করজে হাসানার প্রতিদান জান্নাত
প্রকাশ | ২৭ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
করোনাভাইরাসে স্থবির গোটা বিশ্ব; কর্মহীন বৃহৎ জনগোষ্ঠী। অসহায় হয়ে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষ। নিরুপায় হয়ে নিম্নমধ্যবিত্ত অনেকেই চড়া সুদের ফাঁস গলায় পরছেন। এ অবস্থায় আর্থিকভাবে বিপদগ্রস্ত আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী ও প্রতিবেশীদের পাশে দাঁড়ানো সচ্ছল মুসলমানদের জন্য করজে হাসানা বা উত্তম ঋণ (সুদমুক্ত ঋণ) দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। যা আর্থিক ইবাদতের মধ্যে ফজিলতপূর্ণ ইবাদত হিসেবে গণ্য। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের ৬টি আয়াতে মোট ১২টি স্থানে সুস্পষ্ট উলেস্নখ রয়েছে।
কোরআনে কারিমে ব্যবহৃত করজে হাসানা (উত্তম ঋণ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- আলস্নাহতায়ালার রাস্তায় খরচ করা, অভাবী, এতিম ও বিধবাদের ব্যয়ভার বহন করা, ঋণী ব্যক্তিদের ঋণ পরিশোধে সাহায্য করা এবং নিজ সন্তানাদি ও পরিবারের ওপর খরচ করা। কোনো অভাবীকে এই নিয়তে ঋণ দেওয়া যে, ওই ব্যক্তি যদি স্বীয় সামর্থ্যে ঋণ পরিশোধ করতে না
পারে, তবে তার কাছে আর চাওয়া হবে না। এটাও করজে হাসানার অন্তর্ভুক্ত।
আলস্নাহতায়ালা বলেন, 'এমন কে আছে, যে আলস্নাহকে করজ দেবে, উত্তম করজ? অতঃপর আলস্নাহতায়ালা তাকে দ্বিগুণ ও বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। আলস্নাহতায়ালাই সংকুচিত করেন আবার তিনিই প্রশস্ততা দান
করেন এবং তারই নিকট তোমরা ফিরে যাবে।' (সুরা আল বাকারা : আয়াত ২৪৫)
কোরআনে কারিমের অন্যত্র আরও ইরশাদ হচ্ছে, 'আলস্নাহ বলেন, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি; তোমরা যদি সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও, আমার রাসূলদের ওপর ইমান আন ও সম্মান কর এবং আলস্নাহকে উত্তম ঋণ প্রদান কর, তবে তোমাদের পাপ অবশ্যই মোচন করব এবং নিশ্চয়ই তোমাদের দাখিল করব জান্নাতে, যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। এর পরও কেউ কুফরি করলে সে তার সরল পথ হারাবে। (সুরা-মায়িদা, আয়াত-১২)
আরও ইরশাদ হচ্ছে, 'নিশ্চয়ই দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারীরা যারা আলস্নাহকে উত্তমরূপে ধার দেয়, তাদের দেওয়া হবে বহুগুণ এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার। (সুরা আল হাদিদ : আয়াত ১৮)
হজরত রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নামের ভাষ্য অনুযায়ী, দানের চেয়ে ঋণ প্রদানের গুরুত্ব বেশি। দানের সওয়াব দশ গুণ আর ঋণ প্রদানের সওয়ার আঠারো গুণ।
হজরত আবদুলস্নাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, যখন করজে হাসানা সম্পর্কে কোরআনে কারিমের আয়াত নাজিল হলো- তখন হজরত আবু দারদা আনসারি (রা.) হজরত রাসূলুলস্নাহ (সা.)-এর দরবারে হাজির হয়ে আরজ করলেন, হে আলস্নাহর রাসূল! আলস্নাহতায়ালা কি আমাদের কাছে ঋণ চান? উত্তরে হজরত রাসূলুলস্নাহ (সা.) বললেন- হ্যাঁ। তখন আনসারি সাহাবি বললেন, হুজুর! আপনার হস্ত মোবারক সামনে বাড়িয়ে দিন, আপনার হাতে হাত রেখে আমি একটি অঙ্গীকার করব। হজরত রাসূলুলস্নাহ (সা.) হাত বাড়িয়ে দিলেন। তখন হজরত আবু দারদা (রা.) হজরত রাসূলুলস্নাহ (সা.)-এর হাত ধরে অঙ্গীকার করেন, ইয়া রাসূলালস্নাহ! আমি আমার বাগান আলস্নাহতায়ালাকে করজ হিসেবে দিয়ে দিলাম। ওই বাগানে ৬০০ খেজুর গাছ ছিল এবং ওই বাগানে তার স্ত্রী-সন্তানও থাকত। তিনি হজরত রাসূলুলস্নাহ (সা.)-এর দরবার হতে উঠিয়ে নিজ বাগানে চলে গেলেন এবং স্বীয় স্ত্রীকে আওয়াজ দিয়ে বললেন, এই বাগান থেকে বের হয়ে এসো। এই বাগান আমি আমার রবকে করজ দিয়ে দিয়েছি। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
এই সব ব্যক্তির প্রশংসায় আলস্নাহতায়ালা বলেন, 'নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তারা নিজেদের ওপর অন্যদের প্রাধান্য দেয়।' (সুরা হাশর : আয়াত ৯)। সুরা তাগাবুন-এর ১৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, 'যদি তোমরা আলস্নাহকে উত্তম ঋণ দান কর, তবে তিনি তোমাদের জন্য তা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। আলস্নাহ গুণগ্রাহী ও ধৈর্যশীল। সুরা মুযযাম্মিলের ২০ নম্বর আয়াতে আলস্নাহ বলেন, 'অতএব সালাত কায়েম কর, জাকাত প্রদান কর এবং আলস্নাহকে দাও উত্তম ঋণ। তোমরা তোমাদের নিজেদের মঙ্গলের জন্য ভালো যা কিছু অগ্রিম প্রেরণ করবে; তা তোমরা পাবে আলস্নাহর কাছে উৎকৃষ্টতর এবং পুরস্কার হিসেবে মহোত্তম। আর তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর আলস্নাহর কাছে; নিশ্চয়ই আলস্নাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।'
বিত্তশালীরা করজে হাসানা নামক আর্থিক ইবাদতটি সম্পাদন করলে সমাজের অবহেলিত ও দারিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষগুলো নিজ পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ পায়। জাতীয় উৎপাদনে তারা তাদের কর্মশক্তি নিয়োগ করতে পারে। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলো শক্তি অর্জন করে অভাবের তাড়না থেকে মুক্তি পেতে পারে। সেই সঙ্গে যারা অসহায়ত্বের শিকার হয়ে সুদে ঋণগ্রহণ করে, তাদের সুদ নামক ভয়ানক অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে।