বর্ষার প্রথম দিন আজ

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০২১, ০০:০০

বিশেষ প্রতিনিধি
'বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল' দিয়ে প্রণয় নিবেদনের দিন আজ। পঞ্জিকার হিসাবে পহেলা আষাঢ়। মানে বর্ষা ঋতুর প্রথম দিন। বর্ষা বাঙালির প্রেম, কৃষ্টি, আনন্দ, বেদনা, উৎসব, ব্যবসা-বাণিজ্য, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে জাগিয়ে তুলে। বর্ষায় সজীব হয়ে উঠবে বাংলার প্রকৃতি। বর্ষা নবধারা জলে ভিজে শীতল হওয়ার আহ্বান জানাবে প্রকৃতিকে। বর্ষার দূত কদম ফুল ফুটতে শুরু করেছে। এ ঋতুর রূপ-ঐশ্বর্যে মুগ্ধ হয়ে অনেক কবি বাংলা সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন। বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণেই স্বতন্ত্র। ষড়ঋতুর এ দেশে বর্ষা অনন্য, তার রূপের সৌন্দর্যে। প্রকৃতি সাজে নবযৌবনের রূপে। পুষ্পে-বৃক্ষ, পত্রপলস্নবে পায় নতুন প্রাণের সুর। চারদিকে যেন নব উচ্ছ্বাসের জোয়ার জাগে। 'বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এলো বান, শিব ঠাকুরের বিয়ে হবে তিন কন্যা দান'। বর্ষা নিয়ে কাব্যের অভাব নেই বাংলা সাহিত্যে। বাঙালি মননে সবচেয়ে বেশি রোমান্টিকতা-আধ্যাত্মিকতার সুর বাজে বর্ষায়। সাহিত্যজুড়ে তারই প্রমাণ মিলে। বর্ষার আগমনের শুরু থেকে মূষলধারে ঝরে বৃষ্টি। বর্ষার নবধারা জলের সঙ্গে সঙ্গে নেচে ওঠে প্রকৃতি। নতুন প্রাণের আনন্দে অঙ্কুরিত হয় গাছপালা, ফসলের মাঠ। মাঠে মাঠে কৃষকের মুখে ফুটে ওঠে হাসি। বৃষ্টির রিমঝিম ধ্বনিতে পেখম মেলে ময়ূর। নদী- নালা, খাল-বিল ফিরে পায় প্রাণের ছোঁয়া। মৃত খাল-বিলগুলোও যেন বেঁচে থাকার স্পদনে জেগে ওঠে। গ্রামের মাঠঘাটগুলো বর্ষার ছোঁয়ায় জল থই থই করে। নতুন পানিতে মাছ ধরার ধুম পড়ে, বর্ষার অফুরন্ত জলে কৃষক আমনের ধান বুনতে বুনতে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখেন। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বজ্রপাত শুরু হলে মাছ, ব্যাঙ ও সরীসৃপ প্রাণীদের প্রজনন শুরু হয়। দেশের প্রধান তিনটি নদী পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদীগুলোতে মা-মাছ এসে ডিম পাড়ে। এ সময় পাট জাগ দিতে প্রয়োজন হয় পানির। মেঘদূত কাব্যে বহুকাল আগে কালিদাস মুগ্ধ হয়েছিলেন আষাঢ়ের রূপে। আষাঢ় শব্দে আছে স্বপ্নাবিষ্ট এক মোহমুগ্ধতা। গানে-কবিতায় বাংলার কবিরা করেছেন বর্ষা-বন্দনা। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। শত ঘটনার ভিড়েও কোথায় যেন মেলে এক চিলতে বিশুদ্ধ সুখ। আষাঢ়েই শোনা যায় রিমঝিম বৃষ্টির ছন্দ। বর্ষার উৎস দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এর মধ্যেই গতি পেয়েছে। বাংলাদেশের ওপর পুবালি লঘুচাপ প্রভাব ফেলেছে। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আগাম বৃষ্টি হতে শুরু করেছে। এবার আবহাওয়ার ব্যাকরণ মেনেই সঠিক পথ ধরে বর্ষা এগিয়ে আসছে। বর্ষা ভুল পথে গেলে, আরও কয়েকদিন অসহ্য গরমে পুড়তে হতো মানুষ ও প্রাণিকুলকে। কেয়া আর কেতকীর নয়নাভিরাম রূপের পেখম খোলা ময়ূরের উচ্ছল নৃত্যের আবাহন নিয়ে আসে বর্ষা। ভারতের আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আন্দামান সাগর, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং সন্নিহিত বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা মেঘমালাটি রোববার রাতে দুইভাগে ভাগ হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর একটি অংশ আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বৃষ্টি নামিয়ে বঙ্গোপসাগর হয়ে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন উপকূল ধরে এগিয়ে আসে। এটি কক্সবাজার হয়ে সারাদেশে বৃষ্টি নামাবে। অপর দিকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরেকটি অংশ ভারত সাগরের উপকূল ধরে কেরালায় প্রবেশ করেছে। এর প্রভাবে আসাম, মেঘালয় এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। ভারতের আবহাওয়া দপ্তর বলছে, কেরালায় ঘনকালো মেঘে বর্ষা তার রং বদল করে নিতে শুরু করেছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরের মৌসুমি বায়ুর অক্ষ ভারতের ওডিশা ও উত্তর প্রদেশে সক্রিয় রয়েছে। ইতোমধ্যে মৌসুমি বায়ু অক্ষ ভারতের রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত হতে শুরু করেছে। উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত এ অক্ষ পর্যায়ক্রমে হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চলে আজ থেকে প্রবল বৃষ্টি ঝরাবে। এই অক্ষভুক্ত অঞ্চলেই ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা অববাহিকার শুরু।