মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আলস্নাহর জিকিরেই আত্মার প্রশান্তি

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৭ মে ২০২১, ০০:০০

আলস্নাহর স্মরণ বা জিকির বিষণ্নতা দূর করে মানসিক উত্তেজনা কমায়, হতাশা দূর করে, দুশ্চিন্তামুক্ত রাখে, রোগ নিরাময় করে এবং আত্মার প্রশান্তি এনে দেয়। সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, 'তিনি তাদেরকে তাঁর পথ দেখান, যারা তাঁর অভিমুখী, যারা ইমান আনে এবং আলস্নাহর স্মরণে যাদের চিত্ত-প্রশান্ত হয়। জেনে রাখ, আলস্নাহর স্মরণেই চিত্ত-প্রশান্ত হয়।' (সুরা রা'দ, আয়াত: ২৭-২৮)

সুরা আল-আনকাবুতার ৪৫ নম্বর আয়াতে জিকির সম্পর্কে বলা হয়েছে, 'নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং আলস্নাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ।'

পবিত্র কোরআনে জিকির শব্দটি বহু জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ স্থানে পৃথক পৃথক অর্থে শব্দের ব্যবহার হয়েছে। আল-কোরআনে জিকির শব্দ সর্বমোট ২৬৮ বার এসেছে। ১৫৪ বার এসেছে ক্রিয়া (ফেয়েল) হিসেবে আর ১১৪ বার এসেছে বিশেষ্য (ইসম) হিসেবে। (সূত্র : ইসলাওয়েব, 'লফযুজ জিকরি ফিল কোরআন')

জিকির শব্দের প্রথও প্রধান অর্থ হলো মৌখিকভাবে আলস্নাহর স্মরণ বা জিহ্‌বার জিকির। আলস্নাহ বলেন, 'যখন

তোমরা নামাজ সমাপ্ত করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আলস্নাহর জিকির (তাসবিহ-তাহলিল) পাঠ করবে।' (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৩)। অন্য আয়াতে এসেছে, 'হে ঈমানদাররা, তোমরা বেশি বেশি আলস্নাহর জিকির করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় আলস্নাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো।' (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪১)

জিকির শব্দের দ্বিতীয় অর্থ হলো, উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ। আলস্নাহ বলেন, 'তুউিপদেশ দিতে থাকো। কেননা জিকরা বা উপদেশ ঈমানদারদের উপকারে আসে।' (সুরা : জারিয়াত : আয়াত : ৫৫)

জিকির শব্দের তৃতীয় অর্থ হলো স্মরণ করা। পবিত্র কোরআনে এসেছে : 'তারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের ওপর অবিচার করলে আলস্নাহর জিকির করে (আলস্নাহকে স্মরণ করে) এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আলস্নাহ ছাড়া কে পাপ ক্ষমা করবে?' (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৫)

জিকির শব্দের চতুর্থ অর্থ আনুগত্য। আলস্নাহ বলেন, 'তোমরা আমাকেই স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না।' (সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৫২)

জিকির শব্দের পঞ্চঅর্থ কোরআন। মহান আলস্নাহ বলেন, 'এটা বরকতময় জিকির (কোরআন)। আতিা অবতীর্ণ করেছি। তবু কি তোমরা তা অস্বীকার করবে?' (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৫০)

জিকিরের ষষ্ঠ অর্থ মর্যাদা ও গৌরব। আলস্নাহ বলেন, 'কোরআন তো তোমার ও তোমার জাতির জন্য জিকির বা সম্মানের বস্তু।' (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৪৪)

জিকির শব্দের সপ্তঅর্থ খবর ও সংবাদ। আলস্নাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, 'তারা তোমার কাছে জুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, আেিতামাদের কাছে তার জিকির (খবর বর্ণনা) করব।' (সুরা : কাহ্‌ফ, আয়াত : ৮৩)

জিকির শব্দের অষ্টঅর্থ শরিয়ত। পবিত্র কোরআনে এসেছে, 'যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের জিকির (শরিয়ত) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তিনি তাকে দুঃসহ আজাবে প্রবেশ করাবেন।' (সুরা : জিন, আয়াত : ১৭)

জিকির শব্দের নবঅর্থ লাওহে মাহফুজ (সংরক্ষিত ফলক)। আলস্নাহ বলেন, 'আিিজকির বা লাওহে মাহফুজের পর কিতাবে লিখে দিয়েছি, আমার যোগ্যতাসম্পন্ন (অথবা নেককার) বান্দারা পৃথিবীর অধিকারী হবে।' (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১০৫)

জিকির শব্দের দশঅর্থ নামাজ। হজরত দাউদ (আ.)-এর ঘটনা প্রসঙ্গে কোরআনে এসেছে, 'সে বলল, আেিতা আমার প্রতিপালকের জিকির (নামাজ) থেকে বিমুখ হয়ে ঐশ্বর্যপ্রীতিতে মগ্ন হয়ে গেছি। এদিকে সূর্য অস্তমিত হয়ে গেছে।' (সুরা : সাদ, আয়াত : ৩২)

আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) নিজেও সর্বক্ষণ আলস্নাহর জিকিরে মশগুল থাকতেন। তিনি তার সাহাবীদেরও ব্যাপারে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন হাদিসে সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে।

যখন কোনো সমাবেশে সমবেতরা আলস্নাহকে স্মরণ (জিকির) করতে থাকে, তখন ফেরেশতারা তাদের ঘিরে রাখে, তারা আলস্নাহর রহমতের ছায়ায় চলে আসে। তাদের মন ও আত্মা প্রশান্তিতে তৃপ্ত হয়। আলস্নাহ তার কাছে সমবেতদের মাঝে এই স্মরণকারীদের প্রশংসা করেন। (আবুল সাঈদ খুদরী (রা.) মুসলিম।)

অপর এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আলী (রা.) জানতে চাইলেন- আলস্নাহর পথে এগোনোর সংক্ষিপ্ত উপায় কী, যা বান্দার জন্য সহজ আর মহান আলস্নাহর কাছে মর্যদাপূর্ণ? জবাবে নবীজী (সা.) বললেন, হে আলী! তোমাকে তাহলে ক্রমাগত জিকির করতে হবে- কখনো নীরবে, কখনো সরবে। হযরত আলী (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে জিকির করব? নবীজী (সা.) বললেন, চোখ বন্ধ করো। আমার কথা শোনো। তিনবার বলো, 'লা ইলাহা ইলস্নালস্নাহ।' সূত্রটি তিনবার বলো যাতে আশিুনতে পাই। (আলী ইবনে আবু তালিব (রা.), তাবারানী)

জিকিরের পুরস্কার সম্পর্কেও হাদিসে যে তথ্য রয়েছে, সেটি হলো- 'হে আলস্নাহর রাসুল! জিকির মজলিসের পুরস্কার কী? নবীজী (সা.) বললেন, 'জিকিরের মজলিসের পুরস্কার হচ্ছে জান্নাত।'

অপর এক হাদিসে সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, কোন ধরনের যোদ্ধারা সর্বোচ্চ পুরস্কার পাবে? নবীজী (সা.) বললেন, যারা আলস্নাহর জিকির সবচেয়ে বেশি করে। এরপর তাকে নামাজ যাকাত হজ সাদাকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। প্রতিবারই তিনি একই জবাব দিলেন- যারা সবচেয়ে বেশি আলস্নাহর জিকির করে। তখন আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.) বললেন, জিকিরকারীরাই তো সব কল্যাণ নিয়ে গেল। নবীজী (সা.) যোগ করলেন, 'একদঠিক।' (মুয়াজ ইবনে জাবল (রা.); আহমদ)

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে