আশা জাগিয়ে রোমান সানার বিদায়

প্রকাশ | ২৮ জুলাই ২০২১, ০০:০০ | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২১, ০০:০৭

ম ক্রীড়া প্রতিবেদক

টোকিও অলিম্পিকে আর্চার রোমান সানাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল বাংলাদেশ। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার শুরুটাও ছিল দুর্দান্ত। অলিম্পিকে পদকহীন বাংলাদেশের আশার আলো এই রোমান সানা। আশা জাগিয়েই শেষ পর্যন্ত বিদায় নিয়েছেন দেশসেরা আর্চার। স্বপ্ন বুনে রাখলেন ভবিষ্যতের জন্য। মঙ্গলবার আর্চারির একক ইভেন্টের শেষ ১৬-তে ওঠার লড়াইয়ে মাত্র ১ পয়েন্টর জন্য বিদায় নিলেন। প্রথম রাউন্ডে গ্রেট ব্রিটেনের প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে দুর্দান্ত জয় তুলে নিয়েছেন, দ্বিতীয় রাউন্ডে কানাডিয়ান আর্চারের বিপক্ষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে হেরেছেন। তবে রোমান যা করেছেন সেটা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাস। অলিম্পিকে বাংলাদেশের কোনো ক্রীড়াবিদ নকআউট পর্বে জিততে পারেননি। রোমান সেটি করে দেখিয়েছেন। টোকিও অলিম্পিকের আর্চারির একক ইভেন্টে এলিমিনেশন রাউন্ডের প্রথম ম্যাচে গ্রেট ব্রিটেনের টম হলকে সহজেই ৭-৩ সেট পয়েন্টে হারিয়ে শীর্ষ ৩২-এ উঠে গিয়েছিলেন দেশসেরা আর্চার রোমান সানা। তবে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিলেন দেশসেরা এ আর্চার। এর আগে মিশ্র ইভেন্ট থেকে বিদায় নেয় রোমান-দিয়া জুটি। প্রথম সেটে ৩ শটে রোমান মেরেছেন যথাক্রমে ১০, ১০, ৮ (২৮ পয়েন্ট)। অন্যদিকে টম হল প্রথম সেটের ৩ শটে সমপরিমাণ স্কোর করলে দুজনই ১ করে পান। দ্বিতীয় সেটে অবশ্য বাজিমাত করেছেন রোমান। এবার ২৭-২৬ পয়েন্টে জিতে পূর্ণ ২ স্কোর করেন তিনি। আর তৃতীয় সেটেও জিতেছেন ২৭-২৬ পয়েন্টে। কিন্তু চতুর্থ সেটে গিয়ে যেন একটু খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। তবে চতুর্থ সেট জিতে প্রতিযোগিতায় ফিরে আসার আভাস দেন গ্রেট ব্রিটেনের টম হল। ওই সেট রোমান হেরে যান ২৭-২৫ ব্যবধানে। পঞ্চম সেট থেকে এক পয়েন্ট পেলেই চলতো রোমানের। কিন্তু লাল-সবুজ জার্সিধারী রোমান পূর্ণ ২ পয়েন্ট নিয়েই ৭-৩ সেট পয়েন্টে জিতে উঠে যান পরের রাউন্ডে। শেষ সেটে জয়ের ব্যবধান ২৯-২৭। দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রথম সেট জিতে ভালো শুরুর পর শেষ পর্যন্ত কানাডার ক্রিসপিন ডুয়েনাসের কাছে ৪-৬ সেট পয়েন্টে হেরে গেছেন রোমান। আর তাতেই পদক জয়ের স্বপ্ন নিভে যায় বাংলাদেশের। কানাডিয়ান আর্চার ডুয়েনাস ক্রিসপিনের বিপক্ষে রোমানের লড়াইটা হয়েছে আরও হাড্ডাহাড্ডি। এক সেট রোমান, তো আরেক সেট কানাডিয়ান। প্রথম চার সেটে দুইজন দুটি করে জেতায় শেষ সেটটি হয় ফাইনাল। সেই