শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

একদিনে রেকর্ড ৭৪ জনের মৃতু্য, শনাক্ত ৬৮৫৪

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৯ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

বাড়ছে মৃতু্য, বাড়ছে শঙ্কা। পালস্না দিয়ে বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যাও। কে বাঁচে, কে মরে- সে আশঙ্কায় দেশের মানুষ ভয়াল অস্থিরতায় ভুগছে। স্বজন-প্রিয়জন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী সবাইকে নিয়ে যারা একাত্ম ছিলেন তারা হারানোর বেদনায় মনোপীড়ায় ভুগছেন প্রতিমুহুর্তে। মৃতু্যর এ নগ্ন উলস্নাস যেন কিছুতেই থামছে না। ক্ষত-বিক্ষত করছে মানুষ, সমাজ ও দেশকে। আতঙ্ক নিয়ে ঘুম থেকে উঠছেন অথবা ঘুমাতে যাচ্ছেন দেশের প্রতিটি মানুষ। কারণ প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতু্যর সংখ্যা।

দেশে প্রাণঘাতী এ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় এ যাবতকালের সর্বোচ্চ রেকর্ডসংখ্যক ৭৪ জনের মৃতু্য হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে নয় হাজার ৫২১ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা ৭ হাজারের নিচে নেমেছে। এ সময় আরও ৬ হাজার ৮৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩২ জনে।

প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা স্বাক্ষরিত করোনাভাইরাসবিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় বুধবার সকাল আটটা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশ থেকে ৩৩ হাজার ৩২৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে ২৩৭টি সরকারি ও বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে ৩৩ হাজার ১৯৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। মোট নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ হাজার ৩৯১ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৩০ জনে। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৮২ শতাংশ।

বিজ্ঞপ্তির ভাষ্যমতে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৪৮ জন ও নারী ২৬ জন। ৭৪ জনের মধ্যে হাসপাতালে ৭০ জন ও বাড়িতে ৪ জনের মৃতু্য হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত ৭৪ জনের মধ্যে বিশ থেকে ত্রিশ

বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। একইভাবে ত্রিশ থেকে চলিস্নশ বছরের মধ্যে ৫ জন, চলিস্নশ থেকে পঞ্চাশ বছরের মধ্যে ৬ জন, পঞ্চাশ থেকে ষাট বছরের মধ্যে ১৬ জন এবং ষাট থেকে সত্তর বছরের মধ্যে ৪৬ জন রয়েছেন।

বিভাগভিত্তিক হিসাবে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৭৪ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৪৩ জন, চট্টগ্রামে ১৫ জন, রাজশাহীতে ৩ জন, খুলনায় ৭ জন, বরিশালে ৪ জন এবং সিলেট বিভাগে ২ জনের মৃতু্য হয়েছে।

বাংলাদেশে গত বছর ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ প্রথম মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করেছিল সরকার। এ বছর ৩১ মার্চ তা ৯ হাজার ছাড়িয়ে যায়। গত মঙ্গলবার একদিনে ৬৬ জনের মৃতু্যর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। বৃহস্পতিবার সেই রেকর্ড ভেঙে মৃতু্যর সংখ্যা বেড়ে ৭৪ জন হয়।

একইভাবে সংক্রমণ ধরা পড়ার এক বছর পর এ বছর মার্চের শেষে প্রথমবারের মতো দেশে একদিনে পাঁচ হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের খবর আসে। এর মধ্য দিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৯ মার্চ ৬ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরপর মাত্র এক সপ্তাহে সেই তালিকায় যোগ হয়েছে আরও অর্ধলক্ষ নাম।

কোনো দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঠিক করা কিছু নির্দেশনা থেকে বোঝা যায়। তার একটি হলো রোগী শনাক্তের হার। টানা দুই সপ্তাহের বেশি রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। এ বছর ফেব্রম্নয়ারির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে ছিল। দুই মাস পরে গত ১০ মার্চ দৈনিক শনাক্ত আবার হাজার ছাড়ায়। এরপর দৈনিক শনাক্ত বাড়ছেই।

বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ১৩ কোটি ২৫ লাখ পেরিয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৯ লাখ ৭৫ হাজার। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ৩৩তম স্থানে আছে বাংলাদেশ। মৃতের সংখ্যায় ৪০তম অবস্থানে রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে