প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শোক

ব্রিটিশ রানীর স্বামী প্রিন্স ফিলিপের জীবনাবসান

প্রকাশ | ১০ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে প্রিন্স ফিলিপ
ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী প্রিন্স ফিলিপ শুক্রবার ৯৯ বছর বয়সে চিরবিদায় নিয়েছেন। ব্রিটিশ রাজপ্রাসাদ 'বাকিংহাম প্যালেস' শুক্রবার এক বিবৃতি দিয়ে তার মৃতু্যর খবরটি নিশ্চিত করেছে। সংবাদসূত্র :বিবিসি, রয়টার্স 'ডিউক অব এডিনবরা' প্রিন্স ফিলিপ ১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর প্রিন্সেস এলিজাবেথকে বিয়ে করেন। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় দ্বিতীয় এলিজাবেথ যুক্তরাজ্যের রানি হন। ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাসে কোনো রাজা বা রানির সবচেয়ে দীর্ঘদিনের জীবনসঙ্গী ছিলেন তিনি। বাকিংহাম প্যালেস এক বিবৃতিতে বলেছে, 'গভীর দুঃখের সঙ্গে জানানো যাচ্ছে, মহামান্য রানি তার প্রিয় স্বামী ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপের মৃতু্যর কথা ঘোষণা করেছেন।' ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, 'শুক্রবার (স্থানীয় সময়) সকালে উইন্ডসর ক্যাসেলে রাজপরিবারের এই সদস্য মারা যান।' প্রিন্স ফিলিপের মৃতু্যতে শোক জানিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, তিনি 'অগণিত তরুণকে অনুপ্রাণিত করে গেছেন'। বরিস আরও বলেন, ?'প্রিন্স ফিলিপ যুক্তরাজ্য, কমনওয়েলথ ও বিশ্বজুড়ে প্রজন্মের পর প্রজন্মের অনুরাগ অর্জন করেছিলেন।' বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রিন্স ফিলিপের মৃতু্যতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়াত প্রিন্স ফিলিপের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন এবং শোকার্ত রাজপরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। রানির জীবনসঙ্গী হলেও ফিলিপের কোনো সাংবিধানিক দায়িত্ব ছিল না। কিন্তু রাজপরিবারের এত ঘনিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ তিনি ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। ৭৩ বছর তারা দাম্পত্য জীবন পার করেছেন। রানির আদেশেই ব্রিটিশ রাজতন্ত্রে একসময় তিনি হয়ে ওঠেন দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। জীবনসঙ্গী হিসেবে রানিকে তার কাজে সহযোগিতা করলেও বিশেষ কিছু কাজের ব্যাপারে ফিলিপের বিশেষ আগ্রহ ছিল। রাজপরিবারের নানা আনন্দ উৎসব আর কঠিন চ্যালেঞ্জের সময় তিনি ছিলেন রানির পাশে। নিজের ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে তিনি একবার বলেছিলেন, তার কাছে যেটা সবচেয়ে ভালো মনে হয়েছে, তিনি সেই কাজটাই করেছেন। তিনি বলেন, 'কেউ কেউ মনে করেন ঠিক আছে, আবার কেউ ভাবেন ঠিক হয়নি- তো আপনি কী করতে পারেন? আমি যেভাবে কাজ করি, সেটা তো আমি হঠাৎ করে বদলাতে পারি না। এটা আমার স্টাইলেরই একটা অংশ।' পরিবেশ ও তরুণদের জন্য অনেক কাজ করেছেন তিনি। 