একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন

আ’লীগে নিজাম, বিএনপিতে জয়নাল এগিয়ে

ফেনী-২ (সদর)

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

আজাদ মালদার, ফেনী
একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে ঘিরে ফেনী-২ (সদর) আসনে সব দলের সম্ভাব্য প্রাথীর্রা প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণা চালালেও দীঘির্দন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এখনো নীরব। দলের নেতারা জানান, তাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি ও নিবার্চনকালীন সহায়ক সরকারের নিশ্চয়তা পেলেই তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা শুরু করবেন। বতর্মানে এ আসনে সংসদ সদস্য ক্ষমতাসীন দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। একসময় বিএনপির ভিপি জয়নাল আর আওয়ামী লীগের জয়নাল হাজারীর প্রতিদ্ব›িদ্বতা ছিল সমানে সমান। বতর্মানে বিএনপির শক্ত প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে আবিভ‚র্ত হয়েছেন ফেনীর তরুণ সমাজের অহঙ্কার এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী। ১৯৯৬ সালে জাসদ থেকে ফেনী জেলা বিএনপিতে যোগ দেন ফেনী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন। এর আগে ১৯৮৮ সালে জাসদ প্রাথীর্ হিসেবে নিবার্চনে অংশ নিয়ে তিনি বিজয়ী হন। ২০০১ সালের নিবার্চনে সদর আসনে আওয়ামী লীগ প্রাথীর্ জয়নাল হাজারীকে পরাজিত করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তিনি। জয়ের ধারা অব্যাহত রাখেন ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের নিবার্চনেও। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ প্রাথীর্, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীকেও বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। তবে ২০১৪ সালের নিবার্চনে পেক্ষাপট বদলে যায়। সে সময় ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় সংসদ সদস্য নিবাির্চত হন। ফেনী সদর আসনে এবারও আওয়ামী লীগ থেকে নিজাম উদ্দিন হাজারী এবং বিএনপি থেকে জয়নাল আবেদিন (ভিপি জয়নাল) নিবার্চন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে নাম প্রকাশ না করার শতের্ আ’লীগের একাধিক নেতা ও ফেনীতে কমর্রত সাংবাদিক সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ও ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবারও আ’লীগের মনোনয়ণ চাইবেন। অন্যদিকে বিএনপি নেত্রী ও সাবেক এমপি রেহানা আক্তার বানু ও ঢাকা মহানগর যুবদলের দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু প্রাথীর্ হতে পারেন। এদিকে এ আসনটি জেলার রাজনীতিতে একটি মযার্দা ও গুরুত্বপূণর্ আসন হিসেবে ভোটারদের কাছে বিবেচিত। নিবার্চনী এ এলাকাটি এক পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৬৮৪। এ আসন থেকে যিনি এমপি নিবাির্চত হন, তিনিই পুরো জেলা নিয়ন্ত্রণ করেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মরহুম খাজা আহাম্মদ ছাড়াও জয়নাল হাজারী তিনবার, অধ্যাপক ভিপি জয়নাল তিনবার, সবের্শষ বতর্মান এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী একবার এমপি নিবাির্চত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি মরহুম খাজা আহাম্মদ ছাড়া বাকি এমপিরা সবাই নিজ নিজ দলের সাধারণ সম্পাদকের পদে ছিলেন। বিশেষ করে বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে দলের সম্ভাব্য প্রাথীের্দর মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে তীব্র প্রতিযোগিতা থাকলেও প্রকাশ্যে তা দেখা যাচ্ছে না। এবার জাতীয় সংসদ নিবার্চনে প্রাথির্তার ব্যাপারে নিজাম উদ্দিন হাজারীকে সমথর্ন দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দীন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। ফেনীকে সন্ত্রাসমুক্ত করার ক্ষেত্রে নিজাম হাজারীর বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি। অন্যদিকে নিজাম উদ্দিন হাজারীও নিবার্চনকে সামনে রেখে মাঠে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন। ফেনীর সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফেনীর মানুষ বতর্মানে