শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভর্তিতে বাধ্যতামূলক হচ্ছে জন্মসনদ! শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি

আমানুর রহমান
  ২২ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এখন থেকে শিক্ষার্থীদের এই সনদ অনুযায়ী ভর্তি, পরীক্ষার নিবন্ধন ও ফরম পূরণ করতে হবে। কোনোভাবেই জন্মনিবন্ধন সনদের বাইরে বয়স নির্ধারণ করা যাবে না। সেই সঙ্গে ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের বয়স কমানোর 'অনৈতিক প্রবিধান'টিও বাতিল হতে যাচ্ছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিধানটি বাতিল করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এদিকে, সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক এবং বয়সের প্রবিধানটি বাতিলের সুপারিশ করেছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জন্ম ও মৃতু্য নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সুপারিশের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে গত ১০ ডিসেম্বর একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জন্ম ও মৃতু্য নিবন্ধন জেনারেল রেজিস্ট্রার মানিক লাল বনিক জানান, জন্ম ও মৃতু্য নিবন্ধন হ

\হআইন ২০০৪ (সংশোধিত ২০১৩) অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়স প্রমাণের জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক। কিন্তু দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জন্মনিবন্ধন আইন অনুসরণ করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার ক্ষেত্রবিশেষ ভর্তির সময় জন্মনিবন্ধন সনদ ব্যবহার করা হলেও পঞ্চম, অষ্টম বা নবশ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের সময় জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী বয়স নির্ধারণ করা হচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীদের জন্মনিবন্ধন সনদ এবং শিক্ষা সনদে জন্মতারিখে গরমিল দেখা যাচ্ছে। যেজন্য হরহামেশাই জেলা-উপজেলা

\হপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট অফিসে জন্মনিবন্ধনের বয়স কমানোর জন্য চার থেকে পাঁচশ' আবেদন জমা পড়ে। এতে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের ওপর অযথা কাজের চাপ বাড়ছে। মূল কাজ ব্যাহত হচ্ছে এবং জন্মনিবন্ধন আইন বাস্তবায়ন বিঘ্নিত হচ্ছে। মেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই নীতিবহির্ভূত প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বেশি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষানীতি-২০১০ এর নির্দেশনা অনুসায়ী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির বয়স ছয় বছরের উপরে। সে হিসাবে একজন শিক্ষার্থীর ১১ বছর বয়সে পিএসসি, ১৪ বছর বয়সে জেএসসি এবং ১৬ বছরে বয়সে এসএসসি পাস করার কথা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে জন্ম ও মৃতু্য নিবন্ধন আইন, শিক্ষানীতি এবং ভর্তি নীতিমালা অমান্য করে শিক্ষার্থী ভর্তি এবং পাবলিক পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন সনদ এবং শিক্ষা সনদে জন্মতারিখের মধ্যে গরমিল দেখা যাচ্ছে। এই গরমিলের কারণে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ গমনেচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত বিপাকে পড়তে হচ্ছে। শিক্ষার সব সনদ এবং জন্মনিবন্ধন সনদের তথ্যে হেরফের হলে বিদেশে ভর্তির ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হয়। এ কারণে শিক্ষা সনদ সংশোধনের আবেদন বাড়ছে দিন দিন বোর্ডগুলোতে। এতে বোর্ডগুলোতেও কাজের চাপ বাড়ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, নীতিবহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থীর বয়স কমানোর এ প্রবণতা রোধে ১৯৬১ এর অধীনে ১৯৬৬ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধ্যাদেশটি বাতিলের সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত ১ এপ্রিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চিঠির সুপারিশ পর্যালোচনার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)-কে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাউশি'র মতামত পাওয়া গেলে 'ভর্তি এবং বদলি সংক্রান্ত প্রবিধান'টি বাতিল করার বিধিমত কার্যক্রম শুরু হবে। এটি যদিও শিক্ষা বোর্ডের বিষয়। মতামত পাওয়া গেলে বোর্ডকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে