শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নারী কর্মকর্তায় আপত্তি 'বিস্তারিত দেখবে' সরকার নিন্দা বিভিন্ন সংগঠনের

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ জুন ২০২১, ০০:০০

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের 'গার্ড অব অনার' দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী কর্মকর্তাদের বাদ রাখতে সংসদীয় একটি কমিটির সুপারিশ 'বিস্তারিত' জেনে দেখবেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে একথা জানান।

তখন মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'এটা তো সামারি বললেন। মিটিংয়ে কী বলেছেন, সেটা দেখতে হবে। অনেক সময় কোর্টে কোনো পক্ষ হাইকোর্টের রুলিং দেখিয়ে বলেন, রুটিংয়ে এটা আছে, পড়ে শোনাতে বলার পর দেখা যায় ইম্স্নিকেশনটা উল্টো।'

এরপর

কুরআন-হাদিসের কিছু বিষয় তুলে ধরে সেগুলো উল্টোভাবে বিশ্লেষণ করা যায় বলে উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, 'হাদিসে যেসব রয়েছে অনেক সময় ইম্স্নিকেশন উল্টো হয়। রাষ্ট্র যে আদেশ দেবে, সেটা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। কল্যাণকর যদি আদেশ দেয়, সেটা মেনে চলতে হবে।

তিনি বলেন, 'আমাকে জানতে হবে। গার্ড অব অনার নিয়ে কেন বলেছেন, জানি না। ধর্মীয় বিধান নিয়ে যদি বলত, তাহলে বলা যেত। লেট আস সি।'

এদিকে সংসদীয় কমিটির এ প্রস্তাবের বিষয়ে ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি একে 'মৌলবাদের সাপকে বের করতে চাওয়া' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

সিপিবির নারী সেল এমন প্রস্তাব সংবিধান লঙ্ঘন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি বলে 'ষড়যন্ত্রকারীদের' ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে।

প্রস্তাবটিকে সংবিধানবিরোধী, চরম নারীবিদ্বেষী, বৈষম্যমূলক ও কুৎসিত বলে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।

সংসদীয় কমিটির এমন প্রস্তাবে স্তম্ভিত হয়েছেন জানিয়ে রাশেদ খান মেনন বলেছেন, 'এ ধরনের সুপারিশ কেবল দুঃখজনকই নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী।'

এই ধরনের সুপারিশকে স্বাধীন বাংলাদেশে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য, সংবিধান, নারীর মানবাধিকার ও ক্ষমতায়নের পরিপন্থি বলে মন্তব্য করে সুপারিশের বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

প্রস্তাবটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরাও। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম, অ্যাডভোকেট আইনুন্নাহার সিদ্দিকা লিপি, ব্যারিস্টার অনিক আর হকসহ ১৭ আইনজীবী সোমবার এক বিবৃতিতে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন জাতীয় সংসদের সদস্য হয়ে নারীর প্রতি এমন অবমাননাকর সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ করা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি ও সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল।

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এমন প্রস্তাব গ্রহণ করায় বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে এ ধরনের আত্মঘাতী উদ্যোগ নেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা।

সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার পর তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায় সংশ্লিষ্ট জেলা/উপজেলা প্রশাসন। ডিসি বা ইউএনও সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে থাকেন। কফিনে সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মকর্তা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

অনেক স্থানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে নারী কর্মকর্তারা রয়েছেন, আর সেখানেই আপত্তি তুলেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

রোববার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা ওঠার পর সরকারের কাছে সুপারিশ রাখা হয়েছে গার্ড অব অনার দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী ইউএনওদের বিকল্প খুঁজতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে