এডিপিতে বরাদ্দ বাড়লেও সক্ষমতায় নিম্নমুখী মন্ত্রণালয় ও বিভাগ

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০২১, ০০:০০

হাসান আরিফ
মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় উন্নয়ন বরাদ্দও বেড়েছে। কিন্তু বরাদ্দ অনুযায়ী ব্যয় করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারছে না মন্ত্রণালয়-বিভাগগুলো। বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এই ধারা দেশের জন্মলগ্ন থেকেই চলে এসেছে। ফলে প্রতি বছরই সংশোধিত বাজেটে উন্নয়ন বরাদ্দ কমিয়ে দিতে হচ্ছে। আর চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে গত পাঁচ অর্থবছরের একই সময়ের মধ্যে তা সর্বনিম্ন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে রাজস্ব আয় কম হওয়া এবং উন্নয়ন কর্মসূচি যথাযথভাবে পরিচালনার সুযোগ না হওয়ায় মোট বাস্তবায়ন কম হয়েছে। তারা বলছেন, একটি দেশের উন্নয়ন দেখেই বোঝা যায় দেশটি কতটা সমৃদ্ধ আর উন্নত। বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের থাকা অবস্থায় দেশের উন্নয়নে ব্যাপক অর্থ বরাদ্দ দিয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় প্রতিনিয়তই বরাদ্দ বাড়ছে। এখন আমরা মধ্যম আয়ের দেশের নাগরিক। তাই বরাদ্দের সঙ্গে পালস্না দিয়ে ব্যয় করার সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে গুণগত মান নিশ্চিত করে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ধরা হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে নির্ধারণ করা হয়েছিল দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। তবে ব্যয় করতে না পারায় ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে তা সংশোধন করে এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকায় কমিয়ে আনা হয়েছিল। তারপরও সব অর্থ ব্যয় করতে পারবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। চলতি অর্থবছর এডিপি বরাদ্দের মাত্র ৪২ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। বাকি তিন মাসে ব্যয় করতে হবে ৫৮ শতাংশ। যা কোনোভাবেই সম্ভব না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে হিসাব অনুযায়ী উন্নয়ন বরাদ্দের এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী খরচ হয়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী খরচ হয়েছে এক লাখ ৩৩ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী খরচ হয়েছে ৯৫ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী খরচ হয়েছে ৮১ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এডিপি বরাদ্দ রাখা অর্থের মাত্র ৪১ দশমিক ৯২ শতাংশ ব্যয় করেছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো, যা গত পাঁচ অর্থবছরের একই সময়ের মধ্যে শতাংশের হিসাবে সর্বনিম্ন। টাকার অঙ্কে জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো এডিপি বাস্তবায়নে মোট ৮৭ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। শুধু মার্চ মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ১৫ হাজার ১৩১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে, যা গত অর্থবছরের মার্চের তুলনায় বেশি। আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হলেও এ খাতে ব্যয়ের দুর্বলতা রয়েই গেছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য ৪৮টি প্রকল্পের বিপরীতে এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই-মার্চ সময়ে ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এডিপির মাত্র ২১ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। গত মার্চ পর্যন্ত এ বিভাগ মাত্র ৭৭৯ কোটি টাকা ব্যয় করতে পেরেছে, যা মোট বরাদ্দের ৪১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বরাদ্দের অংশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের ৬৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। এছাড়া উলেস্নখযোগ্য ব্যয় করেছে বিদু্যৎ বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, আইএমইডি, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও সংসদ সচিবালয়। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অর্ধেকের বেশি ব্যয় করেছে। চলতি অর্থবছরের শুরুতে করোনার প্রভাবে আশানুরূপ রাজস্ব আয় না হওয়ায় ব্যয় সাশ্রয়ী নীতি নেয় সরকার। তখন এডিপির বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ ব্যয় করার নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর আগে নির্দেশনা ছিল ৭০ শতাংশ ব্যয় করার। যাতে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে অর্থ খরচ না করা হয়।