টিকাকেন্দ্রে ভিড়, লঙ্ঘিত স্বাস্থ্যবিধি

প্রকাশ | ১১ মে ২০২১, ০০:০০

হাসান আরিফ
কোভিড-১৯ দ্বিতীয় ডোজের টিকা প্রাপ্তির অনিশ্চয়তার কারণে টিকাকেন্দ্রে অতিরিক্ত ভিড় হচ্ছে। সামাল দিতে পারছেন না স্বাস্থ্যকর্মীরা। ফলে কেন্দ্রই করোনাভাইরাস ছড়ানোর উর্বর স্থানে পরিণত হয়েছে। এখানে স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোনো নিয়মনীতিই মানা হচ্ছে না। লঙ্ঘিত হচ্ছে ভাইরাস প্রতিরোধের সবকয়টি ধাপ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ লাখের বেশি মানুষের দ্বিতীয় ডোজ টিকা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সরেজমিন টিকাকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, টিকা সংকটের খবর ছড়িয়ে পড়ায় মোবাইলে মেসেজ না পেয়েও অনেকেই কেন্দ্রে চলে আসছেন। যারা আসছেন, তাদের কাউকেই ফেরানো হচ্ছে না। তবে টিকা নিতে শর্তজুড়ে দেওয়া হচ্ছে। সেটা হচ্ছে, সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সত্যায়িত করে আনতে হবে। ফলে সত্যায়িত করতে আরেক দফা ভিড় হচ্ছে সিটি করপোরেশনে। উভয় স্থানেই শারীরিক দূরত্ব নূ্যনতমও মানা হচ্ছে না। সবার মুখে মাস্ক থাকলেও অনেকেই সেটা থুতনির নিচে রাখছেন। এ বিষয়ে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধের যে কয়েকটি ধাপ রয়েছে, এর অন্যতম হলো শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। এক গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখলে ৬০ ভাগেরও বেশি সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। করোনাভাইরাস একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষে সর্বনিম্ন তিন ফুট ও সর্বোচ্চ ছয় ফুট পর্যন্ত দূরত্বে ছড়াতে পারে। তাই মানুষ-মানুষে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। দূরত্ব লঙ্ঘিত হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, রোববার পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯০০ জনকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৩৪ লাখ ৯৬ হাজার ১৮৬ জন। দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন ২৩ লাখ ২৩ হাজার ৭১৪ জন। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে রয়েছে ১০ লাখের কিছু বেশি টিকা। টিকার প্রথম ডোজ পাওয়া ১৩ লাখের বেশি মানুষের মধ্যে টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। তারা দ্বিতীয় ডোজ কবে পাবেন, সেটা স্পষ্ট করতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। উপজেলা-জেলা শহরের সরকারি হাসপাতালসহ সারাদেশে প্রায় এক হাজার কেন্দ্রে প্রতিদিন টিকা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক কেন্দ্রে টিকার মজুত কমে আসছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার একজন জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেছেন, প্রথম ডোজ দেওয়া সব মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই স্স্নিপের তারিখ অনুযায়ী টিকা গ্রহীতারা টিকা নিতে চলে আসছেন। তারা মোবাইলের মেসেজের জন্য অপেক্ষা করছেন না। ফলে মানুষের ভিড় সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এরপরও কাউকে ফেরানো হচ্ছে না। শুধু সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সত্যায়িত করে আনার জন্য বলা হচ্ছে। সত্যায়িত করে আনার পর টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে। টিকাকেন্দ্রে আসা কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের মনোভাব। তারা বলছেন, প্রথম ডোজ নেওয়ার পর স্স্নিপে দ্বিতীয় ডোজের তারিখ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, মোবাইলে মেসেজ গেলেই টিকা নিতে আসতে। কিন্তু ভারত টিকা না দেওয়ায় সবাই টিকা পাবেন না বলে বলা হচ্ছে। তাই মোবাইলে মেসেজ না পেলেও স্স্নিপের তারিখ অনুযায়ী তারা টিকা নিতে চলে আসছেন। মোবাইলে মেসেজ না থাকায় তাদের সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সত্যায়িত করে আনতে হয়েছে। তবে টিকা দিতে আসা মানুষজনও ভিড়ের বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছেন না। তারাও বুঝতে পারছেন, এই ভিড়ে ভাইরাস ছড়াতে পারে। কিন্তু শেষ কথা হচ্ছে, টিকা তাদের দিতেই হবে। যা হওয়ার পরে হবে। জানা গেছে, দেশের অন্যতম বড় টিকাকেন্দ্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। এই কেন্দ্রে যে টিকা আছে, এতে ২০ মে পর্যন্ত টিকা দেওয়া অব্যাহত রাখা যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নতুন টিকা সরবরাহ না করলে এই কেন্দ্র থেকে প্রথম ডোজ টিকা নেওয়া প্রায় আট হাজার মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া সম্ভব হবে না।