শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রলীগে হেফাজত সমর্থকদের অনুপ্রবেশে বিব্রত আ'লীগ

ফয়সাল খান
  ১২ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিসংগঠন ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে হেফাজতে ইসলামের সমর্থকদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের পদধারী নেতা হেফাজতে ইসলামের পক্ষ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন এবং কেউ কেউ পদত্যাগও করেন।

অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার কাজে ছাত্রলীগ সফলতার পরিচয় দিলেও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। তবে কতিপয় বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে হেফাজতে ইসলামসহ সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সারাদেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের শক্ত অবস্থানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একটি সূত্র বলছে, হেফাজতে ইসলামের সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের ৪ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আরও ৫ থেকে ৬ জন নেতাকর্মী হেফাজতের পক্ষ নিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগকারী নেতাকর্মী ও বহিষ্কৃতদের বাইরেও অনেকেই হেফাজতের পক্ষ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যেেপাস্ট দিয়েছেন। তাদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগের নেতাদের হেফাজতের পক্ষ নিয়ে

পদত্যাগ ও ফেসবুক স্ট্যাটাস সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ বাহাউদ্দিন নাছিযায়যায়দিনকে বলেন, ওরা বিচ্ছিন্নভাবে অনুপ্রবেশ করেছে। ছাত্রলীগ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আগামী দিনে নেতৃত্ব নির্বাচনে ছাত্রলীগকে আরও কঠোর হতে হবে। যাতে আদর্শ পরিপন্থি কেউ সংগঠনে ঢুকে সুনাক্ষুণ্ন করতে না পারে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের কাছে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী এমন হেফাজতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে- এটা আমার বিশ্বাসই হয় না।'

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য যায়যায়দিনকে বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের ছাত্রলীগ থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে নানা অপকর্ম করে এরাই সংগঠনের সুনাক্ষুণ্ন করেছে। ছাত্রলীগের নাভাঙিয়ে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে। কিন্তু যখনই আদর্শের প্রমাণ দেওয়ার সময় আসে তখনই তাদের আসল রূপ বেরিয়ে আসছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'সম্প্রতি হেফাজত ইসু্যতে কয়েকজনের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। আমরা যাদের চিহ্নিত করতে পেরেছি, তাদের আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছি। এমন আরও যাদের পাওয়া যাবে, তাদের ব্যাপারেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'

গত ২৯ মার্চ হেফাজতে ইসলামের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে পদত্যাগ করেন হবিগঞ্জ ছাত্রলীগের তিন নেতা। তারা হলেন- হবিগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন জনি, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ১০নং লস্করপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মহসিন আহমেদ মুন্না ও হবিগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম।

পরদিন গত ৩০ মার্চ হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেন সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড সভাপতি হাফিজ মাজিদ।

তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, 'মোদিকে দেশে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য এবং মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের কারণে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আ৫ি নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। যে দল ইসলামকে সম্মান দিতে জানে না, যারা ভাস্কর্যকে হালাল মনে করে, মুসলমানদের ওপর হামলাকারীকে দেশে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানায়- সেই দলে কোনো মুসলমান থাকতে পারে না। তাই আমিও সেই দলে থাকতে পারি না। আজ থেকে বয়কট করলাছাত্রলীগ।'

এদিকে, হেফাজতে ইসলামের বিতর্কিত নেতা মাওলানা মামুনুল হকের পক্ষে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উদ্দিন ও ফয়েজ মারজানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। মামুনুল হকের পক্ষে স্ট্যাটাস দিয়ে বহিষ্কার হয়েছেন চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের ৮নং সোনাইছড়ি ইউনিয়নে ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ। গত ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক মো. জয়নাল মিয়া ও সদস্য আসির মো. উমরকেও বহিষ্কার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ ছিল।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রিসোর্টে হেফাজত নেতা মামুনুল হক নারীসহ ঘেরাওয়ের পর সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ফয়েজ উদ্দিন তার ফেসবুক আইডি থেকে মামুনুল হকের পক্ষে স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি হেফাজত নেতা মামুনুল হককে কেন ছাত্রলীগ সম্মান দিতে জানে না- এমন প্রশ্ন তোলেন। এছাড়া ছাত্রলীগের কর্মীদের লোক দেখানো রাজনীতি বন্ধ করারও আহ্বান জানান।

পরে সংগঠনবিরোধী কার্যক্রমের জন্য তার বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হলে গত সোমবার তাকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। এরপর ফয়েজ উদ্দিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন, 'ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় আমাকে জেলা কমিটির পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এতে আমার কোনো সমস্যা বা আপত্তি নেই। আছিাত্রলীগ করি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে চলি।'

এর আগে ফেসবুকে ভাস্কর্য নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ায় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ছাত্রবৃত্তি-বিষয়ক সম্পাদক খালেদ খান রবিনকে স্থায়ী বহিষ্কার করে সংগঠনটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যফেসবুকে গত ২৪ নভেম্বর খালেদ লিখেছেন, 'বঙ্গবন্ধুর প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে, বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করছি। একটা কথা স্পষ্ট হওয়া উচিত যে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করা আর বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করা এক বিষয় না। আর এমন একটি কথার জন্য যদি ছাত্রলীগের জন্য দেওয়া আমার হাজার দিনের শ্রএক নিমিষেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে... আলহামদুলিলস্নাহ।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে