সিনোফার্মের টিকাদান শুরু হচ্ছে আজ

প্রকাশ | ১৯ জুন ২০২১, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দেশে চীন সরকারের উপহার হিসেবে দেওয়া সিনোফার্মের করোনাভাইরাসের টিকাদান আজ থেকে শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইপিআই কর্মসূচির উদ্যোগে দেশের সব জেলায় সিনোফার্মের টিকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. শামসুল হক শুক্রবার যায়যায়দিনকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ রুখতে বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে চীন সরকার মোট ১১ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা উপহার দিয়েছে। যার মধ্যে ৩০ হাজার ডোজ এ দেশে কর্মরত চীনের নাগরিকদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাকি ১০ লাখ ৭০ হাজার ডোজ দেশের ৫ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ পাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ঢাকার মধ্যে ৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা দেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- ঢাকা মেডিকেল, স্যার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ঢাকার বাইরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদর হাসপাতালের কেন্দ্রগুলোতে সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হবে। এছাড়া কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া ফাইজারের টিকা আগামী সপ্তাহ থেকে প্রয়োগ শুরু হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফাইজারের টিকা মাইনাস ৬০-৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে সংরক্ষণ করতে হয়। যে ব্যবস্থা ঢাকার বাইরে এখনো নেই, ফলে এ টিকা প্রয়োগের ব্যাপারে সঠিক দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, 'তাপমাত্রার জটিলতায় ফাইজারের টিকা শুধু ঢাকা মহানগরীর কিছু হাসপাতালে দেওয়া হবে। এ ছাড়া সিনোফার্মের টিকা মেডিকেল শিক্ষার্থীদের দেওয়া শুরু হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে সারাদেশে সরকারি ৩৭টি মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শুরু হবে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চীনের টিকা দেওয়া হবে। পাশাপাশি এবার টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিদেশগামী কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।' অন্যদিকে করোনা টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা এসেছে। শিগগিরই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১০ লাখ ৮০০ ডোজ টিকা দেশে আসবে। চট্টগ্রামে পৌঁছেছে ৯১ হাজার ডোজ : চীনের সিনোফার্মের তৈরি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ৯১ হাজার ২০০ ডোজ টিকা চট্টগ্রাম পৌঁছেছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টায় টিকার চালান চট্টগ্রামে পৌঁছায় বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি। গাজীপুরে পৌঁছেছে ২০ হাজার ডোজ : আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গাজীপুরে পৌঁছেছে সিনোফার্মার ২০ হাজার ডোজ টিকা। বৃহস্পতিবার বিকালে ওই টিকা গাজীপুরে পৌঁছে। আজ শনিবার থেকেই এ টিকা প্রদানের কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন। গাজীপুরের সিভিল সার্জন মো. খাইরুজ্জামান জানান, গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও আইএসপি, ম্যাটস এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের এ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তাদের দেওয়ার পর টিকা বেশি হলে তা আগে যাদের এক ডোজ দেওয়া হয়েছে তাদের এবং ফ্রন্টলাইনারদের দেওয়া হবে। গাজীপুরের সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান জানান, গাজীপুরে ইতঃপূর্বে তারা দুই লাখ ৩২ হাজার ডোজ টিকা পেয়েছেন। প্রথম ডোজ পেয়েছেন এক লাখ ৩৫ হাজার ৫৯৬ জন। দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৯৬ হাজার ১৮০ জন। সেই হিসাবে দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেতে বাকি রয়েছেন প্রায় ৩৯ হাজার জন। গাজীপুরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট ২২৬ জন মারা গেছেন। আর ৮৬ হাজার ৮৯২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১১ হাজার ৮১ জনের মধ্যে করোনা পজিটিভ হয়েছে। তাদের মধ্যে করোনামুক্ত হন ১০ হাজার ৪৭৭ জন। গাজীপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩১টি নমুনা পরীক্ষায় করোনায় নতুন কেউ মারা না গেলেও ৪৮ জনের করোনা পজিটিভ হয়েছে। চাঁদপুরে এসেছে ৯ হাজার ৬০০ ডোজ: আমাদের চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, জেলায় সিনোফার্মের ৯ হাজার ৬০০ ডোজ টিকা পৌঁছেছে, যা দিয়ে প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে ৪ হাজার ৮০০ জনকে। আর তা এ টিকা দেওয়া শুরু হবে আজ শনিবার থেকে। প্রথমেই টিকা দেওয়া হবে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী ও নার্সদের। এরপর পাবেন অন্যরা। শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্যাহ। চাঁদপুরের সিভিল সার্জন জানান, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে চাঁদপুরে ৯ হাজার ৬শ' ডোজ টিকা এসেছে। এ টিকা দিয়ে কাল থেকে আবারও শুরু হচ্ছে জেলায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগ। এবার যে টিকা আসছে তা দিয়ে প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে ৪ হাজার ৮শ' জনকে। তিনি বলেন, আগে আসা ভ্যাকসিনের এক ভায়াল থেকে ১০ জনকে দেওয়ার নিয়ম ছিল। তবে এ টিকার এক ভায়াল থেকে একজনকেই দেওয়া হবে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. ইছারুলস্নাহ জানান, চাঁদপুরে এ পর্যন্ত প্রথম ডোজ ৬০ হাজার ৩৯০ জনকে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ৪৬ হাজার ৪৩৯ জনকে। এখনো প্রথম ডোজ গ্রহীতা ১৪ হাজার জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়নি।