শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আরও এক সপ্তাহ বাড়তে পারে লকডাউন

ফয়সাল খান
  ১৯ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় চলমান সর্বাত্মক লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বৃদ্ধি করার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। জীবন-জীবিকার তাগিদে বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করা এবং সংক্রমণ ঠেকাতে আরও কঠোর নির্দেশনার বিষয়ে নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে দ্বিমত থাকলেও লকডাউন দেওয়ার ব্যাপারে প্রায় সবাই একমত। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান লকডাউন নিয়ে আজ সোমবার পুনর্মূল্যায়ন বৈঠক হবে। এ বৈঠকে চলমান লকডাউনের বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা হবে। এরপর লকডাউন বাড়ানোর

\হবিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলমান লকডাউনের মেয়াদ বাড়তে পারে।

এরপর আবার শর্তসাপেক্ষে বিভিন্ন বিধিনিষেধ দিয়ে জনসমাগম রোধ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এভাবে পবিত্র ঈদুল ফিতর পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার প্রাথমিক পরিকল্পনাও রয়েছে। তবে পরিস্থিতির আলোকে এসব পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হলেও মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে কোনো দিক নির্দেশনা দেয়নি সরকার। ফলে মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যাচ্ছে না। জীবিকার তাগিদে সবাই বের হতে চাইছেন। ব্যবসায়ীরাও দোকান খুলতে চাইছেন।

সে ক্ষেত্রে আবার লকডাউন দিলে মানুষের জীবন জীবিকার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিধি-নিষেধ কিছুটা শিথিল করার পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ। আবার করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ও মৃতু্য আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় বিধি নিষেধগুলো আরও কঠোরভাবে বাস্তবায়নের কথাও বলছেন অনেকেই। কেননা গত তিন দিনে দেশে করোনায় ৩০৩ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতি উত্তরণে সঙ্গনিরোধের কোনো বিকল্প নেই। আর দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নই এর একমাত্র পথ। কেননা মানুষ নিজে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অভ্যস্ত না। তাই জনসাধারণকে সচেতন করতে প্রচারণার পাশাপাশি আইন প্রয়োগের পরামর্শ দেন তারা।

এ প্রসঙ্গে আলপাকালে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ যায়যায়দিনকে বলেন, প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃতু্যর হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে করোনা হাসপাতাল করাসহ চিকিৎসা ব্যবস্থা আধুনিকায়নে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে করোনার এই ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধ করতে না পারলে শুধুমাত্র চিকিৎসা দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো যাবে না। কিন্তু সরকার যে ১৩ দফা বিধি-নিষেধ দিয়েছে, তা মেনে চলতে সংক্রমণ কমে আসবে। আর সংক্রমণ কমাতে আপাতত এর কোনো বিকল্প নেই।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। মাঠপর্যায়ে এসব নির্দেশনার বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর গত ৫ থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত চলাচল ও কাজে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। এই বিধিনিষেধে ব্যবসায়ীদের চাপে ৯ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এর পর ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত 'সর্বাত্মক লকডাউন' ঘোষণা করা হয়।

এদিকে, চলমান লকডাউনে গণপরিবহণ ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে বেচাকেনা এবং যাতায়াতের জন্য দোকানপাট ও গণপরিবহণ চালু করার ব্যাপারে দাবি জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এরইমধ্যে দোকান খোলার অনুমতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ওই চিঠিতে ২২ এপ্রিল থেকে পাইকারি, খুচরা মার্কেট ও দোকান খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা। 'স্বাস্থ্যবিধি মেনে' সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ চেয়েছেন। এছাড়া দেশের ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬টি দোকানের ২ কোটি ১৪ লাখ শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-বোনাসের অর্ধেকের সমপরিমাণ ৪৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা ঈদের আগেই ঋণ প্রণোদনা হিসেবে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, গত বছর লকডাউনে ব্যবসায়ীদের ছয় থেকে সাত হাজার কোটি টাকার পুঁজি নষ্ট হয়েছে। এ বছরও ব্যবসায়ীরা রমজান ও ঈদে কিছুটা ব্যবসার আশায় ২০ থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু আকস্মিকভাবে লকডাউন ঘোষণা করায় তারা গত বছরের মতো পুঁজি হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন। এ অবস্থায় 'সীমিত পরিসরে' ব্যবসা করার সুযোগ না দিলে তারা পুঁজি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যাবেন।

এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন যায়যায়দিনকে বলেন, করোনার কারণে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। আমাদের ব্যবসায়ীরাও বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাই আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খুলতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি। আশা করি প্রধানমন্ত্রী আমাদের আবেদন সুবিবেচনা করবেন।

অন্যদিকে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের একটি সূত্রে জানা গেছে, করোনার সংক্রমণ ঠেকানো এবং মানুষের জীবন-জীবিকার কথা ভেবেই লকডাউন বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখা যায় কিনা সে বিষয়ে আজকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে লকডাউনের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য সরকারের জারি করা বিধিনিষেধ সবাইকে মানতে হবে। জনস্বাস্থ্যবিদদের পূর্বাভাসের বিষয়টি বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, লকডাউন বাড়ানোর পরামর্শ আছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবারের (আজ) সভার পর কী হবে, তা পরিপত্রের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে