কামাল হোসেনে আস্থা বাড়ছে বিএনপির

ক‚টনৈতিকদের সঙ্গে বৈঠকে ড. কামাল হোসেন যে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন তাতে মুগ্ধ বিএনপি। নিবার্চনের আগে খালেদা জিয়া মুক্তি না পেলে ড. কামালকে সামনে রেখে নিবার্চনে অংশগ্রহণের বিষয়েও বিএনপিতে জনমত বাড়ছে

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

হাসান মোল্লা
ড. কামাল হোসেন
ছোট দলের বড় নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে পথচলা নিয়ে বিএনপিতে বিভক্তি ছিল। অনেকেই তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তবে ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর এর ঐক্য ধরে রাখার বিষয়ে তার ভূমিকার পাশাপাশি বৃহস্পতিবার ক‚টনৈতিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে ড. কামাল হোসেন যে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন তাতে বিএনপিতে তার প্রতি আস্থা অনেক বেড়েছে। নিবার্চনের আগে খালেদা জিয়া মুক্তি না পেলে ড. কামালকে সামনে রেখে নিবার্চনে অংশগ্রহণের বিষয়েও বিএনপিতে জনমত বাড়ছে। এছাড়া সিলেট, চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীর আসন্ন কমর্সূচিতে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সরকারকে আরও বেকায়দায় ফেলা সম্ভব হবে এবং সুষ্ঠু নিবার্চনের দাবি আদায়ে আন্তজাির্তক পযার্য় থেকে চাপ বাড়ানো সম্ভব হবে বলেও বিএনপি নেতাকমীের্দর ধারণা। নানা নাটকীয়তার পর গত ১৩ অক্টোবর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু নানা কারণে অন্যতম উদ্যোক্তা বি. চৌধুরী ছিটকে পড়েন এই জোট থেকে। শুরুতেই হেঁাচট খাওয়ায় ঐক্য টিকিয়ে রাখাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূণর্ মনে করছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। এজন্য ৭ দফা দাবি ১১ লক্ষ্যের কারণে অনেকে নতুন ষড়যন্ত্রে অন্তভুর্ক্ত হতে পারে এ শঙ্কা থেকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নিবার্চনের দাবিকে সামনে রেখেই জোট ভারী করার নতুন কমের্কৗশল ঠিক করা হয়। এই কৌশলে সফলতা আসছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঐক্যফ্রন্টে আসার ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছে। এর পাশাপাশি সিলেটে সমাবেশের মাধ্যমে কমর্সূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে আন্তজাির্তক জনমত বাড়াতে গত বৃহস্পতিবার ক‚টনীতিকদের ব্রিফ করা হয়েছে। এ সময় ক‚টনীতিকরা একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন, আন্দোলন, ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব, ক্ষমতার ভারসাম্য ও জামায়াত নিয়ে আটটি প্রশ্ন করেন ড. কামাল হোসেনকে। যৌথ নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট, জামায়াতের অংশগ্রহণ নেই, সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা মানুষের জন্য, প্রধান দাবি সুষ্ঠু নিবার্চনের পরিবেশ তৈরি হলে ভোটে অংশগ্রহণের বিষয়সহ প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর খুবই বিচক্ষণার সঙ্গে দেন ড. কামাল। পাশাপাশি নিজে নেতৃত্বের বড়াই করেননি একটি বারের জন্যও। সব মিলিয়ে ড. কামালের এই বিচক্ষণতা, ঐক্য ধরে রাখার কৌশল এবং দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনের যে পরিকল্পনা তাতে বিএনপি নেতাকমীর্রা বেশ সন্তুষ্ট। খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, কামাল হোসেনের ব্যাপারে বিএনপির নেতাকমীের্দর বড় অংশের ইতিবাচক মনোভাব থাকলেও তাকে তোষামোদ করে এখনই প্রকাশ্যে কথা বলার ক্ষেত্রে বিএনপির সিনিয়র নেতারা সতকর্। কারণ, দলের কট্টরপন্থী একটি অংশ এখনও খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করে নিবার্চনে যেতে আগ্রহী নয়। তারা কামালের উত্থানে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান শেষ পযর্ন্ত মাইনাস হতে পারেনÑ এমন বিষয় সামনে এনে বিভ্রান্তি ছড়ানোরও চেষ্টা করছেন। তবে সিনিয়র বিচক্ষণ নেতাদের পাশাপাশি দলের হাইকমান্ডও বিষয়টিকে পাত্তা দিচ্ছে না। সিনিয়র নেতাদের মত হচ্ছে, আবেগের কারণে নেতাকমীের্দর মধ্যে নানামত থাকতে পারে। বাস্তবতা হচ্ছে, বতর্মান কঠিন সময় উত্তরণে সবোর্চ্চ কৌশল অবলম্বন করে যোগ্য কাউকে বিশ্বাসে আনতে হবে। সূত্রমতে, ড. কামালের প্রতি আস্থা বাড়ার অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে, লিয়াজেঁা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে পক্ষপাতমূলক আচরণ না করা, আসন নিয়ে ২০ দলীয় জোট এবং ঐক্যফ্রন্টের অন্য শরিকরা খুব বাড়াবাড়ি করলেও কামাল হোসেনের আচরণ খুবই সন্তোষজনক। জামায়াতের প্রসঙ্গটি সামনে এনে কয়েক নেতা খুবই উচ্চবাচ্য করলেও কামাল হোসেন এক্ষেত্রে পুরোপুরিই কৌশলী অবস্থানে আছেন। ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে জোট গঠনের আগে যুক্তফ্রন্ট এবং গণফোরাম সবকিছু খোলাসা করার কথা বললেও কামাল হোসেন এক্ষেত্রে অনেক বেশি চাপ দিচ্ছেন না। ড. কামালের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার কমর্কাÐে অবদান রাখতে পারাকে ড. কামাল হোসেন এখন সবচেয়ে বড় বলে মনে করছেন। ক্ষমতার লোভ বা কাউকে কোনো চাপ দিয়ে কিছু আদায় করার উদ্দেশ্য কামাল হোসেনের নেই। তবে জাতীয় ও আন্তজাির্তক পযার্য় থেকে সরকারকে চাপে রেখে সুষ্ঠু নিবার্চনের দাবি আদায়কেই তিনি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন। কামাল হোসেনের প্রতি আস্থা বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, আন্তজাির্তক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ও সংবিধানের প্রণেতা কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে নিজেকে বারবার যেমন বলেছেন, তেমনি অন্য কোনো নেতাকেও কখনো ছোট করেনি। ঐক্য গঠনের আগেই কামাল হোসেনকে নেতা মেনে ঐক্য করার ব্যাপারে বিএনপি বলেছিল। সে হিসেবে ঐক্যের প্রধান নেতা হিসেবে তিনি নিজেকে আন্তজাির্তক মহলের কাছে উপস্থাপন করতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি। বরং যৌথ নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট চলছে বলে পরিষ্কার জানিয়েছেন।