শান্তিতে আছেন। তাই তারা আগামীতে এমপি হিসেবে নিজাম উদ্দিন হাজারীকে দেখতে চান। এ ব্যাপারে নিজাম উদ্দিন হাজারী যায়যায়দিনকে বলেন, বতর্মান সরকারের অধীনে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ফেনীতে দেশের প্রথম ছয় লেইনের ফ্লাইওভার হয়েছে, সোনাগাজী ও মিরসরাইতে অথৈর্নতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বিদেশিদের সহায়তা ছাড়াই। এ সরকার নিজস্ব অথের্ পদ্মা সেতু করছে। তাই জননেত্রী শেখ হাসিনা চাইলে আগামী নিবার্চনে তিনি আবারও দলের হয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। ফেনী জেলা যুবলীগের সহ-সভাপভি ও ফেনী পৌরসভার প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজি বলেন, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠন তাদের নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। যেখানে দেশবাসী ফেনীকে জানত সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে, গণমানুষের নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি হওয়ার পর তা এখন শান্তির জনপদে রূপান্তরিত হয়েছে। মানুষ মন খুলে যে কোনো সমস্যা নিয়ে তার কাছে সরাসরি যেতে পারেন। তিনি হাসিমুখে মানুষের সমস্যা সমাধান করেন। তিনি কমীর্বান্ধব নেতা। তিনি জেলার সব পযাের্য়র নেতাদের নিয়মিত খেঁাজ-খবর রাখেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক বাহার উদ্দিন বাহার বলেন, নিজাম উদ্দিন হাজারী একজন অপ্রতিরোধ্য ও সাহসি জনবান্ধব নেতা। তার নেতৃত্বে দল অত্যন্ত সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ। জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি তাকে মনোনয়ন দেন, তাহলে ফেনীতে নৌকা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। কারণ নৌকার সমথর্ন ও জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বাহার আরও বলেন, ফেনীতে যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে এবং নিজাম হাজারীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে ফেনীর মানুষ আগের তুলনায় অনেক ভালো ও শান্তিতে আছেন। সে হিসেবে মানুষ নিজাম উদ্দিন হাজারীকে আবারও এমপি হিসেবে দেখতে চায়। অন্যদিকে এ আসনে নিবার্চনী মাঠে এগিয়ে থাকার আশা করছেন স্থানীয় বিএনপির নেতৃৃবৃন্দ। আসনটি পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন কাযর্ক্রম শুরু করেছেন দলের নেতারা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন ভিপি আসন্ন সংসদ নিবার্চনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি খালেদা জিয়ার সাজার বিরুদ্ধে জেলাতে নেতাকমীের্দর নিয়ে প্রতিবাদ, মিছিল-মিটিং করে যাচ্ছেন। তিনবারের সাবেক এমপি ভিপি জয়নাল যায়যায়দিনকে বলেন, বিএনপি যদি আসন্ন সংসদ নিবার্চনে অংশ নেয় তাহলে তিনি নিবার্চন করতে চান। তবে নেত্রী যাকেই মনোনয়ন দেবেন, তিনি তার পক্ষে কাজ করবেন। যদি সুষ্ঠু নিবার্চন হয় ফেনী-২ আসনে বিএনপি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। বিএনপি থেকে অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনু বলেন, তিনি ফেনীর সন্তান, যদিও ঢাকায় থাকেন। দীঘির্দন ধরে তিনি এলাকার সাধারণ মানুষসহ দলীয় নেতাকমীের্দর সঙ্গে স্থানীয়ভাবে দলীয় কমর্সূচিগুলোতে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছেন। তিনি আশা করেন, দল থেকে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাকে নমিনেশন দেবেন। অন্যদিকে মহাজোটের আরেক শরিক দল জাতীয় পাটির্ থেকে নিবার্চনে প্রাথীর্ হয়ে মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন জেলা জাতীয় পাটির্র সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ভালোবেসে জাতীয় পাটির্ করেন। তারই ফলস্বরূপ দল থেকে তাকে এবার প্রাথীর্ করা হয়েছে। অন্যদিকে নিবার্চন কমিশন দলের নিবন্ধন বাতিল করলেও জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে সূরা সদস্য ও সাবেক জেলা আমির লিয়াকত আলী ভ‚ঞা জোটের প্রাথীর্ হিসেবে এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন। ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশও এ আসন থেকে তাদের প্রাথীর্ দেবে বলে জেলা কমিটির সভাপতি গোলাম সরওয়ার জানান।