দ্রম্নত সিদ্ধান্ত :আইনমন্ত্রী মানবিক কারণে যেতে দিন :ফখরুল

খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা ইতিবাচক অবস্থানে সরকার

প্রকাশ | ০৭ মে ২০২১, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার প্রস্তুতি দৃশ্যমান হয়েছে। বিএনপি নেত্রীর শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় তাকে বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে দল ও পরিবারের সদস্যরা তৎপরতা বাড়িয়েছেন। বিষয়টি এখন আর সরকারের সঙ্গে আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, ইতোমধ্যে বিদেশি দূতাবাসসহ সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোতে দাপ্তরিক কাজও শুরু হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আজকালের মধ্যে খালেদা জিয়া দেশ ছাড়তে পারেন- এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, পাসপোর্ট নবায়নসহ ব্যাপারে সব প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দল ও পরিবার। এখন শুধু সরকারের অনুমতির অপেক্ষা করছে তারা। অনুমতি পেলেই আবেদন করা হবে ভিসার জন্য। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য কোন দেশে পাঠানো হবে, তা এখনো আনুষ্ঠানাকিভাবে জানানো হয়নি। তবে যুক্তরাজ্যকে অগ্রাধিকার দিয়েই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এক বার্তায় বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই-কমিশনারের মুখপাত্র মেহের নিগার জেরিন জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া ভিসার আবেদন করলে যুক্তরাজ্য সরকার সেটি বিবেচনা করে দেখবে। খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতির বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, 'বেগজিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদনের বিষয়টি সরকার মানবিকভাবেই বিবেচনা করছে। খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।' আইনমন্ত্রী আরও জানান, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে আবেদনের ফাইল পর্যালোচনা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এর আগে সকালের দিকে আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার আবেদন গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। সচিবের কাছ থেকে ফাইল আসার পরে আইনে কি বলে সেটা দেখেই সিদ্ধান্ত জানানো হবে। খালেদা জিয়াকে দুটি শর্তে শাস্তি স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ৪০১ ধারার শর্ত মেনে বিবেচনার সুযোগ আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। এদিকে, বুধবার খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আবেদন করেন তার ছোটভাই শামীইস্কান্দার। ওইদিন রাত সাড়ে ৮টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় আবেদনটি নিয়ে যান তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আবেদনটি পেয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার প্রয়োজন হলে বিষয়টি আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখব। গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসা 'ফিরোজায়' তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এফএসিদ্দিকীর নেতৃত্বে চিকিৎসা শুরু হয়। করোনা আক্রান্তের ১৪ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়ার করোনা টেস্ট করা হলে ফলাফল আবারও পজিটিভ আসে। এরপর কিছু পরীক্ষার জন্য তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রথদফায় পরীক্ষা করে বাসায় ফেরার পর দ্বিতীয় দফায় ২৭ এপ্রিল তাকে ফের হাসপাতালে নেওয়া হয়। গত সোমবার ভোরের দিকে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন। বেগজিয়ার করোনার নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে বলে গতকাল জানিয়েছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন। তবে তিনি পোস্ট কোভিড জটিলতায় ভুগছেন বলে জানান তিনি। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের করোনার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তার ফুসফুস থেকে তরল জাতীয় পদার্থ (ফ্লুইড) অপসারণ করা হয়েছে। তার ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। এর মাত্রা ওঠানামা করছে। এছাড়া অক্সিজেনের মাত্রাও কিছুটা কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার জোর আলোচনা শুরু হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাআলমগীর গত সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে টেলিফোনে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার বিষয়ে আলাপ করেন। এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার সুপারিশ করেন। গতকালও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাআলমগীর হাসপাতালে যান এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে দলের চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন। সরকারের নির্বাহী আদেশে গত বছর ২৫ মার্চ মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর তার মুক্তির মেয়াদ দুই দফা বাড়ানো হয়েছে। যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছিল সরকার তাতে শর্ত ছিল তিনি বিদেশে যেতে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন না। এখন তাকে বিদেশ যেতে হলে সরকারের নির্বাহী আদেশের শর্ত শিথিল করতে হবে। প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সরকার সেই শর্তটি শিথিল করলে খালেদা জিয়ার বিদেশে যেতে আইনগত কোনো বাধা থাকে না। এটা নির্ভর করছে একেবারেই সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর। এর আগে গত বছর মার্চে বিদেশে চিকিৎসার জন্য মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছিল খালেদা জিয়ার পরিবার। এদিকে বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে খালেদা জিয়ার এমআরপি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হয়েছে। নিয়অনুযায়ী পাসপোর্টের জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট ও আবেদনকারীর স্বাক্ষর থাকা বাধ্যতামূলক হলেও বেগজিয়ার ক্ষেত্রে সেই শর্ত শিথিল করা হয়েছে। দ্রম্নততসময়ের মধ্যেই সেটি দেওয়া হবে। ২০১৯ সালে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বিএনপি নেত্রীর। বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, দন্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তার পক্ষে আবেদন করা হয়েছে। নিয়অনুযায়ী তিনি দ্রম্নততসময়ে পাসপোর্ট পাবেন। একদিনের কর্মসূচি : খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় একদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ শুক্রবার বাদ জুমা সারাদেশে মসজিদে দোয়া মাহফিল ও বিভিন্ন উপাসনালয়ে প্রার্থনার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাআলমগীর বৃহস্পতিবার কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, পোস্ট কোবিড জটিলতায় রোগীর অবস্থা মাঝে মাঝে বিভিন্ন দিকে টার্ন নেয়। এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার বয়স ও বিভিন্ন রোগের কারণে এবার তার সেই জটিলতা তৈরি হচ্ছে। 'মানবিক' কারণে বিদেশে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিন। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত দলীয় নেতাকর্মীদের পরিবারকে ঈদ উপহার প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব বলেন। বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর বিএনপির ১০জন নেতাকর্মীর পরিবারকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদের উপহার তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।