প্রতিদিন ভাঙছে পুরনো রেকর্ড

করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ ৭৭ জনের মৃতু্য শনাক্ত ৫৩৩৪

প্রকাশ | ১১ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে। লকডাউনেও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে রাজধানীর মার্কেট ও সড়কগুলোতে উপচে পড়া ভিড় ও যানজট। ছবিটি শনিবার নিউমার্কেট এলাকা থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা
দেশে লাগামহীন বেড়ে চলা মহামারি করোনা সংক্রমণ প্রতিদিন তার পুরনো রেকর্ড ভাঙছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ সারাদেশে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৭৭ জনের মৃতু্য হয়েছে। সংক্রমণ শনাক্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত এটি সর্বাধিক। এর আগে গত বৃহস্পতিবার একদিনে সবচেয়ে বেশি মৃতু্যর খবর এসেছিল। সেদিন ৭৪ জনের মৃতু্যর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সব মিলিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯ হাজার ৬৬১ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৩৪৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৭ জন হয়েছে। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা গত কয়েক দিনের তুলনায় কিছুটা কমলেও এ সময়ে চট্টগ্রাম জেলায় সর্বাধিক ৫২৩ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগে গত ২ এপ্রিল এ জেলায় একদিনে সর্বোচ্চ ৫১৮ জনের নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। আট দিনের মাথায় সংখ্যায় তা ছড়িয়ে গেল। প্রতিদিনের মতো শনিবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা স্বাক্ষরিত করোনাভাইরাস-বিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশ থেকে ২৫ হাজার ১৮৫টি করোনা নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে আগের জমা কিছু স্যাম্পলসহ ২৪৩টি সরকারি ও বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে ২৬ হাজার ৭৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩৭ লাখ ২০ হাজার ৬১৪টি। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা হয়েছে ১২ লাখ ৫২ হাজার ৮৭৫টি। নতুন নমুনা পরীক্ষার সময় আরও ৫ হাজার ৩৩৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৭ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে এ সময় করোনা আক্রান্ত ৩ হাজার ৮৩৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেনে। দেশে এ পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং মৃতু্যর হার ছিল ১ দশমিক ৪২ শতাংশ। বিজ্ঞপ্তির ভাষ্যমতে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত ৭৭ জনের মধ্যে পুরুষ ৫৩ জন ও নারী ২৪ জন। সবাই হাসপাতালে মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে দশ থেকে বিশ বছরের রয়েছে একজন, বিশ থেকে ত্রিশ বছরের মধ্যে ৩ জন রয়েছেন। একইভাবে ত্রিশ থেকে চলিস্নশ বছরের মধ্যে ২ জন, চলিস্নশ থেকে পঞ্চাশ বছরের মধ্যে ৫ জন, পঞ্চাশ থেকে ষাট বছরের মধ্যে ২২ জন এবং ষাট থেকে সত্তর বছরের মধ্যে ৪৪ জন রয়েছেন। বিভাগভিত্তিক হিসাবে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে ৫১ জন, চট্টগ্রামে ১৫ জন, রাজশাহীতে ৩ জন, খুলনায় ২ জন, বরিশালে ১ জন এবং সিলেট বিভাগে ১ এবং রংপুর বিভাগে ৪ জনের মৃতু্য হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ৫২৩ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগে জেলায় একদিনে সর্বোচ্চ ৫১৮ জনের নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল গত ২ এপ্রিল। আট দিনের মাথায় সংখ্যায় তা ছড়িয়ে গেল। এ নিয়ে গত ১০ দিনে চট্টগ্রাম জেলায় মোট ৪ হাজার ৯৫ জন রোগী শনাক্ত হলো। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত পাঁচজনের মৃতু্য হয়েছে বলে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যে জানানো হয়েছে। এতে জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪১৪ জনে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, শনিবার আগের ২৪ ঘণ্টায় যে ৫২৩ জনের নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৪২৯ জন নগরীর বাসিন্দা। এই সংখ্যা একদিনে চট্টগ্রাম জেলায় করোনা শনাক্ত হওয়ার দিক থেকে সর্বাধিক। চট্টগ্রামে গত বছরের ৩ এপ্রিল করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৯ জুন সর্বোচ্চ ৪৪৫ জনের নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. আসিফ খান বলেন, ২ হাজার ৭৯১টি নমুনা পরীক্ষায় ৫২৩টি পজিটিভ হয়েছে। শনাক্তের হার ১৯ শতাংশ। এখন পর্যন্ত জেলায় ৩ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৬ জনের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে ৪৮ হাজার ৯১ জনে দাঁড়িয়েছে। সে হিসাবে শনাক্তের গড় হার ১২ শতাংশ। শনাক্তদের মধ্যে ৩৫ হাজার ৩২৭ জনই নগরীর বাসিন্দা। বাকিরা চট্টগ্রাম জেলার ১৪টি উপজেলার বাসিন্দা। এর আগে ১ এপ্রিল জেলায় ২৮৭ জনের নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। এরপর ৩ এপ্রিল ৪৬৭ জন, ৪ এপ্রিল ২৩২ জন, ৫ এপ্রিল ৩০৭ জন, ৬ এপ্রিল ৪৯৪ জন, ৭ এপ্রিল ৪১৪ জন, ৮ এপ্রিল ৪৭৩ জন এবং ৯ এপ্রিল ৩৮০ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। বাংলাদেশে গত বছর ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ প্রথম মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করেছিল সরকার। এ বছর ৩১ মার্চ তা ৯ হাজার ছাড়িয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার এক দিনে ৭৪ জনের মৃতু্যর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। শনিবার সেই রেকর্ড ভেঙে মৃতু্যর সংখ্যা বেড়ে ৭৭ জন হয়। একইভাবে সংক্রমণ ধরা পড়ার এক বছর পর এ বছর মার্চের শেষে প্রথমবারের মতো দেশে এক দিনে পাঁচ হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের খবর আসে। এর মধ্য দিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৯ মার্চ ৬ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরপর মাত্র এক সপ্তাহে সেই তালিকায় যোগ হয়েছে আরও অর্ধলক্ষ নাম। কোনো দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঠিক করা কিছু নির্দেশক থেকে বোঝা যায়। তার একটি হলো রোগী শনাক্তের হার। টানা দুই সপ্তাহের বেশি রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। এ বছর ফেব্রম্নয়ারির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে ছিল। দুই মাস পরে গত ১০ মার্চ দৈনিক শনাক্ত আবার হাজার ছাড়ায়। এরপর দৈনিক শনাক্ত বাড়ছেই।