মিলল ত্ব-হা, প্রশ্ন অনেক

ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যার কারণে তিন সঙ্গীসহ আত্মগোপনে ছিলেন

প্রকাশ | ১৯ জুন ২০২১, ০০:০০

রংপুর প্রতিনিধি
রংপুরে নিজ বাসায় ফেরার পর ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান
প্রায় ৮ দিন নিখোঁজ থাকার পর ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানকে খুঁজে পাওয়া গেছে। শুক্রবার ভোরে ফজরের নামাজ শেষে তিনি তার রংপুর শহরের বাসায় ফেরেন। জানা গেছে, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে গত কয়েকদিন স্বেচ্ছায় তিন সঙ্গীসহ আত্মগোপনে ছিলেন আলোচিত আবু ত্ব-হা। গত কয়েকদিন রাজপথ থেকে সংসদে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর ত্ব-হার সন্ধান পাওয়ায় তার পরিবার ও নিকটজন যারপরনাই খুশি হলেও নানা প্রশ্ন উঠেছে। কেন তিনি সঙ্গীসহ আত্মগোপনে ছিলেন, কেন বিষয়টি তার পরিবার জানত না, এর পেছনে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে কি-না তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে দেশজুড়ে। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। তারা ত্ব-হা ও তার সঙ্গীদের বক্তব্য যাচাই-বাছাই করছেন। ফিরে আসার পর শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে নিজ বাসা সংলগ্ন শ্বশুর বাড়ি থেকে আবু ত্ব-হাকে রংপুর থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তিনিসহ আত্মগোপনে থাকা সঙ্গীরা এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। এদিকে বিকালে রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডের পুলিশ গোয়েন্দা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে উপপুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) আবু মারুফ হোসেন জানান, তিন সঙ্গীসহ আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান গত ১০ জুন ঢাকার গাবতলীতে পৌঁছানোর পর রাত আড়াইটার দিকে সেখান থেকে গাইবান্ধায় আসেন। সেখান থেকে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ত্রিমোহনীতে তিনি তার বন্ধু সিয়ামের বাসায় আশ্রয় নেন। সঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন আবদুল মুহিত, ফিরোজ আলম ও গাড়িচালক আমির উদ্দিন। সেখানে অবস্থানকালে সবাই তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে আবু ত্ব-হার কাছে জমা রাখেন। সংবাদ সম্মেলনে উপপুলিশ কমিশনার বলেন, মূলত ব্যক্তিগত ও পারিবারিকসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণেই তারা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন। আবু ত্ব-হা রংপুর থেকে ঢাকা যাওয়ার সময় তার সঙ্গীদের জানান, তিনি ব্যক্তিগত কিছু সমস্যায় ভুগছেন। এরপর তাদের সঙ্গে কথা বলার পর পরামর্শ করে সকলেই আত্মগোপনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আত্মগোপনে থেকে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য কোনো ষড়যন্ত্র কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপপুলিশ কমিশনার জানান, পুলিশ বিষয়টি খাতিয়ে দেখছে। সংবাদ সম্মেলনে উপপুলিশ কমিশনার বলেন, তার সফরসঙ্গী গাড়ি চালক আমির উদ্দিনকে রংপুর নগরীর নিজ বাসা হতে, মুহিতকে মিঠাপুকুরের জায়গীরহাট থেকে এবং ফিরোজ আলমকে বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানা থেকে উদ্ধার করা হয়। ফিরোজকে নিয়ে আসার বিষয়ে শিবগঞ্জ থানায় যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। তিনি জানান, শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে ত্ব-হার পরিবার থেকে পুলিশকে জানানো হয়, ত্ব-হা নগরীর আবহাওয়া অফিস সংলগ্ন মাস্টারপাড়া এলাকায় প্রথম স্ত্রীর বাবা আজহারুল ইসলামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। সেখানে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেয়। ত্ব-হার বরাত দিয়ে উপপুলিশ কমিশনার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারা কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার কথা জানিয়েছেন পুলিশকে। সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। পরে তাকে রংপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের প্রকৃত নাম আফছানুল আদনান। বয়স ৩১। তার মা আজেদা বেগম। বাবা মৃত রফিকুল ইসলাম। ছোট বোন রিতিকা রুবাইয়াত ইসলাম। আদনানের প্রথম স্ত্রী আবিদা নুর, তাদের সংসারে তিন বছরের একটি মেয়ে ও দেড় বছর বয়সি একটি ছেলে-সন্তান রয়েছে। বাবা মারা যাওয়ার পর রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডে নানার বাসাতে বড় হন আদনান। বিয়ের পর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে নগরীর নিউ শালবন এলাকায় বসবাস করেন। তিন মাস আগে আদনান আরেকটি বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার সারা ঢাকার মিরপুর আল ইদফান ইসলামী গার্লস মাদ্রাসার পরিচালক ও শিক্ষক। শুরু থেকে আদনান প্রাতিষ্ঠানিক কোনো আরবি শিক্ষা গ্রহণ করেননি। তার শিক্ষা জীবন শুরু লায়ন্স স্কুল ও কলেজ নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি এইচএসসি পাস করেন। পরে কারমাইকেল কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। কোরআন শিক্ষার জন্য কিছুদিন স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় তালিম নেন। এ সময় তিনি আহলে হাদিস নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও লাইফ ফাউন্ডেশন, আলোর পথ এবং একাডেমিক কোরআন স্টাডিজ নামে সংগঠনে জড়িত রয়েছেন। ঢাকার মিরপুর আল ইদফান ইসলামী গার্লস মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা তিনি। প্রসঙ্গত, ১০ জুন বিকালে আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান তার তিন সঙ্গীকে নিয়ে প্রাইভেট কারে করে ঢাকায় যান। এরপর থেকে আদনানের ফোন বন্ধ পায় পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় ত্ব-হার মা আজেদা বেগম মহানগর কোতোয়ালি থানায় জিডি করেন।