ডিবি কার্যালয়ে পরীমনি

নাসির-অমি ৭ দিনের রিমান্ডে

তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল ৮ জুলাই ষ নাসির 'ভালো লোক'

প্রকাশ | ১৬ জুন ২০২১, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করতে মঙ্গলবার অভিনেত্রী পরীমনি ডিবি কার্যালয়ে হাজিরা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন -স্টার মেইল
চিত্রনায়িকা পরীমনির করা 'যৌন আক্রমণ ও হত্যাচেষ্টার' মামলায় মূল অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ পাঁচজনকে মাদক আইনে গোয়েন্দা বিভাগের করা আরেকটি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান অঞ্চলের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান জানান, নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে সাত দিন এবং তাদের সঙ্গে গ্রেপ্তার তিন নারী লিপি আক্তার, সুমি আক্তার ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধাকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের করা রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসি মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, নাসির ও অমিকে দশ কার্যদিবসের মধ্যে এবং তিন নারী আসামিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে রিমান্ডে নিতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে রিমান্ড বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে। আর নারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে নারী পুলিশের উপস্থিতিতে। মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে গিয়ে ৮ জুন রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে সংঘটিত ঘটনার আদ্যোপান্ত খুলে জানান চিত্রনায়িকা পরীমনি। তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনার সঙ্গে আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তার সঙ্গীদের কার কী ভূমিকা ছিল সে ব্যাপারে গোয়েন্দাদের অবহিত করেন। এ সময় তার সঙ্গে ডিবি কার্যালয়ে পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী, কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ করিম জিমি উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিবির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, 'আমরা পরীমনিকে ডিবি অফিসে আসতে বলেছিলাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে এসেছেন। ওই রাতের ঘটনার ব্যাপারে তিনি সবিস্তারে খুলে জানিয়েছেন। আমাদের কিছু জিজ্ঞাসা ছিল, সে ব্যাপারে আমরা তার কাছ থেকে তথ্য নিয়েছি। যেকোনো মামলা হলেই আমরা বাদীর সঙ্গে কথা বলি। এক্ষেত্রেও আসামিদের বিষয়ে ও পরীমনির পর্যবেক্ষণ জানতে তাকে আসতে বলা হয়েছিল।' ডিবি কার্যালয়ে পরীমনির কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের সময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) যুগ্ম কমিশনার হারুন-অর-রশিদ সেখানে ছিলেন। তিনি তাকে মামলাসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন করেন বলে জানা গেছে। এদিকে চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাভার থানায় দায়ের করা মামলায় আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৮ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত। আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখা থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহারের আদালত মামলাটির এজাহার গ্রহণ করেন। পরে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এ দিন ধার্য করেন। সোমবার নাসির উদ্দিন আহমেদ ও অমিসহ পাঁচজনকে উত্তরা থেকে আটক করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এর আগে সাভার থানায় নির্যাতন ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ অজ্ঞাত চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন নায়িকা পরীমনি। পরীমনি নিজে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহারে পরীমনি বলেন, 'গত ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি (৩০), অমি (৪০) ও বনিসহ (২০) দুটি গাড়িযোগে উত্তরার উদ্দেশে রওনা হই। পথে অমি বেড়িবাঁধস্থ ঢাকা বোট ক্লাবে তার দুই মিনিটের কাজ আছে বলে জানায়। অমির কথামতো সবাই রাত আনুমানিক ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করাই। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। পরে আমার ছোট বোন বনি প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে বোট ক্লাবে প্রবেশ করে ও আমরা বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করি। টয়লেট থেকে বের হতেই এক নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করে এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেয়। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ এক নম্বর আসামি মদপানের জন্য জোর করে। আমি মদপান করতে না চাইলে এক নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এতে আমার সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাত পাই।' এজাহারে তিনি আরও বলেন, 'এক নম্বর আসামি (নাসির উদ্দিন মাহমুদ) আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে এবং আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সে উত্তেজিত হয়ে টেবিলে থাকা গস্নাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুড়ে মারে। তখন কস্টিউম ডিজাইনার জিমি নাসির মাহমুদকে বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর এবং জখম করে।' এদিকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে চিত্রনায়িকা পরীমনির করা মামলার প্রধান আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদের পক্ষে সংসদে সাফাই গাইলেন জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু। মঙ্গলবার সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে চুন্নু তার দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসিরকে 'ভালো লোক' হিসেবে বর্ণনা করেন। সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী চুন্নু বলেন, 'গতকাল (পরশু) সংসদে একজন মাননীয় সদস্য নায়িকা পরীমনির জন্য বিচার চেয়েছেন। একজন গ্রেপ্তার হয়েছে। আমি তাকে চিনি। উত্তরা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ছিল। সেই লোকটি জাতীয় পার্টি করে। তিনি ভালো লোক।' তার কথা শেষ হওয়ার আগেই নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ায় তার মাইক বন্ধ হয়ে যায়। আবাসন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেওয়া নাসির জাতীয় পার্টির সভাপতিমন্ডলীর অন্যতম সদস্য। পরীমনি অভিযোগ করেছেন, গত ৮ জুন উত্তরার কাছের বিরুলিয়ায় ঢাকা বোট ক্লাবে তাকে 'ধর্ষণের চেষ্টা' করেন নাসির। তখন তাকে মারধরও করা হয়। তবে এই অভিনেত্রীর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নাসির। তিনি বলছেন, ক্লাবে সেদিন পরীমনি 'জোর করে দামি মদ নিতে গেলে' বাধা দিয়েছিলেন তিনি, তাতে এই অভিনেত্রী উত্তেজিত হয়ে তাকে 'আক্রমণ' করেছিলেন। পরে নিরাপত্তা রক্ষীরা এসে তাকে বের করে দেয়। নাসির মাহমুদ ঢাকা বোট ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ক্লাবটির কার্যনির্বাহী কমিটিরও সদস্য ছিলেন তিনি। গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে বহিষ্কার করা হয়। সোমবার সংসদে বিএনপির হারুনুর রশীদ পরীমনির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলেন।