শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
নিহত কমপক্ষে ৬০

জান্তাবাহিনীর রাতভর অভিযানে লাশের স্তূপ মিয়ানমারে

১৯ বিক্ষোভকারীকে মৃতু্যদন্ড দিল সেনা সরকার ষ অভু্যত্থানবিরোধী গোষ্ঠীর হামলায় ১০ পুলিশ নিহত
যাযাদি ডেস্ক
  ১১ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতভর অভিযান চালিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় তাদের নির্বিচার গুলিতে লাশের স্তূপে পরিণত হয়েছে ইয়াঙ্গুন থেকে ৯১ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বাগো শহর। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত রাতভর চালানো এ অভিযানে কমপক্ষে ৬০ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা

এদিকে ভুক্তভোগী পরিবার বা স্থানীয়রা কেউই নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করতে পারেনি। নিহতদের অধিকাংশই মৃতদেহ নিরাপত্তাবাহিনী নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাতভর চালানো এ অভিযানে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনী প্রচলিত অস্ত্রের পাশাপাশি মেশিনগান, গ্রেনেড এবং মর্টারশেল ব্যবহার করে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম 'রেডিও ফ্রি এশিয়ার' (আরএফএ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার মিয়ানমারের বাগো শহরে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করেছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। রাজপথে বিক্ষোভকারীদের ব্যারিকেডও সরিয়ে দিয়েছে তারা। আন্দোলনের সময় সেসব ব্যারিকেড বিক্ষোভকারীরা রাস্তার ওপর রেখেছিল।

স্থানীয় এক বাসিন্দার বরাত দিয়ে রেডিও ফ্রি এশিয়া জানায়, শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত স্থানীয়রা মাত্র তিনটি মরদেহ উদ্ধার করতে পেরেছে। বাকি সেনাসদস্য স্থানীয় একটি প্যাগোডা (বৌদ্ধ মন্দির) এবং স্কুলে নিয়ে ফেলে রেখেছে।

এদিকে জান্তা সরকারের দমন-পীড়ন ও সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় মিয়ানমারের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি দেশটিতে

\হ'নো-ফ্লাই জোন' ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের দূত কিয়াও মোয়ে তুন। এ ছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে সামরিক সরকারের ওপর আরও কঠোর চাপ প্রয়োগ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।

গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আবারও ক্ষমতায় আসে। সামরিক বাহিনী এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুললেও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়ে দেয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ ফেব্রম্নয়ারি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভু্যত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচু্যত করে। সেইসঙ্গে এক বছরের জন্য দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে। তখন থেকে প্রায় প্রত্যেকদিন মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীরা অভু্যত্থানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে।

লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে অভু্যত্থানবিরোধী বিক্ষোভ করায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করতে শুরুর দিকে জলকামানের ব্যবহার করে। এর এক সপ্তাহ পর বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট এবং তাজা গুলি ব্যবহার শুরু করে নিরাপত্তাবাহিনী। জান্তাবিরোধী আন্দোলনে দেশটিতে এখন পর্যন্ত নারী-শিশুসহ প্রায় ৭০০ মানুষ নিহত হয়েছে।

১৯ বিক্ষোভকারীকে মৃতু্যদন্ড

দিল সেনা সরকার

এদিকে সামরিক বাহিনীর এক সহযোগীকে হত্যার অভিযোগ এনে মিয়ানমারের ১৯ জন অভু্যত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীকে মৃতু্যদন্ড দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন 'মিয়াওয়াড্ডি' টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, ইয়াঙ্গুনের একটি জেলায় ওই সহযোগীকে খুন করা হয়।

দেশটিতে টানা বিক্ষোভ চলার মধ্যে গত ২৭ মার্চ ইয়াঙ্গুনের উত্তর ওক্কালাপা জেলায় সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেনকে মারধর এবং তার এক সহযোগীকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় বিক্ষোভকারীদের দায়ী করে সেনা সরকার। ঘটনার পরপরই ওই জেলায় আইন জারি করে সামরিক আদালত পরিচালনার পথ উন্মুক্ত করা হয়। শুক্রবার সেই আদালতেই ১৯ বেসামরিক বিক্ষোভকারীকে মৃতু্যদন্ড দেওয়া হয়।

মৃতু্যদন্ড পাওয়া ১৭ জনকেই তাদের অনুপস্থিতিতে দন্ড দেওয়া হয়। অভু্যত্থানের পর এটাই প্রথম কোনো প্রকাশ্য দন্ড ঘোষণা করল সেনা সরকার। নির্বাচিত সরকার উৎখাত করা সেনাবাহিনীর দাবি, দেশটিতে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রশমিত হয়ে আসছে। শুক্রবার সেনা সরকারের পক্ষ থেকে এই দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মানুষ শান্তি চায় বলেই বিক্ষোভ কমে আসছে। এ ছাড়া আগামী দুই বছরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

অভু্যত্থানবিরোধী গোষ্ঠীর

হামলায় ১০ পুলিশ নিহত

অন্যদিকে মিয়ানমারের সামরিক অভু্যত্থানের বিরোধিতাকারী নৃতাত্ত্বিক সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যরা থানায় হামলা চালিয়ে অন্তত ১০ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। শনিবার দেশটির পূর্বাঞ্চলে এই হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে এসব গোষ্ঠীর একটি জোট।

অভু্যত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের হত্যা করা বন্ধ না হলে গত মাসে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা লড়াইয়ের হুমকি দেয় মিয়ানমারের তিনটি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তা'য়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি, মিয়ানমার ন্যাশনালিটিজ ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স এবং আরাকান আর্মির (এএ) এক যৌথ বিবৃতিতে এই হুমকি দেওয়া হয়।

ওই গোষ্ঠী তিনটির এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, শনিবার ভোরে শান প্রদেশের নংমোন পুলিশ স্টেশনে হামলা চালায় তাদের যোদ্ধারা। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম 'শান নিউজ' জানিয়েছে, এ হামলায় ১০ পুলিশ সদস্য নিহত হয়। তবে অন্য একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ১৪ জন। থানায় হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি জান্তা সরকার।

উলেস্নখ্য, মিয়ানমারের রাজপথে সহিংসতা বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে জান্তা সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভকারীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রম্নতি দেয় প্রায় একডজন সশস্ত্র গোষ্ঠী। এ ছাড়া উৎখাত হওয়া বেসামরিক আইনপ্রণেতারা একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এই সরকারে নৃতাত্ত্বিক নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকবে বলে তারা জানিয়েছেন। সরকার গঠনের এই পরিকল্পনা নিয়ে নিয়মিতভাবে অনলাইনে আলোচনাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে