পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলায় নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে

প্রকাশ | ০৯ মার্চ ২০২১, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
অগ্নিঝরা ৯ মার্চ আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধিকার আন্দোলনের কর্মসূচি অনুযায়ী বন্ধ থাকে সচিবালয়সহ সারাদেশে সব সরকারি, আধা-সরকারি অফিস, হাইকোর্ট ও জেলা কোর্ট। ঢাকা শহর পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। যেখানে-সেখানে জটলা, মিছিল, মিটিং চলতেই থাকে। লাগাতার আন্দোলনে দেশ পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, লেখক, শিক্ষকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলায় তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে। সবকিছু চলতে থাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে। এ দিন আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মধ্যে সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বিকালে পল্টন ময়দানের জনসভায় তুমুল করতালির মধ্যে মওলানা ভাসানী ঘোষণা করেন- 'ইয়াহিয়া সাহেব, অনেক হয়েছে, আর নয়। তিক্ততা বাড়িয়ে লাভ নেই। "তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার" নিয়মে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা মেনে নাও।' হ তিনি আরও বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশমতো আগামী ২৫ তারিখের মধ্যে কোনো কিছু না করা হলে আমি মুজিবের সঙ্গে মিলে ১৯৫২ সালের মতো তুমুল আন্দোলন শুরু করব। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত আন্দোলনের কর্মসূচি অনুযায়ী সচিবালয়সহ সারাদেশে সব সরকারি ও আধা-সরকারি অফিস, হাইকোর্ট ও জেলা কোর্ট প্রভৃতিতে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। বঙ্গবন্ধু যেসব সরকারি অফিস খুলে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন কেবল সেসব অফিস চালু থাকে। গভীর রাতে ইসলামাবাদে লে. জেনারেল টিক্কা খানকে 'খ' অঞ্চলের সামরিক শাসক নিয়োগ করা হয়। এই নিয়োগ ৭ মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। টিক্কা খান ৭ মার্চ ঢাকা আসেন। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে তার গভর্নর হিসেবে কার্যভার গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে হরতাল চলাকালে ঢাকা হাইকোর্টের বিচারপতিরা নবনিযুক্ত সামরিক গভর্নরের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে অস্বীকার করেন। জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট প্রয়োজনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে জাতিসংঘের স্টাফ ও তাদের পরিবারকে প্রত্যাহারের জন্য ঢাকাস্থ জাতিসংঘের উপ-আবাসিক প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেন। জাপানের পররাষ্ট্র দপ্তর এ দেশে থাকা তার দেশের নাগরিকদেরও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। পশ্চিম জার্মান সরকার তার দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সামরিক বিমান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ক্যানটিনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের এক জরুরি সভা হয়। সংগঠনের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সভায় গৃহীত রাজনৈতিক প্রস্তাবে ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগ ও ডাকসুর নেতৃত্বে গঠিত 'স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ'-এর ছাত্রসভায় গৃহীত 'স্বাধীন বাংলাদেশ' ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সামরিক কর্তৃপক্ষ রাত ৯টা থেকে রাজশাহী শহরে ৮ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করে। নৈশ কারফিউ জারির পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সেনাবাহিনীকে ছাউনিতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণার পর রাজশাহীতে হঠাৎ সান্ধ্য আইন জারির কারণ বোধগম্য নয়। এই সান্ধ্য আইন জারি জনসাধারণের জন্য উসকানি ছাড়া আর কিছু নয়। বিবৃতিতে অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। এর আগে সকালে পিআইএর বাঙালি কর্মচারীরা তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মিছিল করে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এলে তিনি তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মূলত রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণের পর পুরো দৃশ্যপট বদলে যায়। পূর্ব বাংলা হয়ে ওঠে মুজিবময়। একে একে সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে। সভা, সমাবেশ ও বিবৃতির মাধ্যমে সংগঠনের নেতারা সাফ জানিয়ে দেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গৃহীত সব কর্মসূচি ও সিদ্ধান্তের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।