শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শুরু হলো 'সর্বাত্মক লকডাউন'

১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত ১৩ দফা কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই ৮ দিন গণপরিবহণ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দোকান-পাট বন্ধ থাকবে
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৪ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় আজ থেকে শুরু হচ্ছে কঠোর বিধিনিষেধ 'সর্বাত্মক লকডাউন'। বুধবার, ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত ১৩ দফা কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই ৮ দিন গণপরিবহণ, ট্রেন, বাস, লঞ্চ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে। সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ থাকবে। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ কর্ম এলাকায় থাকতে হবে।

করোনার বিস্তার রোধে সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। করোনার মহামারি দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর দেশে সংক্রমণ ও মৃতু্য আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকে। এর প্রেক্ষিতে ৫ এপ্রিল থেকে ৯ দিনের লকডাউন দেয় সরকার। প্রথমে ৭ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হলেও আজ থেকে শুরু হওয়া 'সর্বাত্মক লকডাউন'-এর মধ্যে ফাঁকা থাকার কারণে ওই দুই দিনও বর্ধিত করা হয়। মঙ্গলবার শেষ হওয়া এ লকডাউন অনেকটাই ঢিলেঢালা ছিল। সিটি এলাকায় গণপরিবহণ চলাচলসহ খোলা ছিল মার্কেট, শপিংমল, অফিস-আদালতসহ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। তবে এবারের লকডাউন আর শিথিল থাকছে না।

আজ থেকে শুরু হওয়া লকডাউনে শপিংমল ও অন্যান্য দোকানপাট বন্ধ থাকবে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান খোলার অনুমতি রয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। শিল্পকারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহণের মাধ্যমে শ্রমিকদের আনা-নেওয়া নিশ্চিত করবে। কৃষি শ্রমিক পরিবহণ এবং গণমাধ্যমসহ সব ধরনের জরুরি সেবা চালু থাকবে।

সারাদেশে সরকারের এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা ও মাঠ প্রশাসন কাজ করবে। এ লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর টহল জোরদার করা হবে।

এর আগে গত বছর ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর দিন দিন সংক্রমণ বাড়তে থাকে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে ওই বছর ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর কয়েক দফায় তা বেড়ে একটানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি ছিল। জীবন-জীবিকা সংকটের মুখে পড়ায় ওই বছরের মে মাসের পর থেকে বিধিনিষেধ শিথিল করা শুরু হয়। ধীরে ধীরে জীবনযাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়। গত বছরের শেষ ও চলতি বছরের শুরুতে করোনা সংক্রমণের হার অনেক কম ছিল। কিন্তু গেল ফেব্রম্নয়ারি মাস থেকে হঠাৎ করেই ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ শুরু হয়। প্রতিদিনই সংক্রমণ ও মৃতু্যর নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে আবারও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে 'সর্বাত্মক লকডাউনে' গেছে সরকার।

যা খোলা থাকছে : জরুরি সেবা ছাড়া এবারের লকডাউনে সবকিছু বন্ধ

থাকবে। হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফার্মেসি ও জরুরি চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত অফিসসমূহও খোলা থাকবে।

আইনশৃঙ্খলা, করোনা টিকা, বিদু্যৎ, পানি, গ্যাস ও জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, সরকারি ও বেসরকারি টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবা, বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ অন্যান্য জরুরি সেবা এবং সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ খোলা থাকবে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের যানবাহন ও কর্মচারীরা লকডাউনের নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবেন।

খাবারের দোকান ও হোটেল দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত খাদ্য বিক্রয় ও সরবরাহের জন্য খোলা থাকবে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চালু থাকবে। তাছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, মসজিদে তারাবি ও জুমার নামাজসহ সর্বোচ্চ ২০ জন মুসলিস্ন স্বাস্থ্যবিধি মেনে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্টসহ অধস্থন আদালতগুলো খোলা থাকলেও সেখানে আসামি, বাদী বা বাইরের অন্য কেউ যেতে পারবেন না। ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালতের কার্যক্রম চলবে।

শিল্পকারখানগুলো ও তাদের নিজস্ব পরিবহণ চালু থাকবে। কৃষি উপকরণ পরিবহণ, কৃষি শ্রমিক পরিবহণ, খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন উপকরণ পরিবহণ, নির্মাণ শ্রমিক পরিবহণে নিয়োজিত যানবাহন চালু থাকবে।

যা বন্ধ থাকছে :

শপিংমল ও অন্যান্য দোকানপাট বন্ধ থাকবে। সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে সব ধরনের যাত্রী পরিবহণ বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি সেবায় নিয়োজিত পরিবহণগুলো এ বিধি নিষেধের আওতামুক্ত। তাছাড়া অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জনসাধারণকে বাড়ি থেকে বের হতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন। এই নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রয়োজনে সম্পূরক নির্দেশনা জারি করতে পারবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে