২৪ ঘণ্টায় করোনায় ২৩৫ মৃতু্য, শনাক্ত ১৫৭৭৬ জন

প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৩৫ জনের মৃতু্য হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২১ হাজার ৩৯৭ জনে। একই সময়ে দেশে আরও ১৫ হাজার ৭৭৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩ জন রোগী শনাক্ত হলো। মঙ্গলবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত করোনাভাইরাস বিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তির তথ্যমতে আগের দিন সোমবার সারাদেশে ১৫ হাজার ৯৮৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়, মৃতু্য হয় ২৪৬ জনের। সেই হিসেবে শনাক্ত রোগী ও মৃতু্যর সংখ্যা একদিনে সামান্য কমেছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয় ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশ থেকে ৫৭ হাজার ২৯৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর যাছাই শেষে সরকারি ও বেসরকারি ৬৯৭টি ল্যাবে ৫৭ হাজার ২৯৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮ লাখ ৯৯ হাজার ১৬৯টি। আর গত একদিনে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১৬ হাজার ২৯৭ জন। ফলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা শেষে এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ১১ লাখ ২৫ হাজার ৪৫ জন হলো। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষ ১৪০ এবং নারী ৯৫ জন। এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মোট মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষ ১৪ হাজার ৪১৯ জন এবং নারী ৬ হাজার ৯৭৮ জন। সর্বশেষ গতকাল সরকারি হাসপাতালে ১৭৩ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৪৬ জন, বাড়িতে ১৫ জন এবং একজন হাসপাতালে আনার পথে মারা যান। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের মোট হার ১৬ দশমিক শূন্য ৪১ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। এ পর্যন্ত মৃতু্য হার ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। তথ্য পর্যালোচনা করে আরও দেখা যায় গত একদিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৮১৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন শনাক্ত হয়েছিল ৫ হাজার ২৮৮ জন রোগী। এছাড়া ঢাকা বিভাগের ফরিদপুরে ১৮৪ জন, গোপলগঞ্জে ১০৪ জন, কিশোরগঞ্জে ১৮৩ জন, মানিকগঞ্জে ১৯৯ জন, মুন্সীগঞ্জে ১৩৫ জন, নরসিংদীতে ১২৩ জন, নারায়ণগঞ্জে ২৬৪ জন, রাজবাড়ীতে ১৩৪ জন, শরীয়তপুরে ২৬৪ জন এবং টাঙ্গাইল জেলায় ১৭৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ১ হাজার ২৭৩ জন, কক্সবাজারে ২৩৩ জন, ফেনীতে ১৫৬ জন, নোয়াখালীতে ২৯৩ জন, লক্ষ্ণীপুরে ১৩৭ জন, চাঁদপুরে ৩৬৭ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৭৮ জন এবং কুমিলস্নায় ৯২৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২২৬ জন, পাবনায় ১৪৪ জন এবং সিরাজগঞ্জে ১৭৯ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে গত একদিনে। একইভাবে খুলনা বিভাগের মধ্যে যশোরে ১৬৬ জন, খুলনায় ১৩২ জন ও কুষ্টিয়ায় ২৩৩ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। অন্য বিভাগগুলোর বিভিন্ন জেলার মধ্যে ময়মনসিংহে ৪৪৮ জন, দিনাজপুরে ১১৫ জন, বরিশালে ২৪৫ জন, পটুয়াখালীতে ১৭৯ জন, ভোলায় ১৬৫ জন, সিলেটে ৪০৬ জন এবং হবিগঞ্জে ১৫৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। অন্যদিকে ঢাকা বিভাগে গত একদিনে যে ৭৩ জনের মৃতু্য হয়েছে, তাদের ৩৯ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৬৫ জনের মধ্যে ২১ জন কুমিলস্না, ১১ জন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ও ১১ জন চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দা ছিলেন। এছাড়া খুলনা বিভাগে ৩২ জন, রাজশাহী বিভাগে ২১ জন, রংপুর বিভাগে ১২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১২ জন, সিলেট বিভাগে ১২ জন ও বরিশাল বিভাগে ৮ জনের মৃতু্য হয়েছে গত একদিনে। মৃত ২৩৫ জনের মধ্যে ১৩৬ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৫৪ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২৫ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১৫ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৪ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। কয়েক মাসের মধ্যে এই ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ কম বেশি হলেও দুই মাসের বেশি সময় ধরে দেশে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। করোনার ডেল্টা ধরনের দাপটে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃতু্য কয়েক গুণ বেড়েছে। গত জুলাই মাসে দেশে করোনায় মৃতু্য হয়েছে ৬ হাজার ১৮২ জনের। প্রায় দেড় বছর ধরে চলা এই মহামারিতে এর আগে কোনো মাসে এত মৃতু্য দেখেনি বাংলাদেশ। এর আগে বেশি মৃতু্য হয়েছিল গত এপ্রিলে ২ হাজার ৪০৪ জনের। এদিকে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে গত মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ দেশে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ পালন করা হয়। এ সময় সব ধরনের অফিসের পাশাপাশি গণপরিবহণ চলাচলও বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু ২১ জুলাই ঈদুল আজহা উপলক্ষে এই বিধিনিষেধ আট দিনের জন্য শিথিল করা হয়। ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে আবার দুই সপ্তাহের লকডাউন চলছে। গতকাল লকডাউন আরও পাঁচ দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।