শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তাহাজ্জুদের শ্রেষ্ঠ সময় রমজান

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৯ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

ইবাদতের মৌসুম রমজানুল মোবারকের ষষ্ঠ দিবস আজ। রহমতের দশকের আর মাত্র চারদিন বাকি রয়েছে। তাই মুমিন মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল। দিন-রাতের অবসর সময় অনেকে কোরআন তেলাওয়াত করছেন। কেউ কেউ মধ্যরাত থেকে সেহরি শেষ হওয়া পর্যন্ত জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ে মগ্ন থাকছেন।

কোরআন নাজিলের এ মাসে কোরআন তেলাওয়াতের ওপর যেমন গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি তাহাজ্জুদের নামাজের অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহিত করা হয়েছে। কেননা সেহরির সুবাদে তাহাজ্জুদ পড়া খুবই সহজ। সেহরির সময়ই তাহাজ্জুদের সময়।

মুসলিম উম্মাহর ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে প্রিয় নবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর ওপর এ নামাজ পড়া আবশ্যক ছিল। তিনি রাত জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। কোরআনে পাকে আলস্নাহতাআলা প্রিয় নবীকে তাহাজ্জুদ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

পবিত্র কোরআনে আলস্নাহতাআলা তার প্রিয় নবী (সা.)-কে উদ্দেশ করে বলেন, 'এবং রাত্রির কিছু অংশ তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, ইহা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে

প্রশংসিত স্থানে (মাকামে মাহমুদে) প্রতিষ্ঠিত করবেন।' (আল-কোরআন, পারা: ১৫, সূরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত: ৭৯)। তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত; অতিরিক্ত হিসেবে একে নফলও বলা হয়। এই নামাজ রাসূলুলস্নাহ (সা.)-এর জন্য অতিরিক্ত কর্তব্য ছিল। এর রাকাত সংখ্যা আট, বারো থেকে বিশ পর্যন্ত উলেস্নখ পাওয়া যায়। চার রাকাত বা দুই রাকাত পড়লেও তা তাহাজ্জুদ হিসেবে পরিগণিত হবে।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসূলুলস্নাহ (সা.) রাতে তাহাজ্জুদের উদ্দেশে যখন দাঁড়াতেন, তখন এই দোয়া পড়তেন- 'আলস্নাহুম্মা লাকাল হামদু আংতা কায়ি্যমুস সামাওয়অতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না ওয়া লাকালহামদু। লাকা মুলকুস সামাওয়অতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না। ওয়া লাকাল হামদু আংতা নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ। ওয়া লাকাল হামদু আংতাল হাক্কু। ওয়া ওয়া'দুকাল হাক্কু। ওয়া লিক্বাউকা হাক্কু। ওয়াল জান্নাতু হাক্কু। ওয়ান নারু হাক্কু। ওয়ান নাবিয়ু্যনা হাক্কু। ওয়া মুহাম্মাদুন সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া সালস্নামা হাক্কু। ওয়াস সাআতু হাক্কু। আলস্নাহুম্মা লাকা আসলামতু। ওয়াবিকা আমাংতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু। ওয়া ইলাইকা আনাবতু। ওয়া বিকা খাসামতু। ওয়া ইলাইকা হাকামতু। ফাগফিরলি মা কাদ্দামতু ওয়া মা আখ্‌খারতু। ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আ'লাংতু। আংতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আংতাল মুআখ্‌িখরু। লা ইলাহা ইলস্না আনতা। লা ইলাহা গাইরুকা। (বুখারি)

অর্থ : 'হে আলস্নাহ! সব প্রশংসা আপনারই, আপনিই আসমান-জমিন ও উভয়ের মধ্যে বিদ্যমান সবকিছুর নিয়ামক এবং আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আসমান-জমিন এবং এর মধ্যে বিদ্যমান সবকিছুর কর্তৃত্ব আপনারই। আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আপনি আসমান-জমিনের নুর। আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আপনি আসমান-জমিনের মালিক, আপনারই জন্য সব প্রশংসা।

আপনিই চির সত্য। আপনার ওয়াদা চির সত্য। (পরকালে) আপনার সাক্ষাৎ সত্য। আপনার বাণী সত্য। আপনার জান্নাত সত্য। আপনার জাহান্নাম সত্য। আপনার (প্রেরিত) নবীগণ সত্য। মুহম্মদ সালস্নালস্নাহু 'আলাইহি ওয়া সালস্নাম সত্য, কেয়ামত সত্য।

হে আলস্নাহ! আপনার কাছেই আমি আত্মসমর্পণ করলাম, আপনার ওপর ইমান আনলাম, আপনার ওপরই ভরসা করলাম, আপনার দিকেই রুজু করলাম, আপনার (সন্তুষ্টির জন্যই) শত্রম্নতায় লিপ্ত হলাম, আপনাকেই বিচারক মেনে নিলাম। তাই আপনি আমার আগের-পরের প্রকাশ্য ও গোপন সব পাপ-অপরাধ ক্ষমা করুন। আপনিই শুরু এবং আপনিই শেষ মালিক। আপনি ব্যতীত সত্য কোনো প্রকৃত ইলাহ নেই।'

পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারিত নফলের মধ্যে তাহাজ্জুদ সর্বোৎকৃষ্ট আমল। তাহাজ্জুদ নামাজের সঙ্গে সেহরির কার্যত, শব্দগত ও অর্থগত মিল বা সম্পর্ক রয়েছে। হজরত আলী (রা.) বলেন: যারাই আলস্নাহর নৈকট্য লাভে ঊর্ধ্বারোহণ করেছেন; তারাই সাহার বা শেষ রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়েছেন। (দিওয়ানে আলী (রা), নাহজুল বালাগা)। তাহাজ্জুদ নামাজের আগে-পরে সুরা মুজাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির, সুরা মুলক, সুরা ওয়াকিআহ, সুরা দুখান, সুরা আর রহমান, সুরা ইয়াসিন, সুরা হাশর ও সুরা কাহাফ এবং অন্যান্য সুরা তিলাওয়াত করা অত্যন্ত বরকতময় ও ফলদায়ক। এটি দোয়া কবুলের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়। প্রতি রাতে এ সময় আলস্নাহতাআলা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দার ফরিয়াদ শোনেন।

তাহাজ্জুদ নামাজ একা পড়াই উত্তম। তাই অন্য সব সুন্নত ও নফল নামাজের মতো তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা কিরাআত নিম্নস্বরে পড়তে হয় এবং এজন্য ইকামাতেরও প্রয়োজন হয় না।

তাহাজ্জুদ নামাজের কিরাআত হলো সবচেয়ে দীর্ঘ। এই নামাজে যত ইচ্ছা তত দীর্ঘ কিরাআত পাঠ করা যায়। এতে রাকাত দীর্ঘ করার জন্য এবং তিলাওয়াতের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য একই রাকাতে বিভিন্ন সুরা ও বিভিন্ন আয়াত পড়া যায় এবং একই রাকাতে একই সুরা বারবার অনেকবার পড়া যায়। নফল নামাজে কিরাআতে তিলাওয়াতের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি নয়। নফল নামাজে রুকু, সিজদাসহ প্রতিটি রুকন বা পর্ব দীর্ঘায়িত করা সুন্নত ও মোস্তাহাব। এজন্য রুকু ও সিজদায় তাসবিহ অনেক অনেকবার পড়া যায় এবং অন্যান্য পর্বে বেশি পরিমাণে বিভিন্ন দোয়া মাসুরা (যা কোরআন ও হাদিসে আছে) পাঠ করা যায়।

***********

\হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে