর তার বাবা ভারতের সাবেক সরকারি কর্মকর্তা কে সুব্রামারিয়ামের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা বই 'লিবারেশন ওয়ার অব বাংলাদেশ' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন।

মুজিবশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'ভারতের জন্য এটা অনেক বড় সম্মানের।'

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়ায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'এটা অনেক বড় অর্জন। বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে একটা বিস্ময়কর উন্নয়ন।'

বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক

উপদেষ্টা প্রফেসর ডক্টর গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ডক্টর আহমদ কায়কাউস, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।

এর আগে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এস জয়শঙ্কর বলেছেন, 'এ দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষ তার দেশের জন্যও অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ আমাদের কাছে শুধু একটি প্রতিনিধি নয়; বরং সারাবিশ্বের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার। আমাদের সম্পর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, আমরা শুধু আলোচনার মাধ্যমেই যেকোনো সংকটের সমাধান করতে পারি।'

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বাংলাদেশে সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে নিরাপত্তা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, বাণিজ্য, পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়নসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এ সময় জয়শঙ্কর আরও বলেন, 'বাংলাদেশকে নিশ্চয়তা দিতে চাই, যেকোনো পরিস্থিতিতে ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকবে। আর এ দুদেশের মধ্যে উন্নয়নকে কেন্দ্র করে অনেক সম্ভাবনা আছে। সেটা খুঁজে বের করতেই এ সফরে আসা।'

দুই দেশের নিবিড় সম্পর্ক থাকার পরও সীমান্তে বাংলাদেশের লোকজনকে হত্যার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এস জয়শঙ্কর বলেন, 'প্রকৃতপক্ষে সীমান্ত হত্যাকান্ড ভারতের অভ্যন্তরে ঘটে থাকে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা একমত হয়েছি, প্রতিটি হত্যাকান্ডই দুঃখজনক। কিন্তু আমরা নিজেদের প্রশ্ন করেছি, সমস্যার মূল কারণ কী এবং এটি হচ্ছে অপরাধমূলক কর্মকান্ড। আমাদের দুই পক্ষের অভীষ্ট লক্ষ্য হওয়া উচিত অপরাধবিহীন সীমান্ত, যাতে সীমান্তে হত্যাকান্ড না হয়। আমার ধারণা, আমরা দুই পক্ষ এই সমস্যার সমাধান করতে পারব।'

তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারত সরকার যে আশ্বাস দিয়েছিল সেই অবস্থানের পরিবর্তন হবে না বলেও জানান তিনি।

এর আগে সকাল ১০টার দিকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে দিলিস্ন থেকে ঢাকায় পৌঁছান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বিএএফ বাশার ঘাঁটিতে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেন।

গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে এস জয়শঙ্করের এ সফর।

বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন এস জয়শঙ্কর। রাতেই দিলিস্নর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন তিনি।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২৫ অথবা ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকা আসছেন। ২৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে তার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে