আজকের যায়যায়দিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার জন্য জিয়াউর রহমানকে আবার অভিযুক্ত করে বলেন, ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা ছিল সেটা একদিন বের হবে। তিনি বলেন, হত্যার বিচার হয়েছে। তবে এ ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা ছিল, একদিন সেটাও আবিষ্কার হবে। আমাদের কাজ ছিল- প্রত্যক্ষভাবে যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার করা। আর সবচেয়ে বড় কাজ এই দেশ এবং দেশের মানুষ নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেটা সফল করা, দেশের মানুষের উন্নয়ন করা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন করাটাকেই আমি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। তাই, পেছনে কে ষড়যন্ত্র করেছে, কী করেছে সেদিকে না গিয়ে আমার প্রথম কাজ হচ্ছে- এই ক্ষুধার্ত দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের জীবনমান উন্নত করা। রোববার শোকের মাসের প্রথমদিনে আসন্ন শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্ত ও পস্নাজমা দান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।

গণভবন থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের জাতির পিতা স্মৃতি জাদুঘর সংলগ্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তও সংযুক্ত ছিল। জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের 'রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশালস্নাহ' উদ্ধৃতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, রক্ত জাতির পিতাও দিয়ে

গেছেন। কারণ যখন এদেশের মানুষকে তিনি মুক্ত করেছেন তখন যারা স্বাধীনতাবিরোধী বা যারা বিজয় চায়নি তারা তাকে হত্যা করেছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আত্মস্বীকৃত খুনি ফারুক-রশিদের স্বেচ্ছায় বিবিসি'কে দেওয়া ইন্টারভিউ অনুযায়ী সাবেক সেনা শাসক জিয়াউর রহমানকে নেপথ্য শক্তি হিসেবে উলেস্নখের তথ্য এবং পরে ধারাবাহিকভাবে খুনিদের পুরস্কৃত করায় জিয়া, এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উলেস্নখ করেন।

ইউনিসেফের সতর্কতা / গরমের 'উচ্চ ঝুঁকিতে' শিশুরা

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে। তিনি রক্তদান কর্মসূচির সাফল্য কামনা করে বলেন, এই রক্তদানের মাধ্যমে আমরা একজন মুমূর্ষু রোগীকেও যদি বাঁচাতে পারি সেটাই হবে সবচেয়ে বড় কথা। কেননা মানবকল্যাণে আপনি দান করছেন। তিনি বলেন, বাবা-মা, ভাই সব হারিয়েছি; কিন্তু একটা আদর্শকে নিয়েই পথ চলি। যে কথাগুলো ছোটবেলা থেকে বাবার মুখে শুনেছি, সেই স্বপ্নটাকে আমার বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারে।

অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা জানিয়ে সাবেক কৃষিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপস্নব বড়ুয়া, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলি বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানের আয়োজক কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি বক্তৃতা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বেগম মতিয়া চৌধুরী দুস্থ কৃষকদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, করোনার ভয়াল থাবা সত্ত্বেও মানুষের খাদ্যের এবং তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা সরকার করে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেন কোনো দিন আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সে জন্যই জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ধাপে ধাপে সমগ্র জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেন; কিন্তু পাকিস্তানি শাসক চক্র, এদেশের কিছু দালাল চক্র এবং তাদের তোষামোদকারী, পদলেহনকারী কিছু গোষ্ঠী বাঙালির এ অভু্যদয় বা এই বিজয়কে কখনো মেনে নিতে পারেনি। তবে আমার এটাই অবাক লাগে যে, এর সঙ্গে (জাতির পিতা হত্যাকান্ড) আমাদের যারা, তারা কীভাবে জড়িত থাকল। প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, নিজের দলের ভেতরে খন্দকার মুশতাক যেমন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, আবার অনেকেই তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। আর এ ঘটনা ঘটাতে সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্য তাদের ব্যবহার করেছিল। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ে যদি তাদের পক্ষে কেউ না থাকত তবে এটা কখনো সম্ভব ছিল না।

সরকারপ্রধান বলেন, উচ্চ পর্যায়ে তাদের সঙ্গে কে ছিল সেটা তো ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত কর্নেল ফারুক ও রশীদ বিবিসি'কে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছিল সেই সাক্ষাৎকারেই বলেছিল, উপ-সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল, সম্পর্ক ছিল এবং সফল হতে পারলে সে তাদের পাশে থাকবে এ কথাও দিয়েছিল এবং সব রকম সহযোগিতাও করেছিল। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের যেই আদর্শ সেই আদর্শ থেকে সম্পূর্ণ বিচু্যত হয়ে যায়। যদিও বাঙালি জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না- এটা ৭ মার্চের ভাষণেই জাতির পিতা বলে গেছেন। আর জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের কারণে দেশের নাগরিক হিসেবে পিতৃহত্যার বিচার চাওয়ার কোনো পথ ছিল না। উপরন্তু খুনিদের পুরস্কার হিসেবে জিয়াউর রহমান তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়। খুনিদের পুরস্কার হিসেবে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি, ব্যবসার সুযোগ ও বিপুল অর্থের মালিক করে দেয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়ার পথ ধরে আমরা দেখেছি জেনারেল এরশাদ এ খুনিদের রাজনীতি করার, প্রেসিডেন্টপ্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেয়, এমনকি ভোট চুরি করে পার্লামেন্টেরও মেম্বার করে। তা থেকে একধাপ ওপরে গিয়ে খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রম্নয়ারি ভোট চুরি করে খুনি রশিদকে পার্লামেন্টে বিরোধী দলের নেতার চেয়ারে বসায় এবং আরেক খুনিকে পার্লামেন্টে মেম্বার করে তাদের পুরস্কৃত করে।