বিধিনিষেধ শিথিল হবে ১১ আগস্ট থেকে

টিকা ছাড়া রাস্তায় বের হলেই শাস্তি অল্পসংখ্যক গণপরিবহণ ও দোকান খুলবে ১১ আগস্ট

প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দেশে চলমান কঠোরতম বিধিনিষেধ ১১ আগস্ট থেকে শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে এই বিধিনিষেধ আরও পাঁচ দিন বাড়িয়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপর অফিস-আদালতসহ সব কিছুই ১১ আগস্ট থেকে খুলবে। তবে সীমিত পরিসরে। এই সময়ের মধ্যে নিজ নিজ ওয়ার্ড থেকে সবাইকে টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সীমিত পরিসরে সব কিছু খুললেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধই থাকবে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, এখন ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিধিনিষেধ রয়েছে। মঙ্গলবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এই সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ভার্চুয়ালি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা যুক্ত ছিলেন। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১১ আগস্ট থেকে গণপরিবহণ, দোকানপাট, শপিং মল, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরে খুলবে। অর্থাৎ, ১০ আগস্টের পর বিধিনিষেধ অনেকটাই শিথিল হয়ে যাবে। সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, আগামী এক সপ্তাহ ব্যাপকভিত্তিক টিকা দান কার্যক্রম পরিচালনার পর ১১ আগস্ট থেকে দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস খুলবে। সীমিত পরিসরে 'রোটেশন করে' যানবাহন চলবে। তবে টিকা না নিয়ে কেউ কাজে যোগ দিতে পারবেন না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আগামী এক সপ্তাহে এক কোটি মানুষকে টিকা দেবে। প্রত্যেক ওয়ার্ডে নূ্যনতম দুটি করে কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। ফলে আশা করা হচ্ছে কাউকে টিকা নেওয়ার পেছনে দৌড়াতে হবে না। তিনি বলেন, প্রায় ১৪ হাজার কেন্দ্রে এক সঙ্গে সপ্তাহব্যাপী টিকা দেওয়া হবে। সেখানে বয়স্কদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। শ্রমজীবী মানুষ, দোকানদার, বাসের হেলপারদেরও টিকা দেওয়া হবে। টিকা না দিয়ে কেউ কোনো কর্মস্থলে আসতে পারবেন না। যার যার এলাকা থেকে টিকা নিতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সাত দিনে ১ কোটি মানুষের টিকার ব্যবস্থা করেছে। সুতরাং টিকা ছাড়া ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে কেউ রাস্তায় বের হলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। দরকার হলে অধ্যাদেশ জারি করেও শাস্তি দেওয়া হতে পারে। মন্ত্রী বলেন, কেউ টিকা নিয়েছে কি না, সেই তথ্য ওয়েবসাইটে চলে যাবে, কেউ মিথ্যা বলতে পারবে না। দোকানপাট খোলার আগে ৭, ৮, ৯ আগস্ট তিন দিন সুযোগ রাখা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যাতে টিকা নিতে পারে সেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ১১ আগস্ট থেকে যাতে দোকানপাট খুলতে পারে এবং যানবাহন চলতে পারে। তবে সব চলবে না। রোটেশন অনুযায়ী সীমিত আকারে গাড়ি চলবে। রেল ১০টার জায়গায় হয়তো পাঁচটা চলবে। সভায় সেইভাবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের দায়িত্ব অর্থনীতি সচল রাখাও। সেজন্য কিছু শিল্পকারখানা খোলা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সরকারের হাতে এখন প্রায় সোয়া কোটি টিকা আছে। এ ছাড়া এই মাসে আরও প্রায় এক কোটি টিকা আসবে। আর চীনের সঙ্গে মিলে স্থানীয়ভাবেও টিকা উৎপাদনের কাজ এগিয়ে চলছে। দেশেই করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনের বিষয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, করোনাভাইরাস কতদিন চলবে কেউ জানে না। যত শিগগির সম্ভব নিজেরা বা অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে যাতে টিকা তৈরি করা যায় তা ভাবা হচ্ছে। উৎপাদন সম্ভব হলে সবাইকে টিকা দেওয়া হবে। এজন্য চেষ্টা করা হচ্ছে- যাতে ৪ বা ৫ মাসের মধ্যে দেশে টিকা উৎপাদন করা যায়। আইসিইউ সংকট বিষয়ে বলেন, গুরুতর করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতালে আইসিইউ সংকট কাটাতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের কনভেনশন সেন্টারে আগামী শনিবার থেকে ডেডিকেডেট আইসিইউ চালু হবে। করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে বিধিনিষেধ চলছে, যা ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। এবার সরকার থেকে 'কঠোরতম' বিধিনিষেধের কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সেটা আর রাখতে পারেনি। গত শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে জানানো হয়, ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী সব শিল্প ও কলকারখানা চলমান বিধিনিষেধের আওতা বহির্ভূত করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের পর শ্রমিকরা গ্রামের বাড়ি থেকে দুর্ভোগ নিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন কলকারখানার অভিমুখে রওনা হন। একপর্যায়ে গত রোববার দুপুর পর্যন্ত গণপরিবহণ চালুর অনুমোদন দেয় সরকার। লঞ্চের সময় অবশ্য সোমবার ভোর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। এর আগে গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। সেই বিধিনিষেধের মেয়াদ আগামী ৫ আগস্ট রাত ১২টায় শেষ হওয়ার কথা ছিল। মঙ্গলবার আবার নতুন করে ১০ আগস্ট পর্যন্ত বিধিনিষেধ বাড়ানো হলো।