শেষ সেটের প্রথম দুই তিরে দুইজনই করেন ১৭। কানাডিয়ান আর্চার তৃতীয় পর্যায়ে ৯ মারেন। রোমান ১০ মারলে জিততেন; ৯ মারলে টাইব্রেকার হতো। রোমান মারলেন আট। এক পয়েন্টের আক্ষেপ বাংলাদেশের। অথচ যেভাবে রোমান শুরুটা করেছিলেন ক্রিসপিনের বিপক্ষে, তাতে মনে হচ্ছিল আরেকটা রাউন্ড উতরে যাওয়া বুঝি সময়েরই ব্যাপার মাত্র! প্রথম সেটে ৯, ৯ আর ৮ তুলে রোমান স্কোর করেছিলেন ২৬, জবাবে তার প্রতিপক্ষ তুলেছিলেন ২৫। তাতে প্রথম সেটটা জিতে নেন রোমান। চলতি অলিম্পিকে প্রথমবারের মতো প্রথম সেটেই জয়ের স্বাদ পান তিনি। আগের সেটে শুরুর তিরে ৯ তুলে নিয়েও জয় তুলে নেওয়া গিয়েছিল। দ্বিতীয় সেটেও শুরুটা হলো সেই ৯ দিয়েই। কিন্তু পরের দুই সেট থেকে সানা তুলতে পারলেন মোটে ১৬। মোট স্কোর দাঁড়াল তাতে ২৫। ক্রিসপিন জবাবে তিন তির থেকে যথাক্রমে ৯, ৯, আর ১০ নিয়ে তোলেন ২৮। দ্বিতীয় সেটটা এর ফলে ঝুলিতে ভরেন কানাডিয়ান এই প্রতিযোগী। খেলায় ফেরে ২-২ সেট পয়েন্টে সমতা। পরের সেটেও ঘটল সেই একই দৃশ্যের পুনর্মঞ্চায়ন। তিন তিরে তিনটি ৯ তুলে রোমান স্কোর করলেন ২৭। ১০, ৯, আর ১০ তুলে এর জবাব দেন ক্রিসপিন। তৃতীয় সেটটাও যায় রোমানের বিপক্ষেই। ৪-২ সেট পয়েন্টে পিছিয়ে পড়েন তিনি। লড়াইয়ে রোমাঞ্চ হাজির হলো চতুর্থ সেটে এসে। ৮, ১০, আর ৯ নিয়ে রোমান তার গড়পড়তা পারফরম্যান্সটাই ধরে রেখেছিলেন। পা হড়কায় ক্রিসপিনের। তিন তির থেকে তুলতে পারলেন মাত্র ২৬, তাতে এক পয়েন্টের ব্যবধানে জিতে চার সেট শেষে ৪-৪ সমতায় চলে আসেন রোমান। পঞ্চম সেটের শুরুতে আবারও পা হড়কায় ক্রিসপিনের। রোমানের ৯-এর বিপরীতে ক্রিসপিন তুলতে পারেন মোটে ৭ স্কোর। পরের তিরে রোমান তুলতে পারলেন ৮, এখানে দশ তুলে আবারও খেলায় ফেরেন রোমানের প্রতিপক্ষ। শেষ তিরেও তিনি তুললেন ৯, তাতে জিততে হলে রোমানের প্রয়োজন ছিল আরও একটা ১০। কিন্তু সেই তিরেই দেশসেরা এই আর্চার হড়কালেন পা, ৮ তুলে হারলেন এক পয়েন্টে। তাতে ৬-৪ সেট পয়েন্টে হারও নিশ্চিত হয় তার। অলিম্পিক থেকেও তার বিদায়ঘণ্টা বেজে যায় তাতে। রোমান হেরে গেছেন ঠিকই তবে তাকে নিয়ে গর্ব করতেই পারে বাংলাদেশ। গর্বের মাত্রাটা রোমান আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন খেলা শেষে তার লক্ষ্য নির্ধারণের জানান দিয়ে। এবারের অলিম্পিক থেকে বিদায় নিয়ে হতাশ হলেও জানিয়েছেন জয়ের সুযোগ ছিল তার সামনে, 'এই ম্যাচটায় জিততে না পেরে আমি হতাশ কিন্তু অনেক সুযোগ ছিল জেতার।' এবারের অলিম্পিক থেকে বিদায় নিলেও লক্ষ্য ঠিক করে ফেলেছেন দেশের সেরা এই তিরন্দাজ। জানিয়েছেন ২০২৪ নয়, লক্ষ্য ২০২৮ সালের অলিম্পিকে সোনা জয়, 'আমার লক্ষ্য ২০২৮ সালের অলিম্পিকে সোনা জয়। তবে আমি ২০২৪ অলিম্পিকেও খেলব। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।'