অষ্টম দিন বৃষ্টিতে ঢাকা প্রায় ফাঁকা

বিধিনিষেধের মধ্যেই কাল থেকে শিল্পকারখানা চলবে

প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২১, ০০:০০ | আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২১, ০৯:৩৩

যাযাদি রিপোর্ট

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধের (লকডাউন) মধ্যেই রপ্তানিমুখী সব শিল্পকারখানা খুলে দিয়েছে সরকার। ফলে চলমান লকডাউনের মধ্যেই কাল রোববার থেকে রপ্তানিমুখী সব শিল্পকারখানা চালু হবে। তবে বিধিনিষেধের ২৩ দফা নির্দেশনার বাকি ২২ দফা বহাল থাকবে। শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রপ্তানিমুখী কারখানা রোববার সকাল ৬টা থেকে বিধিনিষেধের আওতা বহির্ভূত রাখা হলো। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় গত ১ জুলাই থেকে \হকঠোর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। তবে ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার। পরে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বিধিনিষেধে সব ধরনের গণপরিবহণ, সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ আছে। খাদ্যপণ্য উৎপাদন-প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া পরিবহণ-সংরক্ষণ ও ওষুধ খাত ছাড়া বন্ধ রয়েছে সব ধরনের শিল্পকারখানা। নতুন সিদ্ধান্তে রোববার থেকে রপ্তানিমুখী সব শিল্পকারখানা চালু থাকবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে এতদিন শিল্পকারখানা বন্ধ রাখার বিষয়ে অনড় ছিল সরকার। তবে তৈরি পোশাক শিল্পসহ সব ধরনের রপ্তানিমুখী কারখানা খুলে দিতে সরকারের উচ্চ মহলে বারবার অনুরোধ করছিলেন শিল্পমালিকরা। বৃহস্পতিবার বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ, ঢাকা চেম্বার ও এফবিসিসিআইয়ের নেতারা সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবারও অনুরোধ জানান। যুক্তি হিসেবে তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজার হারানোর শঙ্কা, সাপস্নাই চেইন ভেঙে পড়া, বন্দরে জট, সার্বিক অর্থনীতিসহ সবকিছু বিবেচনা নিয়েই তারা এ অনুরোধ জানাতে বাধ্য হয়েছেন। কারখানা চালু হলে শ্রমিক পাবেন কোথায় জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, যেসব শ্রমিক কারখানার আশপাশে আছে তাদের দিয়েই কারখানা চালু করা হবে। তবে সরকারকে আমরা আগেই বলেছিলাম, এভাবে বন্ধ করে দিলে শ্রমিকরা গ্রামে চলে যাবে। বাস্তবতা তাই হয়েছে। কারখানা বন্ধ রাখা আর শ্রমিক চলে যাওয়াতে শিল্পমালিকদের যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। তারপরও মন্দের ভালো। নয়তো আরও ক্ষতি হতো। এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধের অষ্টম দিন ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। সঙ্গে যোগ হয়েছে বৈরী আবহাওয়া আর থেমে থেমে বৃষ্টি। রাজধানীতে আগের দিনের মতই বিভিন্ন মোড়ে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেকপোস্ট। পুলিশ ওর্ যাবের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর জিপ টহল দিচ্ছে। বৃষ্টির কারণে যদিও আগের দিনগুলোর তুলনায় তৎপরতা কিছুটা কম দেখা গেছে। তারপরও রাজধানী ঢাকার রাস্তায় যানবাহন আর মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলক অনেক কম ছিল। কোনো কোনো রাস্তা ছিল প্রায় ফাঁকা। তারপরও অপ্রয়োজনে বের হওয়াদের জেল-জরিমানার মুখমুখি হতে হয়েছে। কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে শুক্রবার রাজধানীতে সেনাবাহিনী-বিজিবির টহল আর চেকপোস্টে পুলিশর্-যাবের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ, আটক ও জরিমানার কারণে সকাল থেকেই রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি খুবই কম চোখে পড়েছে। মানুষ ঘর থেকে কম বের হওয়ায় রিকশার উপস্থিতিও ছিল কম। ব্যক্তিগত গাড়ি ছিল খুবই সীমিত। তবে অ্যাম্বুলেন্স যাতায়াত ছিল চোখে পড়ার মতো। মাঝেমধ্যে ছুটে গিয়েছে পণ্যবাহী গাড়ি। পুলিশ বলছে, শুক্রবার যারা ঘর থেকে বের হয়েছেন তাদের প্রায় সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখমুখি হতে হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা কেউ বলেছেন বিমানবন্দরে যাচ্ছেন, কেউ কেউ বলেছেন নিজে অসুস্থ অথবা পরিবারের কোনো সদস্য হাসপাতালে ভর্তি। যাদের উত্তর সন্তোষজনক হয়েছে তাদের গন্তব্যে যেতে দেওয়া হয়েছে। যারা অযথাই বের হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। লকডাউনের মধ্যেও রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তার মধ্যে শুরু হয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ফলে হাসপাতালগুলোর কাছে মানুষজনের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে বেশি। রিকশার ভিড়ও সেখানে বেশি। ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইফতেখারুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঈদের পর নতুন করে শুরু হওয়া বিধিনিষেধের অষ্টম দিনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে রাস্তায় বের হওয়ার অভিযোগে ৩৪১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ভ্রাম্যমাণ আদালত ১০৮ জনকে জরিমানা করেছে ৬৭ হাজার ৯৪০ টাকা। আর সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় ৩২১টি গাড়িকে ৮ লাখ ১৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ট্রাফিক বিভাগ। উলেস্নখ্য, বিধিনিষেধের সপ্তম দিনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে রাস্তায় বের হওয়ার অভিযোগে ৫৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ভ্রাম্যমাণ আদালত ২০৬ জনকে জরিমানা করেছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ১০০ টাকা। আর সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় ৪৩১টি গাড়িকে ৯ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে ট্রাফিক বিভাগ।