শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
শনাক্তেও নতুন রেকর্ড

একদিনে সর্বোচ্চ ২৪৭ মৃতু্য

ম যাযাদি রিপোর্ট
  ২৭ জুলাই ২০২১, ০০:০০
করোনায় আক্রান্ত হয়ে নরসিংদীর করিমগঞ্জের মুনসুর আলী মৃধা সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। ছবিতে তার স্ত্রী ও শাশুড়ির আহাজারি -স্টার মেইল

দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃতু্য বাড়ছেই। এ ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে আরও ২৪৭ জনের মৃতু্য হয়েছে। এটিই এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃতু্যর রেকর্ড। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৯ হাজার ৫২১ জনে। একই সময়ে করোনা আক্রান্ত হিসেবে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে আরও ১৫ হাজার ১৯২ জন, যা একদিনে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৮২৭ জনে। এদিন নমুনা পরীক্ষাও হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ৫৩ হাজার ৩১৬টি।

প্রতিদিনের মতো সোমবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত করোনাভাইরাস বিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এর আগে গত ১৯ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ২৩১ জনের মৃতু্য হয়েছিল। তার আগে ১১ জুলাই ২৩০ জনের মৃতু্য হয়। আর গত ১২ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৭৬৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশ থেকে ৫৩ হাজার ৩১৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর যাচাই শেষে সরকারি ও বেসরকারি ৬৩৯টি ল্যাবে ৫০ হাজার ৯৫২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫ লাখ ৬ হাজার ২৩৩টি। এদিকে গত একদিনে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও ১১ হাজার ৫২ জন। ফলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১০ লাখ ৯ হাজার ৯৭৫ জনে।

২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত ২৪৭ জনের মধ্যে পুরুষ ১৪১ ও নারী ১০৬ জন। তাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১৬৫ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৫৫ জন, বাড়িতে ২৬ জন এবং হাসপাতালে আনার পথে ১ জন মারা যান। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের মোট হার ১৫ দশমিক শূন্য ৭২ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ৬০ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃতদের মধ্যে বয়সের হিসাবে দশোর্ধ্ব ২ জন, বিশোর্ধ্ব ৩ জন, ত্রিশোর্ধ্ব ১৬ জন, চলিস্নশোর্ধ্ব ৩০ জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ৫৯ জন, ষাটোর্ধ্ব ৭৩ জন, সত্তরোর্ধ্ব ৪৫ জন, ৮০ বছরের বেশি বয়সি ১৭ জন,

নব্বইয়ের বেশি বয়সি ২ জন রয়েছেন। বিভাগওয়ারি হিসাবে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে ৭২ জন, চট্টগ্রামে ৬১ জন, রাজশাহীতে ২১ জন, খুলনায় ৪৬ জন, বরিশালে ১২ জন, সিলেটে ১৪ জন, রংপুরে ১৬ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ জন।

সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় বর্তমানে বিশ্বের যেসব দেশে একদিনে সবচেয়ে বেশি রোগী মারা যাচ্ছে, সেই তালিকায় ১১তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। রোগী শনাক্তের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে করোনা রোগী শনাক্ত ও এতে মৃতের সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে এই তালিকা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। কয়েক মাসের মধ্যে এই ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ কমবেশি হলেও প্রায় দুই মাস ধরে দেশে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। করোনার ডেল্টা ধরনের দাপটে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃতু্য কয়েক গুণ বেড়েছে।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ দেশে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ পালন করা হয়। এ সময় সব ধরনের অফিসের পাশাপাশি গণপরিবহণ চলাচলও বন্ধ রাখা হয়। ২১ জুলাই ঈদুল আজহা উপলক্ষে এই বিধিনিষেধ ৮ দিনের জন্য শিথিল থাকার পর গত শুক্রবার থেকে আবার দুই সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়েছে।

ঈদের ছুটিতে লাখ লাখ মানুষের শহর থেকে গ্রামে যাওয়া এবং তাদের ফিরে আসায় সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি কমিটি ঈদ ঘিরে বিধিনিষেধ শিথিলের সরকারি সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে