রাজধানীর বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ নেমেছে অর্ধেকে

প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

রেজা মাহমুদ
গ্রীষ্মে প্রচন্ড উত্তাপ ও পবিত্র রমজান উপলক্ষে তরমুজের চাহিদা বেশ। তবে তরমুজের আকাশচুম্বি দাম তা এখন অনেকের সাধ্যের বাইরে। প্রতি পিস নয় এখন তরমুজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন চাহিদানুযায়ী সরবরাহ না থাকায় দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। শুধু তরমুজ নয় সরবরাহ ঘাটতিতে দাম বেড়েছে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের। রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজারের তথ্যানুযায়ী চলমান লকডাউনে সবজিসহ প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের সরবরাহ নেমেছে অর্ধেকে। রাজধানীর সবজি ও নিত্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজার। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সবজি, ডিম, কাঁচামরিচসহ সব ধরনের নিত্যপণ্য আসে এই বাজারে। গত ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ায় এই বাজারে সবজি ও অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ কমে গেছে অর্ধেকেরও বেশি। কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর নিত্যপণ্যের সকল পাইকারি বাজারের চিত্র প্রায় একই। পরিবহণ সংকট ও ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসছে না চাহিদা অনুযায়ী সবজি, মাছসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানায়, লকডাউনের পূর্বে প্রতিদিন দক্ষিণাঞ্চল থেকে যে পরিমাণ তরমুজবাহী ট্রাক আসত এখন তার অর্ধেকও আসে না। এই বাজারের তরমুজের আড়তদার রুস্তম গাজী জানায়, লকডাউনের আগে দিনে অন্তত দেড়শ থেকে দুইশ মণ তরমুজ তিনি বিক্রি করতেন। তবে লকডাউনের পর ৫০ মণ তরমুজও তার আরতে আসে না। আর যে পরিমাণ পণ্য আসে তার পরিবহণ খরচ আগের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। মিরপুর ১ নম্বর শাহ আলী কাঁচাবাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যবসায়ী মোসলেম উদ্দিন জানায়, মিরপুরের সবচেয়ে বড় এই কাঁচাবাজারে সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ ৭০ ভাগ কমে গেছে। তিনি বলেন, বিদ্যমান লকডাউনের কারণে অনেকেই শহর ছেড়েছেন। যারা আছেন তারাও বাসা থেকে তেমন বের হচ্ছেন না। ফলে নিত্যপণ্যের চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। এছাড়াও ডাউন ট্রিপে পণ্যবাহী ট্রাক ফাঁকা থাকায় দক্ষিণ অঞ্চল ও দূরের পণ্য নিয়ে আসতে রাজি হচ্ছে না বেশির ভাগ ট্রাক চালকরা। ফলে আগের তুলনায় বাড়তি ব্যয় করে বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্য আনতে হছে ব্যবসায়ীদের। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে ভোক্তাদের ওপর। এমন পরিস্থিতিতে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিয়ে পণ্য না আনায় সরবরাহ কমে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা। এদিকে কারওয়ান বাজারের ডিমের আড়তদার হাকিম প্রধান বলেন, প্রতিদিন সাভার, মানিকগঞ্জ, কুমিলস্না, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় ১০ লাখ পিস ডিম আসে এই বাজারে। কিন্তু করোনার লকডাউনে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখে। বিক্রি না হওয়ায় পাইকারিতে ডজন প্রতি দামও কমেছে প্রায় ১০ টাকা। কারওয়ান বাজারের সবজির আড়তদার শাহআলম জানায়, বেগুন, শসা, ঝিংগাসহ প্রায় সব ধরনের সবজি চাহিদার তুলনায় আমদানি কম। কয়েক দিন আগে সরবরাহ না থাকায় বেগুন খুচরা বাজারে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। আর পাইকারি বাজারে কেজি ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। তবে কয়েক দিন ধরে পরিবহণ সংকট কিছুটা কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারে বেগুনের কেজি ৫০ টাকায় নেমে এসেছে। এছাড়াও লকডাউনে দক্ষিণাঞ্চল থেকে সবজি আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আর যে সবজি আসে তার বেশির ভাগই ঢাকার আশপাশের এলাকার বলে জানান এই ব্যবসায়ী। অন্যদিকে সবজি সরবরাহ করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। পণ্য পরিবহণ ট্রাক সংকটের কারণে পাইকার আসতে না পারায় স্থানীয়ভাবে কম দামে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। অনেক ক্ষেত্রে সবজির দামের সঙ্গে গাড়ি ভাড়া সমন্বয় না হওয়ায় ক্ষেতেই ন্‌ষ্ট হচ্ছে কৃষকের সবজি। এদিকে সামুদ্রিক মাছের বড় বাজার চট্টগ্রামের ফিশারিঘাট থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান ৫০ থেকে ৬০ টন সামুদ্রিক ও মিঠা পানির মাছ সরবরাহ হয়। লকডাউনের কারণে বর্তমানে এই সরবরাহ কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। রাজধানীর প্রায় ৬০ ভাগ মিঠাপানির মাছের জোগান হয় পদ্মার ওই পাড়ের বিভিন্ন এলাকার মৎস্য প্রকল্পগুলো থেকে। কারওয়ান বাজারের মাছের আড়তদাররা জানায়, করোনা লকডাউনে মাছের দাম এবং চাহিদা কমে যাওয়ায় এই সংখ্যা নেমে এসেছে একশর নিচে। অন্যদিকে মাছের খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুই দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মৎস্যচাষিরা। ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, লকডাউনের আগে রুই মাছ প্রতি মণ বিক্রি হতো গড়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৮ হাজার টাকায়। অন্যান্য মাছের ক্ষেত্রেও মণপ্রতি দাম কমেছে প্রায় ১ হাজার টাকা। অন্যদিকে পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধি ও সংকটে বিপাকে মৎস্য উৎপাদকরা। এছাড়াও মাছ সংরক্ষণ করতে না পারায় বিভিন্ন জেলার মৎস্য খামারিদের গুনতে হচ্ছে বড় অংকের লোকসান। তবে অন্যান্য পণ্যের তুলনায় মাছের বাজার তুলনামূলক স্থিতিশীল বলে জানান এই ব্যবসায়ী।