শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
একদিনে শনাক্ত ২৫৭৬, মৃতু্য ৪০

২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা শনাক্ত ও মৃতু্য বেড়েছে

যাযাদি রিপোর্ট
  ১১ জুন ২০২১, ০০:০০

দেশে আগের দিনের তুলনায় করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ও মৃতু্য বেড়েছে। একই সঙ্গে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হারও প্রায় এক শতাংশ বেড়েছে। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের বেশ কয়েকটি সীমান্তবর্তী জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় মোট পরিসংখ্যানে এর বড় প্রভাব পড়েছে বলে জানা গেছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মোকাবিলায় সরকার সীমান্তের বেশ কয়েকটি জেলায় কঠোর লকডাউন এবং সারাদেশে বিধিনিষেধের কড়াকড়ি জারি করলেও সাধারণ মানুষের অসচেতনতা ও উদাসীনতার কারণে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৫৭৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সময় মৃতু্য হয়েছে ৪০ জনের। আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৩৭ জন। টানা ৪১ দিন পর এদিন শনাক্ত রোগী আড়াইহাজার ছাড়ায়। ওই সময় করোনায় মৃতু্য হয় ৩৬ জনের।

গত একদিনে যারা মারা গেছেন, তাদের ৩১ জন পুরুষ আর নারী ৯ জন। তাদের ৩১ জন সরকারি হাসপাতালে, ৬ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ৩ জন বাসায় মারা যান। মৃতদের মধ্যে ২২ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৮ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৭ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর, ১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর, ১ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ এবং ১ জনের বয়স ১০ বছরের কম ছিল।

নতুন শনাক্তদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে

মোট ৮ লাখ ২০ হাজার ৩৯৫। মোট মৃতু্য হয়েছে ১২ হাজার ৯৮৯ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬৩০ জন।

শেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৯ হাজার ৪৪৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মৃতু্য হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে, ১২ জনের। এরপর ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে ৮ জন করে, খুলনা বিভাগে ৬ জন, রংপুরে ৪ জন ও সিলেটে ২ জনের মৃতু্য হয়েছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে রাজশাহী বিভাগে ৮১৫ জন। এরপর খুলনা বিভাগে ৫৭৮, ঢাকা বিভাগে ৫১৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৩৭, রংপুর বিভাগে ১৩০, ময়মনসিংহ বিভাগে ১১৯, সিলেট বিভাগে ৯২ এবং বরিশাল বিভাগে ৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত ২৪ ঘণ্টার পরিসংখ্যান চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মোট শনাক্ত হওয়া দুই হাজার ৫৭৬ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। এ বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে পাঁচ হাজার ১১০টি, তার মধ্যে করোনায় শনাক্ত হয়েছেন ৮১৫ জন। এরপর রয়েছে খুলনা বিভাগ। এ বিভাগে এক হাজার ৪৮৫টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত হয়েছেন ৫৭৮ জন। ঢাকা বিভাগে পরীক্ষা হওয়া আট হাজার ৬৮৭ জনের মধ্যে শনাক্ত হয়েছেন ৫১৩ জন, এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। দুই হাজার ৪০৩টি পরীক্ষার বিপরীতে এখানে শনাক্ত হয়েছেন ৩৩৭ জন, এরপর রংপুর বিভাগে পরীক্ষা হওয়া ৪১৬টি পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত হয়েছেন ১৩০ জন, সিলেট বিভাগে ৫২৪টি নমুনার বিপরীতে শনাক্ত হয়েছেন ৯২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৪৪টি পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত হয়েছেন ৬২ জন আর বরিশাল বিভাগে ২৬৮টি পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত হয়েছেন ৪৯ জন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। পরে তা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। তারপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। গত বছরের শেষদিকে এসে সংক্রমণ কমতে থাকে।

এ বছরের মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণ আবার বেড়ে যায়। মার্চের প্রথমার্ধেই দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজারের ওপর চলে যায়। বাড়তে থাকে মৃতু্যর সংখ্যাও। গত ২৬ মার্চের বুলেটিনে আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ জনের মৃতু্য খবর দেওয়া হয়, সেখানে ১৯ এপ্রিলের বুলেটিনে আগের ২৪ ঘণ্টায় ১১২ জনের মৃতু্যর কথা জানানো হয়। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ওইদিনই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের মৃতু্য হয়।

করোনা সংক্রমণ ও মৃতু্য বাড়তে থাকায় ৫ এপ্রিল থেকে মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা এখনো বহাল। এ বিধিনিষেধের মধ্যে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।

তবে গত মাসের মাঝামাঝিতে পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে 'লকডাউন' ঢিলেঢালা হয়ে পড়ে। ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটা ও যাতায়াতে বিপুল লোকসমাগম দেখে জনস্বাস্থ্যবিদরা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আশঙ্কা করেছিল, ঈদের পর সংক্রমণ আবার বেড়ে যাবে। এদিকে ভারত সীমান্তবর্তী ১৫টি জেলায় রোগী দ্রম্নত বাড়ছে। কিছুদিন ধরে সারাদেশেও করোনা সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে