সতর্ক অবস্থানে পুলিশ

হেফাজত নেতা মামুনুল গ্রেপ্তার

রাজধানীর বিভিন্ন থানা ছাড়াও মসজিদ, মাদ্রাসা ও পাড়া-মহলস্নায় পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের একাধিক টিম রয়েছে সাদা পোশাকে

প্রকাশ | ১৯ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে রোববার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ -ফোকাস বাংলা

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার বেলা ১টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামুনুল হককে প্রথমে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে কিছু সময় রাখার পর তেজগাঁও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে দুপুর পৌনে ২টার দিকে নিজ কার্যালয়ে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, '২০২০ সালে মোহাম্মদপুরে একটি ভাঙচুরের মামলায় মামুনুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা আছে মতিঝিল, পল্টন ও নারায়ণগঞ্জে। পরে সেগুলো সমন্বয় করা হবে।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা দীর্ঘদিন ধরে তাকে নজরদারিতে রেখেছিলাম, পাশাপাশি ২০২০ সালে মোহাম্মদপুর থানার একটি ভাঙচুর-নাশকতার মামলা তদন্ত করছিলাম। তদন্তে ওই ঘটনায় সুস্পষ্ট সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।' পুরো সময়ে তাকে কেন হাতকড়া পরা হয়নি-এমন প্রশ্নে হারুন অর রশীদ বলেন, 'মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করাটাই মুখ্য বিষয়। তাকে গ্রেপ্তার করে আমরা নিয়ে এসেছি। এ সময় তাকে হাতকড়া পরানো বা না পরানোর নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই।' এদিকে, মামুনুলকে গ্রেপ্তারের পর গাড়িতে তোলার সময় হেফাজত কিংবা মাদ্রাসার কেউই মামুনুলের গ্রেপ্তারে বাধা দেয়নি। তবে মামুনুলকে গাড়িতে তোলার পর কয়েকজনকে স্স্নোগান দিতে দেখা যায়। এ বিষয়ে ডিসি হারুন-অর-রশিদ বলেন বলেন, 'মামুনুলকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসা হয়েছে। এ সময় আমরা কোনো বাধার সম্মুখীন হইনি।' উপ-পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, 'প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাকে সোমবার আদালতে সোপর্দ করা হবে। তার রিমান্ড চাওয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।' তিনি বলেন, 'মোহাম্মদপুর থানার মামলা ছাড়াও গাজীপুরের মো. শাজহান নামের একজন তার বোনকে মামুনুল যে বিয়ে করার পর থেকে তাকে না পাওয়ার ব্যাপারে মোহাম্মদপুর থানায় যে জিডি করেছে, সে বিষয়েও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।' গত বছরের নভেম্বরে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে আলোচনায় আসেন মামুনুল হক। এরপর ভাস্কর্যের নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ডিসেম্বরে কুষ্টিয়া শহরে জাতির পিতার একটি নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের ভাঙচুর চালানো হয়। ভাস্কর্য বিরোধিতা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে। এ বছর মার্চে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তান্ডব চালায় হেফাজত। এর মধ্যে সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে ঢাকায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় সংঘাত-নাশকতার ঘটনায় মামুনুল হকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। এরপর গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁওয়ের একটি রিসোর্টে এক নারীসহ আটক হয়ে আবারও আলোচনায় আসেন হেফাজতের এই নেতা, যাকে তিনি নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেছেন। এরপর থেকে সংগঠনটির বেশ কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।