শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম অলিম্পিক সোনা ভাগ করলেন দু'জন

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ০৩ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
আপডেট  : ০৩ আগস্ট ২০২১, ০০:০৮

নির্ধারিত সময়ে জয়-পরাজয় নিশ্চিত না হলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। বিশ্বের বেশির ভাগ খেলাতেই তো নিয়মটা এমন। হাইজাম্পেও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু কাতারের মুতাজ ঈসা বারসিম আর ইতালির জিয়ানমার্কো তামবেরি ব্যতিক্রম এক নজিরই স্থাপন করলেন। টাইব্রেকারের প্রস্তাব নাকচ করে সোনা নিলেন ভাগাভাগি করে। তাতেই দু'জনের বন্ধুত্বটা ঠাঁই করে নিল ইতিহাসের পাতায়। সঙ্গে সঙ্গে দুই অ্যাথলেট হাততালি দিয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে মেতে ওঠেন। আর তার সঙ্গে তৈরি হলো নতুন কীর্তি। ১৯১২ অলিম্পিকের ১১৩ বছর পর আবার অ্যাথলেটিকসে স্বর্ণপদক ভাগাভাগি দেখল বিশ্ব। মুতাজ, জিয়ানমার্কো তো বটেই, বেলারুশের ম্যাক্সিম নেদাসেকাউও ২.৩৭ মিটার পর্যন্ত লাফিয়েছিলেন সমান সমানই। তিনজনই আবার বিশ্বরেকর্ড ২.৩৯ মিটারে লাফাতে গিয়ে গেলেন আটকে। তবে শেষতক শীর্ষে থাকলেন দুজন, ম্যাক্সিম ছিটকে গেলেন আগের লড়াইয়ের মাপকাঠিতে। ফলে জিয়ানমার্কো আর মুতাজের কাছে নিয়ে আসা হলো টাইব্রেকার 'জাম্প অফ'-এর প্রস্তাব। সেখানেই ঘটল ঘটনাটা। মুতাজ জিজ্ঞেস করলেন, 'দুটো সোনার ব্যবস্থা করলে কেমন হয়?' অফিসিয়ালের উত্তর, সেটা সম্ভব। মুতাজ মাথা ওপর নিচ করলেন। জিয়ানমার্কো শুধু সায়ই দিলেন না, মুতাজের হাতে হাত মেলালেন, তাকে গিয়ে জড়িয়েই ধরলেন, দুবার গড়াগড়ি খেলেন, চিৎকারও করলেন। স্বাভাবিকভাবেই রৌপ্য পদক দেওয়া হয়নি কাউকেই। ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় বেলারুশের নেদাসেকুকে। প্রতিক্রিয়ায় বললেন, 'আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না কী হয়েছে এটা। বিশেষ করে সোনাটা যখন একজন বন্ধুর সঙ্গে ভাগাভাগি করছি, তখন বিষয়টার মাহাত্ম্য বেড়ে যায় আরও।' প্রতিদ্বন্দ্বীর মতো অতটা আবেগ ঘিরে ধরেনি মুতাজকে। কিন্তু অলিম্পিক পদকের মাহাত্ম্যটা বোঝেন কাতারি এই অ্যাথলেট। বললেন, 'আমার কাছে এখানে আসাটা, এখানের পারফরম্যান্সটার পর মনে হয়েছে আমি এই সোনা জেতার যোগ্য। সেও এমন কিছুই করেছে, আর তাই আমিও জানি, সে কম যোগ্য নয়।' এমন ঘটনা ঢুকে গেছে অলিম্পিক ইতিহাসেরই সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী ঘটনার ছোট্ট তালিকাটায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বাহবা পাচ্ছে বেশ। মুতাজ আর জিয়ানমার্কোর দুজনের বন্ধুত্বটা অবশ্য টোকিওতে হয়নি। হয়েছে আরও আগে। আগের অলিম্পিকের জোগাড়যন্ত্র যখন শেষ করে ফেলেছেন, এরপরই গোড়ালি ভেঙে 'গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ' থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন জিয়ানমার্কো। পরের ডায়মন্ড লিগে যখন ফিরলেন, তখনো ধুঁকছিলেন, ভাবছিলেন সরে যাওয়ার কথাও। তখন এই মুতাজের অনুপ্রেরণাই তো সাহস জুগিয়েছিল তার মনে। দেখিয়েছিল অলিম্পিকের আশা। ভাঙা পায়ে লাগানো সেই পস্নাস্টারের গায়ে লিখে রেখেছিলেন টোকিও অলিম্পিকের কথা। মুতাজ নিজেও তো কম ভোগেননি, নিজে চোটে পড়েছেন রিও অলিম্পিকের পর থেকে। এরপর কোনোক্রমে এসেছেন টোকিওতে। সেই মুতাজ আর সেই জিয়ানমার্কো, দু'জনের আক্ষেপই শেষ হলো এবার, বন্ধুর সঙ্গে বিরল কীর্তি গড়ে। দু'জনের গল্পটা কি এর চেয়ে মধুর হতে পারত আদৌ?

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে