উত্তপ্ত হচ্ছে ঢাবি

আকতার হাসপাতালে ছাত্রলীগ আন্দোলনে

‘ঘ’ ইউনিটের ‘ফঁাস হওয়া’ প্রশ্নে নেয়া পরীক্ষার ফলাফল বাতিল এবং ফের পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

ঢাবি প্রতিনিধি
‘ফঁাস হওয়া’ প্রশ্নে নেয়া পরীক্ষার ফলাফল বাতিল এবং ফের পরীক্ষা নেয়াসহ চার দফা দাবিতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে Ñযাযাদি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভতির্ পরীক্ষার ফলাফল বাতিলের দাবিতে রাজু ভাস্কযের্র পাদদেশে তিন দিন ধরে অনশন চালিয়ে আসা শিক্ষাথীর্ আকতার হোসেন অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদিকে ‘ফঁাস হওয়া’ প্রশ্নে নেয়া ওই পরীক্ষার ফলাফল বাতিল এবং ফের পরীক্ষা নেয়াসহ চার দফা দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফমর্ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে কয়েকশ শিক্ষাথীর্ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। একদল শিক্ষাথীর্ উপাচাযের্র কাযার্লয়ের সামনে অবস্থান নেয়ায় কাযার্লয়ে মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে রেখেছে কতৃর্পক্ষ। তাদের চার দফা দাবি হলো- ‘ঘ’ ইউনিটের ভতির্ পরীক্ষার ফলাফল বাতিল, পুনরায় পরীক্ষা নেয়া, প্রশ্নফঁাসে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা, বিগত বছরগুলোতে ‘জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে’ ভতির্ হওয়া শিক্ষাথীের্দর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা। সরকার সমথর্ক ছাত্রলীগও প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ‘যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে’ পুনরায় পরীক্ষা নেয়াসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া এখনও মেলেনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজু ভাস্কযের্র পাদদেশে অনশনরত আইন বিভাগের ছাত্র আকতারকে দেখতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক রহমত উল্লাহ ও ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন। আকতারের দাবিকে ‘স্বাগত জানিয়ে’ প্রক্টর গোলাম রাব্বানী বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রæতি দেন। এরপর অন্যদের নিয়ে তিনি আকতারকে ডাবের পানি খেয়ে অনশন ভাঙার অনুরোধ করতে থাকনে। আকতার তাতে রাজি না হলেও তারা চেষ্টা চালিয়ে যান? এক পযাের্য় আকতার হাত পা ছোড়াছুড়ি আর চিৎকার শুরু করেন? তখন কয়েকজন মিলে ধরাধরি করে হাত থেকে স্যালাইনের ক্যানেলা খুলে তাকে রিকশায় তোলেন। রিকশায় তোলার পরও আকতার চিৎকার করতে থাকেন। ওই অবস্থায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। প্রক্টর এবং অন্য শিক্ষকরাও তার সঙ্গে যান। এর আগে বেলা সোয়া ১টার দিকে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন এ বিষয়ে সংগঠনের অবস্থান জানিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন। সেখানে চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়। ১. যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে পরীক্ষা পুনরায় নেয়া অথবা উত্তীণর্ শিক্ষাথীের্দর নিয়ে বিশেষ ভতির্ পরীক্ষার ব্যাপারে স্পষ্ট প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে আসা। ২. ডিজিটাল জালিয়াতি বা প্রশ্নফঁাস বা যে কোনো ধরনের অসদুপায় অবলম্বনকারীদের বিরুদ্ধে সবোর্চ্চ প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া। ৩. স্পষ্ট তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে জালিয়াতি, প্রশ্নফঁাস বা অসদুপায়ের মাধ্যমে ভতির্ হওয়া শিক্ষাথীের্দর ছাত্রত্ব বাতিল ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া। ৪. আধুনিক, যুগোপযোগী ও মানসম্মত ভতির্ পরীক্ষার স্বাথের্ শিক্ষাবিদ, সিনেট, সিন্ডিকেট, অংশীজন এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে পলিসি ডিবেটের মাধ্যমে ভতির্ পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার করা। গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভতির্ পরীক্ষা শুরুর পৌনে এক ঘণ্টা আগে হাতে লেখা প্রশ্নপত্রের ১৪টি ছবি এক শিক্ষাথীর্র মোবাইল ফোনে আসে। প্রশ্নপত্র ফঁাসে জড়িত সন্দেহে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ তদন্তের পর প্রশ্নপত্র ফঁাসের বিষয়টি স্বীকার করে নিলেও গত মঙ্গলবার ফল প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায় ‘ঘ’ ইউনিটের প্রথম ১০০ জনের তালিকায় থাকা অন্তত ৭০ জন ভতির্চ্ছু অন্য ইউনিটে ভতির্ পরীক্ষা দিয়ে উত্তীণর্ই হতে পারেননি। প্রশ্ন ফঁাসের অভিযোগ ওঠার পর আইন বিভাগের তৃতীয় বষের্র ছাত্র আকতার হোসেন মঙ্গলবার দুপুরে রাজু ভাস্কযের্র পাদদেশে অনশনে বসেন। তার অবস্থার অবনতি হলে সেখানেই তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়। সূযের্র তাপ থেকে আকতারকে বঁাচাতে সহপাঠীরা বৃহস্পতিবার সেখানে শামিয়ানা টানিয়ে দেন। তার শিক্ষাথীর্ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজু ভাস্কযের্র সামনে মানববন্ধন করে ফলাফল বাতিলসহ চার দফা দাবি তুলে ধরেন। এরপর শিক্ষাথীের্দর একটি অংশ উপাচাযের্র কাযার্লয়ের সামনে অবস্থান নেয়। কতৃর্পক্ষ তখন কাযার্লয়ে মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। কোটা আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফমর্ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে কয়েকশ শিক্ষাথীর্ বেলা ১২টার দিকে রাজু ভাস্কযের্র পাদদেশে আসে। সেখান থেকে ‘প্রশ্নফঁাস প্রশ্নফঁাস, মেধাবীদের গলায় ফঁাস’ ¯েøাগান তুলে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন। পরে তারা রাজু ভাস্কযের্র পাদদেশে সমাবেশে মিলিত হন। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহŸায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসনের ছাত্র বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘যদি আজকের মধ্যে এই পরীক্ষার ফলাফল বাতিল না করা হয় তাহলে আমরা কঠোর কমর্সূচি দেব। কেন, কেন, কেন প্রতিটি ন্যায্য দাবি নিয়ে ছাত্র সমাজকে মাঠে নামতে হয়? ধিক্কার জানাই আপনাদের এই নিলর্জ্জতাকে। আমরা চাই, আপনাদের মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হোক।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচাযর্ অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান একটি কনফারেন্সে যোগ দিতে তুরষ্কে যাওয়ায় শিক্ষাথীের্দর দাবির বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি।