বাঁশখালীতে বিদু্যৎকেন্দ্রে সংঘর্ষ দুই মামলায় আসামি আড়াই হাজার, গ্রেপ্তার আতঙ্ক

প্রকাশ | ১৯ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় নির্মাণাধীন 'এসএস পাওয়ার পস্ন্যান্ট' নামের কয়লা বিদু্যৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এতে অজ্ঞাতপরিচয় সাড়ে তিন হাজারজনকে আসামি করা হয়েছে। শনিবার রাতে বাঁশখালী থানায় মামলা দুটি হয়। রোববার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে গুলিতে আহত অন্তত ৩০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহত পাঁচজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে। অন্যদিকে, গ্রেপ্তার-আতঙ্কে রয়েছেন শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। বন্ধ রয়েছে বিদু্যৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ। এর আগে শনিবার ঘটনার তদন্তে পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্যের পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তাদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেককে ৩ লাখ এবং আহত ব্যক্তিদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেয় এস আলম কর্তৃপক্ষ। শনিবার সকালে বাঁশখালীর গন্ডামারায় সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে পাঁচ শ্রমিক নিহত হন। আহত হন তিন পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন। ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ, পবিত্র রমজান মাসে কর্মঘণ্টা ১০ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টা, শুক্রবার ৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৪ ঘণ্টা করাসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেন বিদু্যৎকেন্দ্র নির্মাণকাজের শ্রমিকেরা। বিক্ষোভের একপর্যায়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন কিছু শ্রমিক। তখনই পুলিশ গুলি ছুড়ে। বাঁশখালী সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে শিল্প গ্রম্নপ এস আলমের মালিকানায় এসএস পাওয়ার পস্ন্যান্ট নামে এই বিদু্যৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। চীনা প্রতিষ্ঠান সেফকো থ্রি পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এখানে অর্থায়ন করেছে। এখানে প্রায় ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এদিকে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. আলাউদ্দিন রোববার সকালে বলেন, আহত ব্যক্তিরা সবাই চিকিৎসাধীন। বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল কবির বলেন, পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদানের ঘটনায় বাঁশখালী থানার এসআই মো. কামরুজ্জামান বাদী হয়ে শনিবার রাতে মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় দুই হাজার থেকে আড়াই হাজারজনকে আসামি করা হয়। বিদু্যৎকেন্দ্রে হামলা, গাড়ি পোড়ানোসহ ২৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় এসএস পাওয়ার পস্ন্যান্টের চিফ কো-অর্ডিনেটর ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে ২২ জনের নাম উলেস্নখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১ হাজার ৪০ থেকে ১ হাজার ৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। তবে দুই মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। বিদু্যৎকেন্দ্রের পরিবেশ শান্ত রয়েছে উলেস্নখ করে ওসি শফিউল কবির বলেন, সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নির্মাণকাজও বন্ধ রয়েছে। এদিকে কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন। ঘটনায় জড়িত না থাকলেও পুলিশ গ্রেপ্তার করবে- সেই ভয়ে আছেন। পুলিশের গুলিতে তাদের সহকর্মী মারা গেছেন, উল্টো তারাই আতঙ্কে রয়েছেন। স্থানীয় গ্রামবাসী আতঙ্কে থাকার কথা জানিয়েছেন। বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি : এদিকে, সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি)। রোববার সংগঠনের সভাপতি বদরুদ্দোজা নিজাম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তাহমিনা রহমান এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা পবিত্র রমজান মাসে আইনানুগ দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। আইবিসি নেতৃবৃন্দ নিহত পাঁচ শ্রমিকের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, আহতদের সুচিকিৎসা এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে তদন্তের মাধ্যমে দোষীকে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি : নিহত পাঁচ শ্রমিকের পরিবার ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে বাংলাদেশ পোশাক শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন। রোববার সংগঠনের সভাপতি মো. তৌহিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান বাবলু এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানান। এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে আজ রাষ্ট্রীয় পুলিশের গুলিতে শ্রমিকদের নির্মমভাবে মৃতু্যবরণ করতে হয়। নেতৃবৃন্দ নিহত ৫ জন শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের সুচিকিৎসা এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান।