না ফেরার দেশে মিতা হক

প্রকাশ | ১২ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
'তুেিকান কাননের ফুল, কোন গগনের তারা'- নিজের কণ্ঠে গাওয়া এই বিখ্যাত গানের মতোই গগনের তারা হয়ে গেলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হক। করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত জটিলতায় না ফেরার দেশে পারি জমান বাংলা সংগীতাকাশের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র। ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল ৬টা ২০ মিনিটে তার মৃতু্য হয় বলে তার জামাতা মোস্তাফিজ শাহীন জানান। তার মৃতু্যর খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিল্পীর মৃতু্যতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা। মিতা হকের মৃতু্যতে পুরো শোবিজ অঙ্গনে নেআেসে শোকের ছায়া। শোক প্রকাশ করেন তারকারা। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যিেলখেন শোকবার্তা। জানা গেছে, গত ২৫ মার্চ মিতা হকের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। এরপর থেকে বাসাতেই আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। পরে অবস্থার অবনতি হলে গত ৩১ মার্চ তাকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠলে গত শুক্রবার (৯ এপ্রিল) তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন শনিবার সকালের দিকে হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি। এরপর তাকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকালে তিনি মারা যান। মিতা হক প্রায় পাঁচ বছর ধরে কিডনি রোগেও ভুগছিলেন। \হদেশের বরেণ্য এই সঙ্গীতশিল্পীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য গতকাল দুপুরে তার মরদেহ ছায়ানটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানান তার ভক্ত, শুভানুধ্যায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ। এরপর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জের মনোহারিয়ায়। সেখানে জানাজা শেষে তাকে চিরনিন্দ্রায় শায়িত করা হয়। মিতা হকের জন্ম ১৯৬২ সালে ঢাকায়। তিনি বাংলাদেশ বেতারের সর্বোচ্চ গ্রেডের তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন। পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ রবীন্দ্রসংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। তার এককভাবে মুক্তি পাওয়া মোট ২৪টি অ্যালবাআছে। এর মধ্যে ১৪টি ভারত থেকে ও ১০টি বাংলাদেশ থেকে। তিনি ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক লাভ করেন। সঙ্গীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২০ সালে একুশে পদক প্রদান করে। মিতা হক প্রয়াত অভিনেতা খালেদ খানের স্ত্রী। মেয়ে জয়িতাও রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। তার চাচা দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রপথিক ও রবীন্দ্র গবেষক ওয়াহিদুল হক। মিতা হক প্রথতোর চাচা ওয়াহিদুল হক এবং পরে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খান ও সনজীদা খাতুনের কাছে গান শেখেন। ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি তবলাবাদক মোহাম্মদ হোসেন খানের কাছে গান শেখা শুরু করেন। ১৯৯০ সালে বিউটি কর্নার থেকে প্রকাশিত হয় মিতা হকের প্রথরবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবা'আমার মন মানে না'। তিনি 'সুরতীর্থ' নাএেকটি গানের স্কুল পরিচালনা করতেন। পাশাপাশি ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের প্রধান হিসেবেও কাজ করেছেন। রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন পরিষদের সহসভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন শিল্পী। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হকের মৃতু্যতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, 'বাংলাদেশে রবীন্দ্র-চর্চা এবং রবীন্দ্রসংগীতকে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তার প্রচেষ্টা মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।' রাষ্ট্রপতি মিতা হকের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী মিতা হকের মৃতু্যতে শোক ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোকবার্তায় প্রয়াত শিল্পীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তথ্য জানানো হয় রোববার।