'স্পষ্টভাষী' হিসেবেও পরিচিতি ছিল প্রিন্স ফিলিপের। আগাম 'সতর্কতার' অংশ হিসেবে গত ১৬ ফেব্রম্নয়ারি প্রিন্স ফিলিপকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে এক মাস থাকার পর গত ১৬ মার্চ সেন্ট্রাল লন্ডনের ওই হাসপাতাল থেকে তাকে আবার রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়। ঠিক কী কারণে প্রিন্স ফিলিপকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, তা জানানো না হলেও ভর্তির সময় বাকিংহাম প্যালেস থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, প্রিন্স ফিলিপের অসুস্থতার কারণ করোনাভাইরাস সম্পর্কিত নয়। গত জানুয়ারিতে রাজপ্রাসাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, প্রিন্স ফিলিপ ও রানি এলিজাবেথ টিকা নিয়েছেন। তাদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকই টিকা দিয়েছেন। এছাড়া করোনার শুরু থেকেই তারা উইন্ডসর ক্যাসেলে খুব অল্প সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে বাস করছেন। প্রিন্স ফিলিপ ও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ দম্পতির চার সন্তান। এছাড়া তাদের আট নাতি-নাতনি ছাড়াও সেসব নাতি-নাতনির আরও ১০ সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তান প্রিন্স অব ওয়েলস চার্লসের জন্ম ১৯৪৮ সালে। দ্বিতীয় সন্তান প্রিন্সেস আন্নের জন্ম ১৯৫০ সালে। ১৯৬০ সালে জন্ম নেন ডিউক অব ইয়র্ক প্রিন্স অ্যান্ড্রু। চতুর্থ ও শেষ সন্তান আর্ল অব ওয়েসসেক্স প্রিন্স এডওয়ার্ডের জন্ম ১৯৬৪ সালে। ১৯২১ সালে গ্রিক দ্বীপ কোরফুতে জন্মগ্রহণ করেন প্রিন্স ফিলিপ। তার বাবা ছিলেন গ্রিস ও ডেনমার্কের প্রিন্স অ্যান্ড্রু। তিনি হেলনেসের রাজা প্রথম জর্জের ছোট ছেলে ছিলেন। আর তার মা প্রিন্সেস অ্যালিস ছিলেন লর্ড লুইস মাউন্টব্যাটেনের মেয়ে। খুব আদরেই কেটেছে প্রিন্স ফিলিপের শৈশব। তার জন্মের এক বছর পর ১৯২২ সালে এক অভু্যত্থানের পর বিপস্নবী এক আদালতের রায়ে ফিলিপের বাবার পরিবারকে গ্রিসের এক দ্বীপে নির্বাসনে পাঠানো হয়। রাজা পঞ্চম জর্জ তাদের উদ্ধার করে আনতে একটি ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ পাঠান, যে জাহাজে করে সেখান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ফ্রান্সে। ফ্রান্সে লেখাপড়া শুরু করার পর সাত বছর বয়সে তিনি ইংল্যান্ডে মাউন্টব্যাটেন পরিবারে তার আত্মীয়-স্বজনদের কাছে চলে আসেন এবং এরপর স্কুল জীবন কাটে ইংল্যান্ডে। প্রিন্স ফিলিপ তার লেখাপড়া শেষ করেন জার্মানি ও স্কটল্যান্ডে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি সামরিক বাহিনীতে ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং চাকরি নেন রয়্যাল নেভিতে। প্রিন্স ফিলিপ যখন ডার্টমাথে ব্রিটানিয়া রয়্যাল নেভাল কলেজের ক্যাডেট, তখন ওই কলেজ পরিদর্শন করেন রাজা ষষ্ঠ জর্জ এবং রানি এলিজাবেথ, সঙ্গে ছিলেন তাদের দুই কিশোরী মেয়ে-প্রিন্সেস এলিজাবেথ ও প্রিন্সেস মার্গারেট। ওই সফরে দুই কিশোরী প্রিন্সেসের সঙ্গ দেন প্রিন্স ফিলিপ। তরুণ প্রিন্স ওই সফরে ১৩ বছরের প্রিন্সেস এলিজাবেথের মনে গভীর ছাপ ফেলেছিলেন। ফলে ফিলিপের প্রেমে পড়ে যান প্রিন্সেস এলিজাবেথ। ১৯৪৬ সালের গ্রীষ্মে ফিলিপ রাজার কাছে গিয়ে তার মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং প্রথম সাক্ষাতের আট বছর পর তারা বিয়ে করেন।