সব বাধা উপেক্ষা করে ছুটছে মানুষ বাড়ির পানে

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০২১, ০০:০০ | আপডেট: ২০ জুলাই ২০২১, ০০:০৬

যাযাদি রিপোর্ট

সোমবার ছিল ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস। এদিন চাকরিজীবীরা অফিস শেষে ছুটেছেন গ্রামের পথে। অনেকেই অফিসে হাজিরা দিয়ে গন্তব্যের পথে বের হয়েছেন। এত কিছুর পরও রাজধানীর রাস্তা সোমবার অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে। সরকারি গণপরিবহণ বিআরটিসির বাস রাস্তায় ছিল না বললেই চলে। শহরে বাস কম থাকলেও মোড়ে মোড়ে যাত্রীদের তেমন একটা অপেক্ষা করতে দেখা যায়নি। তবে ঈদযাত্রার সব চাপ পড়েছে শিমুলিয়া ঘাটে। যেন সব পথ এসে মিশেছে এখানেই। আগামীকাল বুধবার পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব উদযাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদ-পূর্ববর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে গত ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে আগামী ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করেছে সরকার। একই দিন ৬টার পর থেকে ফের কঠোর লকডাউন শুরু হবে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। করোনা সংক্রমণের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কারণে ঈদযাত্রায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো ঈদের আগ মুহূর্তের এই সময়ে বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের ভিড় তেমন ছিল না। তারপরও আতঙ্ককে উপেক্ষা করে ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ছেড়েছে ঘরমুখো মানুষ। ঢাকার বাইরে যানজট থাকায় কাউন্টারের শিডিউল ঠিক ছিল না। আবার ২৩ জুলাই সকাল ৬টার মধ্যে ঢাকায় ফেরার নিশ্চয়তাও নেই এসব বাসে। তাই অনেকেই রিজার্ভ বাস ভাড়া করে বাড়ি গেছেন। এক্ষেত্রে বিআরটিসির এসি ও নন-এসি বাস বেশি রিজার্ভ হয়েছে। এরপরও অনেক যাত্রী লোকাল বাসে যাচ্ছেন ভেঙে ভেঙে। তারা ঈদের পর আর রাজধানীতে ফিরবেন না। এই সুযোগে লোকাল বাসে বাড়তি ভাড়া আদায় করেছে। পাশাপাশি দুই সিটে একজন যাত্রী বসার কথা থাকলেও প্রতিটি সিটেই যাত্রী নেওয়া হয়েছে। ভাড়াও হেঁকেছে দ্বিগুণ বা তারও বেশি। যানজটের কারণে ঢাকার বাইরের গাড়ি সময় মতো পৌঁছতে না পারায় কিছু কিছু পরিবহণের যাত্রীরা কাউন্টারে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেছেন। রাজধানীর ব্যস্ততম গাবতলী বাস টার্মিনাল ও কল্যাণপুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। গাবতলীতে দূরপালস্নার বাসের টিকিট না পেয়ে লোকাল বাসের টিকিট নিয়েছেন আমিনুর রহমান। তিনি জানান, টিকিট না পেয়ে বাধ্য হয়ে লোকাল বাসে ভেঙে ভেঙে যাবেন। তবে গাবতলী থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত যেখানে ভাড়া ১২০ টাকা, সেই ভাড়া লোকাল বাসে নিল ৩০০ টাকা। বাসভর্তি যাত্রী আর প্রতিটি সিটেই যাত্রী নিয়েছে তারা। সেলফি পরিবহণে পাশাপাশি সিটে বসেছেন হাবিব আর সজীব। তারা জানান, কেউ কাউকে চেনেন না। করোনা মহামারির মধ্যেও এভাবে পাশাপাশি দু'জন একসঙ্গে বসা সবার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। জানতে চাইলে সেলফি পরিবহণের কাউন্টার ম্যানেজার সিরাজুল আলম বলেন, ১৪ দিন লকডাউনে বাস বন্ধ ছিল। আবার ঈদের একদিন পরেই বাস বন্ধ থাকবে। ঈদের কয়েক দিনই শুধু বাস চলবে। এ কারণে কিছু বাড়তি টাকা আয় না হলে তাদের স্টাফদের ঈদ হবে কীভাবে? পাশাপাশি সিটে দু'জন যাত্রী নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। দুই সিটে একজন হলে যাত্রীদের অনেকেই বাড়ি যেতে পারবেন না। তাদের উপকারের জন্যই দু'জন করে নেওয়া হয়েছে। এদিকে শিমুলিয়া ঘাটে দু'টি কন্ট্রোল রুম বসিয়েও লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না পুলিশ। ঈদযাত্রার শেষ দিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ঢল নেমেছে বিক্রমপুর-মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে। উত্তাল পদ্মা পার হতে তিন কিলোমিটার ঘুরে চলছে সেখানকার সব ফেরি। এতে অতিরিক্ত সময় ফেরিতে গাদাগাদি-ঠাসাঠাসি করে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। শিমুলিয়া লঞ্চঘাটে যাত্রীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। শৃঙ্খলা রক্ষায় ঘাটজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। ফেরিঘাটেও রয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ট্রেনের ঈদযাত্রায় আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রীদের হুড়োহুড়ি ছিল না কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। মূলত অনলাইনে টিকিট কাটা ও টিকিট ছাড়া স্টেশনে প্রবেশ করতে না দেওয়ার কারণে স্টেশনে হুড়োহুড়ি দেখা যায়নি। অন্যান্য গণপরিবহণের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হলেও ট্রেনে রাখা হয়েছে আগের ভাড়াই। তবে লোকাল টেনের যাত্রীদের টিকিট কাটা থেকে শুরু করে ট্রেনে চড়া পর্যন্ত পুরোটাই ছিল হুড়োহুড়ির মধ্যে। এখানে স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না। টিকিট কাটার জন্য যেমন লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে, তেমনি ট্রেনেও বসতে হয়েছে একে অন্যরে গা ঘেঁষে। সোমবার লঞ্চঘাটে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। সকাল থেকেই ঘাটে লঞ্চ এলে তড়িঘড়ি করে ওঠার চেষ্টা করছে যাত্রীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা স্বাস্থ্যবিধি মানানোর চেষ্টা করলেও যাত্রীরা তা মানেনি। ঢাকা থেকে বরিশালগামী যাত্রী মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘাটে আসার পরে দেখেন সব লঞ্চে যাত্রী বোঝাই। ভাড়াও নিচ্ছে বেশি। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বিভিন্ন রুটের লঞ্চ ভিড়িয়ে রাখা হয়েছে। এসব লঞ্চ বিকালে বা সন্ধ্যায় ছাড়বে। কিন্তু সকাল থেকেই শত শত যাত্রী সদরঘাটে এসে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের লঞ্চের ডেকে আগাম জায়গা দখল করে চাদর বিছিয়ে বসে ছিলেন।