বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক

জলবায়ু আন্দোলনের নেতৃত্বে ফিরতে চায় যুক্তরাষ্ট্র :কেরি

যাযাদি রিপোর্ট
  ১০ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শুক্রবার গণভবনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের 'আনফিনিশড্‌ মেমোরি' বইটি উপহার দেন -ফোকাস বাংলা

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। সেই প্রেক্ষিতে প্যারিস চুক্তির আলোকে আবারও বিশ্বকে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব দিতে চায় বলে জানিয়েছেন জন কেরি।

ভবিষ্যতের সেই প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ, ভারতসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোর অংশগ্রহণও আশা করছেন বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি।

শুক্রবার সংক্ষিপ্ত সময়ের ঢাকা সফরকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডাকা জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষসম্মেলন বিষয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার দুপুরে ঢাকায় আসেন জন কেরি। বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক করেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, ভালনারেবল ফোরাম প্রেসিডেন্সির বিশেষ দূত আবুল কালাম আজদসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কেরি ও মোমেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে কেরি সংবাদ সম্মেলনের শুরু করে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অনুরোধে আমি এখানে এসেছি। কারণ যুক্তরাষ্ট্র আবার প্যারিস এগ্রিমেন্টের বাস্তবায়নের নেতৃত্বে ফিরে এসেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, আমাদের নাগরিক এবং দেশগুলোকে সুরক্ষার জন্য এসব প্রচেষ্টা। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা কোনো একক দেশ সমাধান করতে পারবে না। সংকট যে আছে এ নিয়ে কোনো দেশের কোনো সন্দেহ নেই।'

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন দুর্যোগের প্রসঙ্গ তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরে মানব ইতিহাসের কঠিন দিন, কঠিন সপ্তাহ, মাসগুলোর মুখোমুখি হয়েছি আমরা। বিশ্বব্যাপী

মানবসৃষ্ট দুর্যোগ দেখেছি। ভাইরাস, খরা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়া থেকে শুরু করে অনেক কিছু দেখছি।

তিনি আরও বলেন, 'ইতোমধ্যে জলবায়ুর কারণে মানুষ বাস্তুচু্যত হয়ে অন্যত্র যাওয়া শুরু করেছে। বিজ্ঞানের শিক্ষা থেকে আমরা জানতে পেরেছি সবাইকে এক সঙ্গে কাজে নামতে হবে।'

আগামী ২২ ও ২৩ এপ্রিল বাইডেনের আহ্বানে লিডার্স সামিট অন ক্লাইমেট অনুষ্ঠিত হবে। ওই সামিটে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এই সফর শুরু করেছেন বলে জানান তিনি।

এই সম্মেলনের পাশাপাশি নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ২৬তম সম্মেলন বা 'কপ২৬' নিয়ে আলোচনার জন্য সফর শুরু করেছেন বাইডেনের বিশেষ এই দূত।

\হকেরি বলেন, 'এসব কারণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বড় অর্থনীতির দেশ ও অংশীদারদের নিয়ে সামিট আহ্বান করেছেন। আলোচনার মাধ্যমে যাতে পরিস্থিতি মোকাবিলার রাস্তাগুলো তৈরি করা যায়, জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলার প্রযুক্তিগুলো সবার মাঝে পৌঁছে দেওয়া যায়। বাংলাদেশ এই সামিটে অংশ নেবে জেনে আমি খুবই আনন্দিত। প্রযুক্তি, গবেষণা, উন্নয়ন, আর্থিক বিষয়গুলো আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার জন্য এই সম্মেলন খুবই কার্যকর হবে।'

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু ইসু্য থেকে পিছিয়ে পড়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বাইডেন বলেছেন, ভবিষ্যতে এই খাতে দুই ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্লাইমেট সামিটে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বৈশ্বয়িক উষ্ণতা কমানোর কৌশলগুলো প্রয়োগের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। বাংলাদেশ কী কী উদ্যোগ নিচ্ছে সেগুলো তাকে জানানো হয়েছে।

\হমোমেন বলেন, 'বাংলাদেশ জাতীয় জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা, ১৪ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন, জলবায়ুর জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা, মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি পস্ন্যান, পস্নানেটারি ইমার্জেন্সি রেজুলেশন, সুন্দরবন সুরক্ষা পদক্ষেপসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমান সরকার।'

যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু বিষয়ক নীতি সাফল্য পাবে আশা করে মোমেন বলেন, জন কেরির জীবনে অনেক সাফল্যের গল্প আছে। তিনি যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানেই সাফল্য এসেছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি হয়েছে তার দৃঢ়তার কারণে। ভিয়েতনাম যুদ্ধেও তার অনেক সাফল্য রয়েছে। ভিয়েতনামের সঙ্গে পুনরায় সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টায়ও তিনি সফল হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, 'এখন আমরা আশা করব প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিশেষ দূত হিসেবে জন কেরি আগামী বছর থেকে ক্লাইমেট ফান্ডে ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্জন করতে পারবেন। এটা হবে তার আরেক সাফল্য। এই ফান্ডের ৫০ শতাংশ এডাপটেশন এবং ৫০ শতাংশ মিটিগেশনের কাজে ব্যয় করা হবে বলে আশা রাখি।'

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের বন ও পাহাড় ধ্বংস করছে উলেস্নখ করে মোমেন বলেন, তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগে কেরি বা যুক্তরাষ্ট্র ভূমিকা রাখবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

হাসিনা-কেরি

সৌজন্য বৈঠক

ঢাকায় সংক্ষিপ্ত সফরকালে শুক্রবার বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক করেন জন কেরি। এ সময় ক্লাইমেট লিডার্স সামিটে অংশ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করেন জন কেরি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সংক্ষিপ্ত সফর শেষে ঢাকা ছেড়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি ঢাকা ছাড়েন।

এর আগে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় দিলিস্ন থেকে বিশেষ পেস্ননে জন কেরি ঢাকায় আসেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও তার স্ত্রী সেলিনা মোমেন। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার উপস্থিত ছিলেন।

আগামী ২২-২৩ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে ৪০টি দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের অংশগ্রহণে ভার্চুয়ালি ক্লাইমেট লিডার্স সামিটের আয়োজন করা হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সশরীরে আমন্ত্রণপত্র নিয়ে আসেন জন কেরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে