কাল বিকালে মহাসমাবেশ

শাহবাগে অবরোধ, বিক্ষোভ

সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবি কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রিট করার ঘোষণা

প্রকাশ | ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০ | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০৭

যাযাদি রিপোটর্
মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড Ñযাযাদি

মন্ত্রিসভায় কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অনুমোদন হওয়ার পর বুধবার রাত থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবিতে শাহবাগে বিক্ষোভ শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকমীর্রা বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো এই বিক্ষোভ চালিয়ে যান। পাশাপাশি কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এই বিক্ষোভের মধ্যেই বৃহস্পতিবার নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এদিকে গতকাল সকাল থেকেই দ্বিতীয় দিনের মতো ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’, ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’, ‘মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম’সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকমীর্রা ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে বিক্ষোভ করছে। সকালে ৫০-৬০ জন এই বিক্ষোভে অংশ নেন। তবে বেলা গড়াতে থাকলে দুপুরের দিকে বিক্ষোভকারীর সংখ্যা কমে যায়। বিকালের দিকে সংখ্যা আবার বেড়ে যায়। কোটা বাতিলের পরিপত্র জারির পর কোটা বহালের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে জানানো হয়, খুব দ্রæতই তারা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করবেন। আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানানো হয়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ আতিকুর বাবু বলেন, আগামীকাল বিকাল ৩টায় শাহবাগে মহাসমাবেশ করবেন তারা। দাবি না মানা পযর্ন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাথী রহমান বলেন, ‘আমরা কারও বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি না। নিজেদের অধিকারের জন্য রাস্তায় নেমেছি। দাবি না মানা পযর্ন্ত সরব না।’ বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে শাহবাগ থানার সামনে সকাল থেকে পুলিশ মোতায়েন করা হলেও দুপুরের পর পুলিশ সরে যায়। দুপুর ১টার দিকে পুলিশ কমর্কতার্রা এসে বিক্ষোভকারীদের শাহবাগ মোড় ছেড়ে দেয়ার জন্য বলেন। তবে বিক্ষোভকারীরা দাবি না মানা পযর্ন্ত সরে যাবেন না বলে জানান। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের পক্ষ থেকে ছয় দফা দাবি জানানো হয়েছে। সেগুলো হলো- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তি করা পেজ ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কোটা সংস্কার কমিটির প্রতিবেদন বাতিল ঘোষণা, সব চাকরির পরীক্ষায় ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাস্তবায়ন, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য সুরক্ষা আইন, রাজাকারের সন্তানদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ না দেয়া ও তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচাযের্র বাসভবনে হামলাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। যানজটে রাজধানীতে অচলাবস্থা এদিকে বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের অবস্থানের কারণে বৃহস্পতিবার ওই এলাকা ঘিরে সড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দেখা দেয় গণপরিবহন সংকটও। এতে বিভিন্ন গন্তব্যমুখী মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিশেষ করে শাহবাগ মোড় ঘিরে বড় দুটি হাসপাতাল থাকায় সেখানকার রোগী ও তাদের স্বজনদেরও এই দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে। বুধবার বিকালে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা। রাত ১টার দিকে তারা ঘোষণা দেন, কোটা বহালের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পযর্ন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বৃহস্পতিবার রাত পযর্ন্তও চলছিল এই অবরোধ। তাদের অবস্থানের কারণে শাহবাগের সঙ্গে সংযোগ সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। যানজট একদিকে পেঁৗছে যায় বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফামের্গট, খামারবাড়ি পযর্ন্ত, অন্যদিকে জটলা ঠেকে বনানী পযর্ন্ত। আবার একদিকে মৎস্য ভবন ছাড়িয়ে গাড়ির জটলা ঠেকে গুলিস্থান-মতিঝিল এলাকা পযর্ন্ত। এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্সল্যাব, নিউমাকের্ট এলাকায়ও যানবাহন চলাচলে স্থবিরতা দেখা দেয়। শাহবাগ-সংলগ্ন এলাকা এড়াতে বিকল্প রাস্তায় একসঙ্গে অনেক গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় সেসব পয়েন্টও প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। অন্যদিকে শাহবাগ মোড়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং বারডেম জেনারেল হাসপাতালের মতো বড় দুটি চিকিৎসাকেন্দ্র। হাসপাতাল দুটিতেই থাকে রোগীদের ভিড়। কিন্তু অবরোধের কারণে যানজটের কবলে পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী ও তার স্বজনদেরও। চট্টগ্রাম থেকে মুমূষুর্ অবস্থায় ভাইকে নিয়ে বারডেম জেনারেল হাসপাতালে এসেছেন মৌটুসী খন্দকার। গতকাল সকাল ৮টায় তারা ঢাকার মধ্যে ঢুকলেও হাসপাতালে উপস্থিত হতে পেরেছেন দুপুর ১টায়। মৌটুসী খন্দকার বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে আমার ভাইকে রেফাডর্ করা হয়েছে। নিদের্শনা দেয়া ছিল সকাল ৯টার মধ্যে পেঁৗছতে হবে। এমনিতেই তিনি মুমূষুর্ রোগী। আর ঢাকায় এসে যানজটে পড়ে তার অবস্থা আরও বেশি খারাপ হয়ে যায়। হাসপাতালে ঢোকার আগে তার মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল। এখন তাকে নিবিড় পযের্বক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। অবশ্য, ডাক্তার জানিয়েছেন, রোগীর অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।’ উত্তরায় যাওয়ার জন্য প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিএসএমএমইউ’র সামনে ক্রাচে ভর দিয়ে দঁাড়িয়ে ছিলেন মহিবুল ইসলাম রিপন। তিনি বলেন, ‘আমি গত মাসে সড়ক দুঘর্টনায় পায়ে অনেক বড় আঘাত পেয়েছি। এখনো ক্রাচে ভর দিয়ে হঁাটতে হচ্ছে। সবের্শষ মেডিকেল চেকআপের জন্য এসেছিলাম। সেটা শেষ করে এখন উত্তরায় বাসায় যাওয়ার জন্য কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। দুই-একটা গাড়ি এলেও যাত্রীদের চাপের জন্য উঠতে পারছি না। আবার বিভিন্ন রাইডের গাড়িগুলো শাহবাগে আসতে চাইছে না। কী করব, তা জানি না! ’ যানবাহনের এই জটের মধ্যে রিকশা ভাড়া হয়ে যায় আকাশচুম্বী। রিকশার জন্য অপেক্ষমান যাত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, শাহবাগ থেকে ফামের্গট যেতেই রিকশা ভাড়া যাচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। কিন্তু তারা এখন এভাবে যেতে বাধ্য। সামগ্রিক বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার রিফাত রহমান শামীম জানান, আন্দোলন কে করেছে, সেটা বড় বিষয় নয়। একটা আন্দোলন হলে সেখানে রাস্তা বøক থাকে, লক হয়ে যায়। বøকের কারণে যেন জনদুভোর্গ সৃষ্টি না হয়, সে জন্য তারা সেসব স্থানের সড়কগুলোর ডাইভারশন করে ভোগান্তি কমানোর কাজ করছেন। রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলছেন। জনগণের দুভোর্গ বিবেচনায় তাদের রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন।