বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

একদিনে আরও ২৩৯ মৃতু্য, শনাক্ত ১৫২৭১

যাযাদি রিপোর্ট
  ৩০ জুলাই ২০২১, ০০:০০

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫ হাজার ২৭১ জনের দেহে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ নিয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১২ লাখ ২৬ হাজার ২৫৩ জনে দাঁড়াল। একই সময়ে ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে আরও ২৩৯ জনের মৃতু্য হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ২৫৫ জনে পৌঁছাল।

প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত করোনাভাইরাস বিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, সর্বশেষ ২৮ জুলাই বুধবার একদিনে বাংলাদেশ শনাক্ত ও মৃতু্যর দুঃখজনক মাইলফলকে পৌঁছায়। সেদিন সারা দেশে ৫৬ হাজার ১৫৭টি নমুনা পরীক্ষা করে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত এবং ২৩৭ মৃতু্যর কথা জনিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্তের সংখ্যা সামান্য কমে ১৫ হাজার ২৭১ জন হলেও মৃতু্য বেড়ে ২৩৯ জন হয়েছে।

এর আগে গত ১২ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৭৬৮ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ার পর ২৬ জুলাই অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ১৫ হাজার ১৯২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। মঙ্গলবার এই সংখ্যা সামান্য কমে ১৪ হাজার ৯২৫ জনে দাঁড়ায়। কিন্তু ২৮ জুলাই বুধবার পেছনের সব রেকর্ড ভেঙে ১৬ হাজার ২৩০ জন হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশ থেকে ৫৫ হাজার ৯৮২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর যাছাই শেষে সরকারি ও বেসরকারি ৬৩৯টি ল্যাবে ৫২ হাজার ২৮২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ লাখ ৬৪ হাজার ৮৭০টি। তবে গত একদিনে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও ১৪ হাজার ৩৩৬ জন। ফলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১০ লাখ ৫০ হাজার ২২০ জনে।

২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত ২৩৯ জনের মধ্যে পুরুষ ১২৩ ও নারী ১১৬ জন। তাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১৮১ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৪৩ জন, বাড়িতে ১৫ জন মারা যান। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ২১ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের মোট হার ১৬ দশমিক শূন্য ০০ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত মৃতু্যহার ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত ২৩৯ জনের মধ্যে বয়সের হিসাবে শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সি একজন, ১১ থেকে বিশ বছর বয়সি ৩ জন, বিশোর্ধ্ব ১৪ জন, ত্রিশোর্ধ্ব ১৫ জন, চলিস্নশোর্ধ্ব ২৬ জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ৫৭ জন, ষাটোর্ধ্ব ৬৫ জন, সত্তরোর্ধ্ব ৪৩ জন, আশির বেশি ১৪ জন এবং নব্বই বছরের বেশি বয়সি একজন রয়েছেন। বিভাগওয়ারি হিসাবে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে ৭৬ জন, চট্টগ্রামে ৫৭ জন, রাজশাহীতে ১৩ জন, খুলনায় ৪৫ জন, বরিশালে ১৪ জন, সিলেটে ১৪ জন, রংপুরে ১১ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৯ জন রয়েছেন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। কয়েক মাসের মধ্যে এই ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ কম-বেশি হলেও প্রায় দুই মাস ধরে দেশে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। করোনার ডেল্টা ধরনের দাপটে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃতু্য কয়েক গুণ বেড়েছে।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ দেশে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ পালন করা হয়। এ সময় সব ধরনের অফিসের পাশাপাশি গণপরিবহণ চলাচলও বন্ধ রাখা হয়। ২১ জুলাই ঈদুল আজহা উপলক্ষে এই বিধিনিষেধ ৮ দিনের জন্য শিথিল থাকার পর গত শুক্রবার থেকে আবার দুই সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়েছে।

ঈদের ছুটিতে লাখ লাখ মানুষের শহর থেকে গ্রামে যাওয়া এবং তাদের ফিরে আসায় সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি কমিটি ঈদ ঘিরে বিধিনিষেধ শিথিলের সরকারি সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছিল।

এদিকে ইউএন নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিস্নউএইচও) সর্বশেষ (বুধবার পর্যন্ত) তথ্যানুসারে, ডেল্টা ধরনের কারণে বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ বাড়ার পাশাপাশি মৃতু্যর সংখ্যাও ব্যাপক বেড়েছে। বিশ্বে গত সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহে মৃতু্য বেড়েছে ২১ শতাংশ। এই সপ্তাহে মারা গেছেন ৬৯ হাজারের বেশি। এভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ২০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।

আঞ্চলিকভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংক্রমণ নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে। যদিও আগের সাত দিনের চেয়ে এ সপ্তাহে সংক্রমণের হার ৩ শতাংশের মতো কম ছিল। তবে শঙ্কার কথা হচ্ছে, ইউরোপ ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে নতুন মৃতু্যর সংখ্যা বাড়ছে।

ডবিস্নউএইচও বলেছে, সাতদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চসংখ্যক নতুন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এই সময়ে শনাক্ত হওয়া নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখের বেশি, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৩১ শতাংশ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের পর নতুন রোগী বেড়েছে ব্রাজিলে, ৩ লাখ ২৪ হাজার ৩৩৪ জন। এই এক সপ্তাহে এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় ২ লাখ ৮৯ হাজার ২৯, ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্যে ২ লাখ ৮২ হাজার ৯২০ ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৮৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

বর্তমানে করোনাভাইরাসের চারটি মিউটেশন (রূপান্তর) বিশ্বজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এই ধরনগুলো ব্যাপক উদ্বেগজনক বলে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘের এই সংস্থা। তারা বলেছে, এ পর্যন্ত আলফা ধরন ১৮২টি দেশে, বেটা ১৩১টি দেশে, গামা ৮১টি দেশে এবং ১৩২টি দেশে ডেল্টা ধরন শনাক্ত হয়েছে। গত সপ্তাহে আরও আটটি নতুন দেশে ডেল্টা সংক্রমণ শনাক্ত হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে