খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার তোড়জোড়

সবুজ সংকেতের অপেক্ষা এখতিয়ার আদালতের :স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবস্থা স্থিতিশীল :ফখরুল

প্রকাশ | ০৫ মে ২০২১, ০০:০০

হাসান মোলস্না
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত বিএনপি নেত্রীর শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় তাকে বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে দল ও পরিবারের সদস্যরা তৎপর চালাচ্ছেন। এ ব্যাপারে সরকারি মহলের এখনো দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ দেখা না গেলেও কী পদক্ষেপ অবলম্বন করলে খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন তা জানিয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকরাও খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরই দল ও পরিবারের সদস্যরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগী হন তারা। এজন্য সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে যোগাযোগও শুরু করে। সর্বশেষ গত সোমবার খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে সিসিইউতে নেওয়ার পর পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে তোড়জোড় বাড়িয়ে দেয়। সোমবার রাতেই দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফোনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিএনপি মহাসচিবকে জানান, বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি সরকারের নয়, আদালতের এখতিয়ার। এ ব্যাপারে আদালতে আবেদন করার পরামর্শ দেন। মঙ্গলবার রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, করোনায় আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে সরকারের কাছে কোনো ধরনের আবেদন করা হয়নি। দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা আদালতের ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রী যে ধারায় তার শাস্তি স্থগিত রেখে চিকিৎসার সুযোগ করে দিয়েছেন। আরও কিছু পেতে হলে তাকে আদালতের মাধ্যমেই আসতে হবে। এদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, মুক্তির নির্বাহী আদেশের একটি শর্ত শিথিল করলে খালেদা জিয়ার বিদেশে যেতে আইনগত কোনো বাধা থাকে না। এটা নির্ভর করছে একেবারেই সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর। কিন্তু এখনো তারা বিএনপি বা খালেদা জিয়ার পরিবারের তরফ থেকে এরকম কোনো আবেদন পাননি। অবশ্য সরকারের কাছে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য অনুমতি চেয়ে একটি আবেদন আগেই করা আছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়া জরুরি। এখন সরকারকেই তার দেওয়া নির্বাহী আদেশ সংশোধন করে বিদেশে যাওয়ার ওপর বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করলেই কেবল এটা সম্ভব। এটি সম্পূর্ণ সরকারের একক এখতিয়ার। বিএনপি কিংবা তার পরিবার কিংবা আইনজীবীদের এখানে কিছুই করার নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে নতুন করে আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তার পরিবার। সরকারের অনুমতি পাওয়ার সবুজ সংকেত পেলেই পরিবারের পক্ষ থেকে এই আবেদন করা হবে। করোনায় আক্রান্ত খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ার পর থেকেই তার পরিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে চাইছেন। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন মূলত সিঙ্গাপুর ও লন্ডনে নিয়মিত চিকিৎসা নিতেন। এজন্য তাকে এ দুটি দেশের যে কোনো একটিতে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন তারা। খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর বিষয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে কোনো কথা হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে শুধু জানানো হয়েছে। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে বলেন, তার অবস্থা আগের দিনের (সোমবার) চেয়ে ভালো আছেন। এখন অনেকটা স্থিতিশীল। তাকে দুই লিটার পরিমাণ অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য মেডিকেল বোর্ড বসে। রাত সাড়ে ৮টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বোর্ডের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে সিসিইউতেই রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড সদস্যরা। একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, আসলে আনুষ্ঠানিক কোনো বোর্ড ছিল না। তবে খালেদা জিয়ার রিপোর্ট পর্যালোচনার জন্য বসেছিলেন। এখন দুই লিটার অক্সিজেন চলছে। তবে তার অবস্থা স্থিতিশীল। বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার যা অবস্থা, তাতে চিকিৎসকরা চাচ্ছেন, হায়ার সেন্টারে (যেখানে সব ধরনের বিশেষ সুবিধা রয়েছে) নিতে। এখন বিদেশ নেওয়াটা তার পরিবারের বিষয়। প্রসঙ্গত, সোমবার সকালে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে বেগম জিয়াকে দ্রম্নত সিসিইউতে নেওয়া হয়। এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তির পর খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে। এ ছাড়া আগে থেকেই এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চার সদস্যের মেডিকেল টিম তার চিকিৎসা দিচ্ছেন। এই দুই মেডিকেল বোর্ড মিলেই হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। গত ১০ এপ্রিল করোনাভাইরাসের নমুনা জমা দেওয়া হলে ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার পজিটিভ রিপোর্ট আসে।