বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচনা সভায় বিএনপি নেতারা ৭ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা আসেনি

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৮ মার্চ ২০২১, ০০:০০

প্রথমবারের মতো ৭ মার্চ উদযাপন করা বিএনপি নেতারা বললেন এদিনে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা আসেনি। তারা বলেছেন, 'স্বাধীনতার ঘোষণা আর ভাষণ এক জিনিস না। সেদিন সমগ্র জাতি, মুক্তিকামী জনতা স্বাধীনতার ঘোষণার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করলেও তা দেওয়া হয়নি। বরং পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল- আসুন-বসুন-আলোচনা করুন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। মূলত তখনকার প্রেক্ষাপটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ওই ভাষণই যুক্তিযুক্ত ছিল।'

রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেন। স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৭ মার্চ উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি। ব্যানারে ৭ মার্চ আলোচনা সভার উলেস্নখ থাকলেও বঙ্গবন্ধুর ভাষণের কোনো কথা উলেস্নখ ছিল না।

সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুপরিকল্পিভাবে নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস থেকে বঞ্চিত করে তাদেরকে ভ্রান্ত ইতিহাস দিচ্ছে। একজন মানুষ, একটি পরিবার

আর একটি গোষ্ঠীকে মহিমান্বিত করতেই তাদের সব প্রচেষ্টা। অথচ এই আওয়ামী লীগ দলটিই স্বাধীনতার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।'

তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগের বক্তব্যের কোথাও তোফায়েল আহমেদের কথা কোথাও খুঁজে পাবেন না। তারা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর কথা একবারও উচ্চারণ করেন না। এমনকি যুদ্ধের 'সর্বাধিনায়ক' এম এ জি ওসমানীর নামও একবারও উচ্চারণ করেন না। আর যুদ্ধকালীন সরকারের যিনি নেতৃত্ব দিলেন তাজউদ্দীন আহমদ তার নামও একবারও উচ্চারণ করেন না। কত সংকীর্ণ এরা! কত ভয়ংকর। শুধু তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মিথ্যা ইতিহাস মানুষের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে।'

স্বাধীনতা কি একা আওয়ামী লীগের প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ৭ মার্চ একটা দিন, ২৬ মার্চ আরেকটা দিন। কিন্তু এর আগে দীর্ঘকাল ধরে এই দেশের মানুষ স্বাধিকারের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছে। এটা কোনো একক ব্যক্তির নয়। স্বাধীনতা সমগ্র দেশের। এই স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছে আমাদের হাজার হাজার তরুণ, যুবক, কৃষক, ছাত্র-ছাত্রী। এই স্বাধীনতার আমাদের মা-বোনেরা তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, সংগ্রাম আর যুদ্ধ এক নয়। তাই শেরেবাংলার কথা, সোহরাওয়ার্দী কথা, আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর কথা, শেখ মুজিবুর রহমানের কথা, অলি আহাদের কথা উচ্চারণ করা প্রয়োজন। এই রকম অসংখ্য মানুষ আছেন, যারা এই দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য সংগ্রাম করেছেন। আর জিয়াউর রহমানের ঘোষণা মানুষকে যুদ্ধের জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের কাজ হচ্ছে সবার অবদানকে দূরে সরিয়ে রেখে একমাত্র এক নেতার এক দেশ, শেখ মুজিবের বাংলাদেশে প্রচার করা। এই সেস্নাগান এখন না, '৭১ সালের পর থেকে তারা এই সেস্নাগান শুরু করেছে।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ?'৭ মার্চের ভাষণ অবশ্যই ঐতিহাসিক। কারণ জনগণ উদ্বেলিত করেছিল এবং জনগণ ঐক্যবদ্ধ করতে কিছু নির্দেশনা ছিল। কিন্তু সেদিন শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন যে, জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তাহলে তো বলা যেতেই পারে সে সময় পাকিস্তানের তৎকালীন সময়ের সরকারের সঙ্গে দরকষাকষির অংশ হিসেবেই তিনি এই কথা বলেছিলেন।'

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, '৭ মার্চ আমরা বাঁশ ও লাঠি নিয়ে গেছি। একটা ঘোষণা তো এসেই যাবে। কিন্তু কোনো ঘোষণা আসেনি। রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীনতার করেছেন এদেশের জনগণ। যদি কেউ বলেন জিয়ার ভাষণে দেশে স্বাধীনতা আসেনি। তাহলে আমরা বলতে পারি ৭ মার্চের ভাষণে দেশে স্বাধীনতা হয়নি।'

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, '৭ মার্চ ভাষণ স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক মাইলফলকের মধ্যে একটা মাইলফলক। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের যে অনেক মাইলফলক আছে, সেগুলো ধুলায় ঢেকে গেছে। সংস্কারের অভাবে সেই মাইলফলকগুলো ভেঙে যাচ্ছে। সেই মাইলফলকগুলোকে ধুলামুক্ত করতে হবে এবং সংস্কার করতে হবে।'

স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, '৭ মার্চের ভাষণে আমরা উত্তেজিত হয়েছি কিন্তু ওই ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা হয়নি। আইনগতভাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আহ্বান ছিল ওই ভাষণে।'

তিনি আরও বলেন, '৭ মার্চের পরের দিন আওয়ামী লীগ থেকে দেওয়া প্রেস নোটে তাজউদ্দীন স্বাক্ষর করলেন। এবং সেখানে বলা হলো বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ক্ষমতায় আসার জন্য এই ভাষণ (৭ মার্চ ভাষণ) দেওয়া হয়েছে। তাহলে সেটা যে স্বাধীনতার ঘোষণা না আওয়ামী লীগের সেই প্রেস নোটে বোঝা গেল।'

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। ব্যানারে নাম থাকলেও অনুষ্ঠানে ছিলেন না বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ডক্টর আব্দুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে