একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন

আ’লীগে সাধন, বিএনপিতে প্রাথীর্জট

নওগঁা-১ (পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুর )

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

বাবুল আকতার, সাপাহার (নওগঁা)
একাদশ জাতীয় সংসদের নিবার্চনী হাওয়াও বইতে শুরু করেছে নওগঁা-১ (সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর) আসনের প্রতি উপজেলায়। নওগঁা জেলার পশ্চিমে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সীমান্ত এলাকাজুড়ে অবস্থিত সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলা। এ তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-১ আসন। জাতীয় সংসদের নিবার্চনী এলাকা আসন নম্বর-৪৬। জেলার তিনটি উপজেলাই ঠাঁ-ঠাঁ বরেন্দ্রভ‚মি। একসময় বছরে ধান চাষ হতো এক মৌসুমে। তা ছিল শুধু রোপা-আমন। কিন্তু বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কতৃর্পক্ষ গভীর নলক‚প স্থাপনের মাধ্যমে সেচ সমস্যার অনেকটাই সমাধান করেছে। ফলে উপজেলাগুলো ইরি, আমনসহ সারা বছরই বিভিন্ন ফসল ফলানোর সুবিধা পাচ্ছে। গড়ে উঠছে নতুন নতুন আম বাগান। খাদ্যের চেয়ে উপজেলাগুলোতে পানিরই ছিল বড় সংকট। বেহাল অবস্থা ছিল সড়কপথের। এখন সেখানে লেগেছে উন্নয়ন ও আধুনিকতার ছেঁায়া। গ্রামে গ্রামে জ্বলছে বৈদ্যুতিক বাতি। সড়কের উন্নয়ন হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও হয়েছে আগের তুলনায় অনেক সহজতর । এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২ হাজার ৫১৬ জন। এর মধ্যে পোরশা উপজেলায় পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ২৬১ জন এবং মহিলা ভোটার ৪৯ হাজার ৪৩৩ জন, নিয়ামতপুর পুরুষ ভোটার ৯১ হাজার ২৮৩ জন এবং মহিলা ভোটার ৯৫ হাজার ৪৯৯ এবং সাপাহার পুরুষ ভোটার ৫৯ হাজার ২৫৩ জন ও মহিলা ভোটার ৫৮ হাজার ৭৮৭ জন। নিবার্চনী এলাকা ঘুরে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন ঘিরে এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পাটির্র মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই আসনে তৈরি হয়েছে আগাম নিবার্চনী আমেজ। নিবার্চন ও সম্ভাব্য প্রাথীর্ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। প্রতিটি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রতিটি ইউনিয়নে কমির্সভা, আলোচনা সভা করে চলেছেন। নিবার্চনী মাঠ দখল এবং মনোনয়ন নিশ্চিত করতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যাপক দৌড়ঝাঁপও শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন ধমীর্য়, সামাজিক ও দলীয় কমর্কান্ডের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাদের প্রয়োজনীয়তা ও উপস্থিতি জানান দিতে কাপর্ণ্য করছেন না। আগামী নিবার্চনে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে এখন পযর্ন্ত নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ধমর্ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদারের নামই শুধু শোনা যাচ্ছে। এই আসনে আওয়ামী লীগের আর কোন মনোনয়নপ্রত্যাশী না থাকায় সাধন চন্দ্র মজুমদার বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। তাছাড়া পরপর দুই বার সংসদ সদস্য নিবাির্চত হওয়ায় এবং দল ক্ষমতায় থাকার সুবাদে এ আসনের তিনটি উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা, পানির সুব্যবস্থা, বনায়ন, শিক্ষার প্রসারে ভালো অবদান রেখেছেন তিনি। এরই মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ, সাধারণ মানুষের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ আসনের সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার নিজের ও নিজ দল আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্য ভাবমূতির্ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এলাকার অভিজ্ঞ রাজনীতিকরা মনে করেন, সাধন চন্দ্র মজুমদার ওই তিন উপজেলায় একটি আকষর্ণীয় ভাবমূতির্ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এ কারণে তার সমান্তরালে দ্বিতীয় কোনো আওয়ামী লীগ নেতা নিবার্চন করার মতো অবস্থানে নেই। অন্যদিকে বিএনপি থেকে তরুণ নেতা শাহ আহমদ মোজাম্মেল চৌধুরী, সাবেক সাংসদ ডা. ছালেক চৌধুরী, জননেতা অধ্যক্ষ আ্ব্দুন নুর, ১/১১ এর নিযাির্তত ত্যাগী নেতা নুরুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, লায়ন মাসুদ রানা মনোনয়নপ্রত্যাশী। এছাড়া জাপা নেতা আকবর আলী কালু, বাসদ নেতা কমরেড মঙ্গল কিস্কু, সহ আরো দু এক জনের নাম শোনা যাচ্ছে। এ আসনের তিন উপজেলায় উপজেলা ও ইউনিয়ন পযাের্য় বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেশ প্রকট। তৃণমূলের কমীর্রা বুঝে উঠতে পারছে না কোন নেতার খুঁটি কত মজবুত। তাই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে পরিস্থিতি অবলোকন করছেন তৃণমূল নেতাকমীর্রা। গত ৮-৯ বছর ডা. ছালেক চৌধুরী তৃণমূল নেতাকমীের্দর সাথে তেমন যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেননি। তিনি অনেক সময়ই নেতাকমীের্দর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করতেন বলে নেতাকমীের্দর তার ওপর ক্ষোভ ও অভিমান রয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির তরুণ নেতা শাহ আহমদ মোজাম্মেল চৌধুরী দলীয় কমর্কাÐের সাথে সাথে নিজ নিবার্চনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় বেশ এগিয়ে আছেন। পোরশা উপজেলায় বাইরে নিয়ামতপুর ও সাপাহার উপজেলার নেতাকমীের্দর সাথে সুসম্পকর্ গড়ে তুলেছেন তিনি। তিনি দীঘির্দন থেকেই বিএনপির তৃণমূল নেতাকমীের্দর সুখে-দুঃখে পাশে রয়েছেন। তৃণমূলের নেতাকমীের্দর অভিমত, এ আসনে বিএনপির শাহ আহমদ মোজাম্মেল চৌধুরী কে মনোনয়ন দিলে আসনটি পুনঃউদ্ধার হতে পারে। এলাকার বিএনপির বিভিন্ন পযাের্য়র নেতাকমীের্দর সাথে কথা বলে জানা গেছে, এলাকায় বিএনপির দলীয় কাযর্ক্রম নিয়ে তাদের তেমন কোনো ভাবনা নেই। তাদের মূল ভাবনা বিএনপি থেকে কে মনোনয়ন পাবেন। যোগ্য নেতা মনোনয়ন পেলে এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নিবার্চন হলে এই আসনে বিএনপি প্রাথীর্ই জয়ী হবে বলে তাদের বিশ্বাস। এ ছাড়া এই আসনে দলের বাইরে গিয়ে কেউ বিদ্রোহী প্রাথীর্ হবেন না বলেও নেতাকমীর্রা জানান। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের (ইসা) পোরশা উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশী। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সাপাহার উপজেলার আহŸায়ক কমরেড মঙ্গল কিস্কুও নিবার্চন করতে চান।