শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে

দেশে করোনার টিকা নিয়েছেন ৩৫ লাখ ৭ হাজার ৫৩২ জন। নিবন্ধন করেছেন ৫১ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭৪ জন
জাহিদ হাসান
  ০৯ মার্চ ২০২১, ০০:০০

সোমবার দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। তবে সারাদেশে চলমান করোনাভাইরাসের গণ-টিকাদান কর্মসূচি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এদিন আরও ১ লাখ ১৭ হাজার ১৮৪ জন টিকা নিয়েছেন। দেশে এ পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ৩৫ লাখ ৭ হাজার ৫৩২ জন। এর মধ্যে ২৪ লাখ ৯৩ হাজার ২১১ জন পুরুষ ও ১৪ লাখ ১৩ হাজার ২৮৯ জন নারী টিকা নিয়েছেন।

এদিকে মাঝে কিছুদিন ভাইরাসটির সংক্রমণ কম হলেও গত কয়েকদিন ধরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আবার বাড়তে শুরু করেছে। সর্বশেষ (সোমবার) ২৪ ঘণ্টায় ৫৪ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। এ সময় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮৪৫ জনের। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে একই সময়ে মারা গেছে আরও ১৪ জন। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৫ লাখ ৫১ হাজার ১৭৫ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মোট সুস্থ হয়েছে ৫ লাখ ৪ হাজার ১২০ জন।

সংক্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে সংক্রমণ শুরুর দিকে রোগী শনাক্তের হার কম ছিল। গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ

বাড়তে শুরু করে। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর থেকে নতুন রোগীর পাশাপাশি শনাক্তের হারও কমতে শুরু করেছিল। মাস দুয়েক সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকার পর গত নভেম্বরের শুরুর দিক থেকে নতুন রোগী ও শনাক্তের হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। ডিসেম্বর থেকে সংক্রমণ আবার কমতে শুরু করে। তবে তিন সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ আবার ঊর্ধ্বমুখী।

সোমবার করোনাভাইরাস সংক্রমণের এক বছর অতিক্রম হওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে 'করোনা বর্ষপূর্তি : সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, 'করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই মানুষ শুরুতে বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করছে। স্বাস্থ্যবিধি মানেনি। এখনো অনেকে মাস্ক পরছে না। তবে সংক্রমণের শুরু থেকেই স্বাস্থ্য খাতে সব ধরনের সেবা পরিধি বাড়ানো হয়েছে। প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষকে টেলি মেডিসিনি সেবা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের আলোকে দেশেই করোনার টিকা উৎপাদনের কাজ শুরু হয়েছে।

এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, 'করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশ প্রায় ১২ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। একইভাবে পৃথিবীতে ক্ষতি হয়েছে ১২ ট্রিলিয়ন ডলার। সুতরাং করোনার মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এমন বিপদে যেন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারি সে প্রস্তুতি থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে স্বাস্থ খাতে ১ ডলার বিনিয়োগ করলে ১০ ডলার সমান আসবে। এ জন্য গবেষণা কার্যক্রমের ওপর জোর দিতে হবে।'

দেশে গত ২৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণ-টিকাদান শুরু হয় ৭ ফেব্রম্নয়ারি থেকে। প্রথম দিন টিকা নিয়েছিলেন ৩১ হাজার ১৬০ জন। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্র যায়যায়দিনকে জানিয়েছে, সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টিকা নিতে অনলাইনে মোট ৫১ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭৪ জন নিবন্ধন করেছেন। টিকা কার্যক্রম শুরুর পর এ পর্যন্ত মোট টিকা গ্রহীতার সংখ্যা ৩৫ লাখ ৭ হাজার ৫৩২ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে ২৪ লাখ ৯৩ হাজার ২১১ জন পুরুষ ও ১৪ লাখ ১৩ হাজার ২৮৯ নারী।

প্রতিদিনের মতো সোমবার ঢাকা বিভাগে ৩৭ হাজার ৯৬৭ জন টিকা নিয়েছেন। একইভাবে ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ হাজার ২৬৬ জন। চট্টগ্রামে ১৯ হাজার ৫৬৮ জন, রাজশাহীতে ১২ হাজার ৮০৭ জন, রংপুরে ১১ হাজার ৮১৩ জন, খুলনায় ২১ হাজার ৯ জন, বরিশালে ৪ হাজার ৮০৬ জন এবং সিলেটে ৩ হাজার ৯১২ জনসহ ২৪ ঘণ্টায় আট বিভাগে ১ লাখ ১৭ হাজার ১৪৮ জন টিকা নেন।

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের চিত্র :সোমবার ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন ২১ হাজার ৪৭ জন। এদিন টিকা নেওয়ার পর ৬ জনের সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন জ্বর, টিকা নেওয়ার স্থানে লাল হওয়া ইত্যাদি খবর দিয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ নিশ্চিত করেছে। দেশে এ পর্যন্ত বিরূপ প্রতিক্রিয়ার উপসর্গ বা অ্যাডভার্স ইভেন্ট ফলোইং ইমিউনাইজেশন (এইএফআই) রিপোর্ট করেছেন ৮৫৯ জন। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএসের সোমবারের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৬২০ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ হাজার ২০ জন, স্যার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮১০ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৩৪ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৯১ জন, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৯৬০ জন, ?কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১ হাজার ৪২০ জন, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটে ৪৫০ জন, শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে (মাতুয়াইল) ৭০০ জন, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ৫০০ জন, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে (মিরপুর) ৪৪৯ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২৪০ জন এবং ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালে ১৬০ জন টিকা নিয়েছেন। সবমিলিয়ে সোমবার ঢাকা মহানগরে ৪৭টি কেন্দ্রে মোট ২১ হাজার ৪৭ জন টিকা নিয়েছেন।

গত ৭ ফেব্রম্নয়ারি গণ-টিকাদান শুরুর দিন থেকেই সারাদেশের ১ হাজার ৬টি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হচ্ছে। সবাইকে এ টিকার দুটি ডোজ নিতে হবে। প্রথম ডোজ গ্রহীতাদের জন্য আগামী ৭ এপ্রিল দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে