অস্ট্রেলিয়ার দম্ভ চূর্ণ করে বাংলাদেশের স্মরণীয় জয়

প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

আমিনুল ইসলাম লিটন
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে উইকেট পাওয়ায় নাসুম আহমেদকে ঘিরে উচ্ছ্বাস করছেন মুস্তাফিজ-সাকিব-সৌম্য-সোহানরা -বিসিবি
প্রথমবারের মতো বাঘের ডেরায় এসে ধরা খেয়েছে ক্যাঙ্গারুরা। ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণ টি২০তে প্রথমবারের মতো সফরকারী অস্ট্রেলিয়াকে ২৩ রানে হারিয়ে দুর্দান্ত শুরু করল বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল টাইগাররা। বাংলাদেশে খেলার ব্যাপারে বরাবরই অনাগ্রহ দেখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। টি২০ শুরুর প্রায় দেড় দশক পর প্রথমবার এই দেশে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে এসেছে অজিরা। দুই দলের লড়াইয়ে এর আগে প্রতিবারই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল ক্যাঙ্গারুরা; কিন্তু এবার সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সব দম্ভ চূর্ণ করে স্মরণীয় এক জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা। আজ দ্বিতীয় ম্যাচে লড়বে দুই দল। বাংলাদেশে সফরে এসে অনেক শর্ত দিয়েছে সফরকারীরা। তার সবই মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার শর্ত মানতে গিয়ে বাংলাদেশ অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস মাঠে নামাতে পারেনি। ইনজুরিতে তামিম ইকবাল মাঠের বাইরে। তরুণ কয়েকজন খেলোয়াড় নিয়ে লড়াইয়ে নামে বাংলাদেশ। দলে সিনিয়র খেলোয়াড় বলতে মাহমুদউলস্নাহ ও সাকিব আল হাসান। সেখানে সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন বোলার নাসুম আহমেদ। চারটি উইকেট প্রতিপক্ষ শিবিরে আতঙ্ক তৈরি করেছেন নাসুম। বোলিং কৃতিত্বের জন্য ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি। তরুণ পেসার শরিফুল ইসলাম নিয়েছেন দুই উইকেট। মঙ্গলবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে অজিদের বোলিং তোপে খুব বেশি রান করতে পারেনি টাইগাররা। মন্থর ব্যাটিংয়ে যে চাপ ভর করল, সেটা তাড়ানো গেল না ইনিংসের শেষ পর্যন্ত। শেষমেশ বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়েছে সাত উইকেট হারিয়ে ১৩১ রানে। জবাবে অস্ট্রেলিয়া ১০৮ রানেই অলআউট হয়ে গেছে। এই ম্যাচে বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে ডট বল। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৪৭টি ডট বল করে অজিরা। যার মধ্যে ২৩টি পাওয়ার পেস্ন'র ৬ ওভারে। সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার হয়ে রান তাড়া করতে নামেন অ্যালেক্স ক্যারি ও জশ ফিলিপ। ইনিংসের প্রথম বলেই ক্যারিকে বোল্ড করে ডায়মন্ড ডাকের স্বাদ দেন মাহেদী হাসান। পরের ওভারে ৯ রান করা ফিলিপকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন নাসুম আহমেদ। বিপাকে পড়া অস্ট্রেলিয়াকে আরও চেপে ধরেন সাকিব আল হাসান। নিজের করা প্রথম বলেই ময়জেস হেনরিক্সকে বোল্ড করেন তিনি। এরপর দলের হাল ধরেন মিচেল মার্শ ও ম্যাথু ওয়েড। ধীরস্থিরভাবে খেলে ৩৮ রানের জুটি গড়েন দু'জন। যখন অজিরা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অপেক্ষায় ঠিক তখনই আঘাট হানেন নাসুম। অবশ্য উইকেট পাওয়ার ক্ষেত্রে তার কৃতিত্বের চেয়ে ওয়েডের ব্যর্থতাই বেশি। ওয়াইড লাইনেরও অনেক বাইরের বল তাড়া করে খেলেন ওয়েড। শর্ট ফাইন লেগে দুর্দান্ত ক্যাচের মাধ্যমে তাকে হতাশ করেন মুস্তাফিজুর রহমান। এর আগে অজি অধিনায়ক করেন ২৩ বলে ১৩ রান। ওয়েডের বিদায়ের পর আর কেউই উইকেটে টিকে থাকতে পারেননি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে হিট উইকেট হন অ্যাস্টন অ্যাগার। অ্যাস্টন টার্নার ফেরেন ৮ রানে। একপ্রান্ত ধরে খেলে টাইগার শিবিরে অস্বস্তি বাড়িয়ে যাচ্ছিলেন মিচেল মার্শ। শরিফুল ইসলামের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে ৪৫ বলে ৪৫ রান করেন এই ব্যাটসম্যান। তাকে আউট করে নিজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েন নাসুম আহমেদ। ম্যাচে চার উইকেট শিকার করেন এই বাঁ-হাতি বোলার। অ্যান্ড্রু টাই ও অ্যাডাম জাম্পাকে রানের খাতাই খুলতে দেননি শরিফুল। মিচেল স্টার্ককে বোল্ড করার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়াকে গুটিয়ে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। অজিদের ইতিহাসে এটাই তাদের সর্বনিম্ন স্কোর। নাসুমের চার উইকেটের পাশাপাশি দুটি করে উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম। এছাড়া সাকিব ও মাহেদী একটি করে উইকেট ভাগাভাগি করে নেন। এর আগে টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড। বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন মোহাম্মদ নাইম ও সৌম্য সরকার। মিচেল স্টার্কেল করা প্রথম ওভারে একটি ছক্কা হাঁকালেও বাকি বলগুলো ঠিকভাবে ব্যাটেই লাগাতে পারেননি নাইম। অন্যপ্রান্তে হ্যাজেলউডের বলে বেশ ভুগছিলেন সৌম্য। তবে প্রথম তিন ওভারে দলকে কোনো উইকেট হারাতে দেননি তারা। কিন্তু চতুর্থ ওভারে এসেই ছন্দপতন। জশ হ্যাজেলউডের করা ডেলিভারি পেছনে কাট খেলতে গিয়ে বোল্ড হন সৌম্য। এর আগে করেন ২ রান। এরপর অ্যাডাম জাম্পার বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ৩০ রানে বোল্ড হন নাইম শেখ। রানের দিক থেকে ইনিংস বড় হলেও তার অ্যাপ্রোচ ছিল জঘন্য। ৩০ রানের মাঝে ২০ রানই চার-ছয় থেকে করেছেন তিনি। বাকি ১০ রান করতে খেলেছেন ২৫ বল, যা টি২০-এর যুগে বড্ড বেমানান। এমনকি তার আউট হওয়ার ধরনও ছিল দৃষ্টিকটু। নাইমের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন সাকিব ও মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ। তবে রান তুলতে গিয়ে রিয়াদ অনেক বেশি ধীর খেলতে থাকেন। পরে বল আর রানের ব্যবধান কমাতে গিয়ে হ্যাজলউডের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি। টাইগার অধিনায়ক ২০ বলে ২০ রান করেন। এরপর থেকে নিয়মিত বিরতিতে আসা যাওয়া করতে থাকেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেন সাকিব। এছাড়া নুরুল হাসান সোহান ৩, শামীম পাটোয়ারী ৪ রানে আউট হন। শেষদিকে আফিফ হোসেনের ২৩ রানের ক্যামিওতে মধ্যম মানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একাই তিন উইকেট নেন জশ হ্যাজেলউড। এছাড়া মিচেল স্টার্ক দুটি এবং অ্যান্ড্রু টাই ও অ্যাডাম জাম্পা একটি করে উইকেট নেন।