শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একদিনে রেকর্ড ৭৮ মৃতু্য

করোনায় ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ৫৮১৯
যাযাদি রিপোর্ট
  ১২ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণে দিন দিন দীর্ঘতর হচ্ছে মৃতু্যর মিছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৭৮ জন। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথনোভেল করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্তের পর এখন পর্যন্ত দৈনিক মৃতের সংখ্যায় রেকর্ড এটি। সর্বশেষ শনিবার সর্বোচ্চ ৭৭ জনের মৃতু্যর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে রোববার ৭৮ জন মারা যাওয়ায় আবারও ভাঙল মৃতু্যর রেকর্ড। এমনকি টানা দুদিন মৃতু্যর নতুন রেকর্ড হলো। আর করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯ হাজার ৭৩৯ জনে দাঁড়াল।

এদিকে একই সময়ে দেশে আরও ৫ হাজার ৮১৯ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭৫৬ জনে।

প্রতিদিনের মতো রোববার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা স্বাক্ষরিত করোনাভাইরাস বিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার সকাল আটটা থেকে রোববার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশ থেকে ২৯ হাজার ২৯৮টি করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে আগে জমা কিছু স্যাম্পলসহ ২৪৩টি সরকারি ও বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে ২৯ হাজার ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নিয়ে দেশে (এন্টিজেন টেস্টসহ) মোট ৫০ লাখ ২ হাজার ৮৬৫টি নমুনা পরীক্ষা হলো। সরকারি ব্যবস্থাপনায় পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩৭ লাখ ৩৯ হাজার ১৫৫টি। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা হয়েছে ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৭১০টি। এদিকে নতুন নমুনা পরীক্ষার সময় আরও ৫ হাজার ৮১৯ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ফলে দেশে মোট করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭৫৬ জনে দাঁড়াল।

রোববারে বিজ্ঞপ্তির ভাষ্যমতে, সময় করোনা আক্রান্ত আরও ৪ হাজার ২১২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ফলে ভাইরাসটি থেকে সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯০ জন হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ২০ শতাংশ। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং মৃতের হার ছিল ১ দশমিক ৪২ শতাংশ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত ৭৮ জনের মধ্যে পুরুষ ৫৩ জন ও নারী ২৫ জন। তাদের মধ্যে ৭৭ জন হাসপাতালে এবং একজন বাড়িতে মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে এক থেকে দশ বছর বয়সি একজন ছিলেন। একইভাবে ত্রিশ থেকে চলিস্নশ বছরের মধ্যে ৬ জন, চলিস্নশ থেকে পঞ্চাশ বছরের মধ্যে ৭ জন, পঞ্চাশ থেকে ষাট বছরের মধ্যে ১৬ জন এবং ষাট থেকে সত্তর বছরের মধ্যে ৪৮ জন রয়েছেন।

করোনায় সর্বশেষ মৃতদের বিভাগভিত্তিক হিসাবে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে

\হ৪৭ জন, চট্টগ্রা২ে০ জন, রাজশাহীতে ৪ জন, খুলনায় ৪ জন, সিলেট বিভাগে ২ এবং রংপুর বিভাগে ১ জনের মৃতু্য হয়েছে।

বাংলাদেশে গত বছর ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ প্রথমৃতু্যর খবর নিশ্চিত করেছিল সরকার। বছর ৩১ মার্চ তা ৯ হাজার ছাড়িয়ে যায়। গত শনিবার এক দিনে ৭৭ জনের মৃতু্যর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যা যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। রোববার সেই রেকর্ড ভেঙে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮ জন হয়।

একইভাবে সংক্রমণ ধরা পড়ার এক বছর পর বছর মার্চের শেষে প্রথমবারের মতো দেশে এক দিনে পাঁচ হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের খবর আসে। এর মধ্য দিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৯ মার্চ ৬ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরপর মাত্র এক সপ্তাহে সেই তালিকা প্রতিদিন দীর্ঘতর হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে পর্যন্ত ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭৫৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঠিক করা কিছু নির্দেশক থেকে বোঝা যায়। তার একটি হলো রোগী শনাক্তের হার। টানা দুই সপ্তাহের বেশি রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। বছর ফেব্রম্নয়ারি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে ছিল। দুই মাস পরে গত ১০ মার্চ দৈনিক শনাক্ত আবার হাজার ছাড়ায়। এরপর দৈনিক শনাক্ত বাড়ছেই।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ২৯ মার্চ বেশ কিছু বিধিনিষেধসহ ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। এর মধ্যে ঘরের বাইরে গেলে মাস্কের ব্যবহার অন্যতম। কিন্তু সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকলেও জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে এখনো উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই।

এদিকে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আগামী বুধবার থেকে কঠোর লকডাউনে জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ রাখার পরিকল্পনা করেছে সরকার। তবে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকেরা বলছেন, কারখানা বন্ধ করলে ক্রয়াদেশ হারাবে বাংলাদেশ। তাছাড়া শ্রমিকেরা ছুটিতে গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা দিলে সংক্রমণ আরও ছড়াবে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার লকডাউনে শিল্পকারখানা খোলা রাখার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে চিন্তাভাবনা করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে